বনানীতে আবাসিক এলাকায় কে ব্লকের ২৭ নম্বর সড়কের ৪৯ নম্বর বাড়িতে নিয়ম ভেঙে হোটেলটি চালানোর সঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এক সংসদ সদস্যের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।
রাজউক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ওই প্লটটি ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর-কাঁঠালিয়া) আসনের সংসদ সদস্য বজলুল হক হারুনের (বি এইচ হারুন)।
ধর্ম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হারুন ঝালকাঠি জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এবং রাজাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি।
চার তারা রেইনট্রি হোটেলটি তার ছোট ছেলে মাহির হারুন চালান। গত ২৮ মার্চ ধর্ষণের আগে হোটেলটিতে আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে সাফাত আহমেদের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে মাহির কেক পাঠিয়েছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
মাহিরের বন্ধু পরিচয় দিয়েই সাফাত সেদিন হোটেলে উঠেছিলেন বলে হোটেলকর্মীরা পুলিশকে জানিয়েছেন। ধর্ষণের প্রধান আসামি সাফাত গ্রেপ্তার হয়ে এখন পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি।
দি রেইনট্রি হোটেল ঢাকা গত ৯ এপ্রিল আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়েছে বলে তাদের ফেইসবুক পাতায় তথ্য দেওয়া হলেও তার কয়েক মাস আগে থেকে তার কার্যক্রম চলছিল।
রাজউকের মানচিত্রে বনানীর কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ এবং ১১ নম্বর সড়ক দুটি বাণিজ্যিক এলাকা। ওই দুটি সড়কে বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে হলেও রাজউকের সম্পত্তি বিভাগে নির্ধারিত রূপান্তর ফি জমা দিতে হয়।
এই দুটি সড়ক ছাড়া বনানীর বাকি সব সড়কগুলো আবাসিক শ্রেণির। এসব এলাকায় বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা অবৈধ। রেইনট্রি হোটেল পড়েছে ওই এলাকায়।
অবৈধভাবে বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা করায় গত ১৫ এপ্রিল রেইনট্রি হোটেল সিলগালা করে দিয়েছিল রাজউকের ভ্রাম্যমাণ আদালত। সেদিন প্রতিষ্ঠানটির গ্যাস, পানি ও বিদ্যুৎ সংযোগও বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছিল।
সেদিনের অভিযান পরিচালনাকারী রাজউকের পরিচালক ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট খন্দকার অলিউর রহমান সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, হোটেলটি রাজউকের অনুমোদন ছাড়া ব্যবসা চালাচ্ছিল।
“রেসিডেন্সিয়াল এরিয়ায় যদি কেউ বাণিজ্যিক কার্যক্রম করে, সেটা অবৈধ। তারা সেখানে বাণিজ্যিক কার্যক্রম করার অনুমোদন নেয় নাই, অনুমতিও নেয় নাই। সেজন্য আমরা সব সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে এসেছিলাম।”
ভ্রাম্যমাণ আদালত সিলগালা করে আসার পর রেইনট্রি হোটেল কর্তৃপক্ষ নিজেরাই তা খুলে আবার কার্যক্রম শুরু করে বলে জানান রাজউকের অঞ্চল-৪ এর অথরাইজড অফিসার আদিলুজ্জামান।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ওই হোটেলটা অবৈধ, তারা আমাদের অনুমোদন ছাড়া হোটেলের কাজ করছিল। আমরা সিলগালা করে দিয়ে এসেছিলাম, তারা নিজেরা খুলে ফেলেছে।”
সিলগালা করার বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে গিয়ে রাজউকের পদক্ষেপে স্থগিতাদেশ পাওয়ার কথা রেইনট্রি কর্মকর্তারা জানান।
বিষয়টি নিয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে রেইনট্রি হোটেলের জনসংযোগ কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি আপনার মেসেজটা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে দেব।”
মালিক পক্ষের টেলিফোন নম্বর চাইলে ‘নিষেধ আছে’ জানিয়ে তা দিতে অস্বীকৃতি জানান তিনি।
প্রথমবার কথা বলার পর রেইনট্রি হোটেলের পক্ষ থেকে আর যোগাযোগ করা হয়নি। ইকবালের মোবাইলে ফোনে কল করলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ঝালকাঠি প্রতিনিধি একাধিকবার স্থানীয় সংসদ সদস্য বি এইচ হারুনের মোবাইলে একাধিকবার কল করলেও তিনি ফোন ধরেননি।
রাজউকের আইন শাখার পরিচালক রোকন উদ দৌলা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, উচ্চ আদালত সিলগালা খোলার নির্দেশ দিলেও তা বাস্তবায়ন করবে রাজউক, ভবন কর্তৃপক্ষ নয়।
এই বিষয়ে রাজউকের চেয়ারম্যান এম বজলুল করিম চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
“এটা আমরা এর আগেও এটা বন্ধ করে দিয়েছিলাম। আমি অথরাইজড অফিসারের সঙ্গে কথা বলে দেখি। এরপর পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ধর্ষণের আলোচিত ঘটনার পর রেইনট্রি হোটেলে শুল্ক গোয়েন্দারা অভিযান চালিয়ে অবৈধ মদ উদ্ধারসহ নানা অনিয়ম পাওয়ার কথা জানায়। ভ্যাট ফাঁকি, শুল্ক ফাঁকি ও মুদ্রা পাচার- এই তিন অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতিও নেওয়া হচ্ছে।