দুর্নীতির আরেক মামলায় বিচারক বদলে হাই কোর্টে খালেদা

খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির এক মামলায় হাই কোর্ট আদালত বদলানোর আদেশ দেওয়ার পর অপর মামলাতেও বিচারক পরিবর্তনের আবেদন করেছেন তিনি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 May 2017, 10:36 AM
Updated : 15 May 2017, 12:57 PM

বিএনপি চেয়ারপারসনের পক্ষে সোমবার তার আইনজীবী জাকির হোসেন ভূঁইয়া জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা আবু আহমেদ জমাদারের বিশেষ আদালত থেকে সরানোর আবেদন হাই কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় জমা দেন।

পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “ন্যায়বিচার না পাওয়ার আশংকা থেকে এর আগে একই আদালত থেকে বেগম খালেদা জিয়ার অরফানেজ ট্রাস্ট মামলাটি স্থানান্তরের নির্দেশ দিয়েছিল হাই কোর্ট।

“একই আদালতে এই মামলাটির ন্যায়চার পাওয়া নিয়েও আমাদের সংশয় রয়েছে। এ কারণেই আমরা আবেদনটি করেছি।”

আবেদনটি বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে শুনানির জন্য উপস্থাপন করা হবে বলেও জানান জাকির হোসেন ভূঁইয়া।

আগের দিন জিয়া এতিমখানা ট্রাস্টের ২ কোটি ১০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের মামলায় ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ কামরুল হোসেন মোল্লার আদালত থেকে স্থানান্তরের নির্দেশ দেয় হাই কোর্ট।

তবে মামলাটি এখন কোন আদালতে যাবে সে বিষয়ে কিছু জানাতে পারেননি দুই পক্ষের আইনজীবীরা।

এই মামলাও আগে আবু আহমেদ জমাদারের আদালেতেই ছিল, খালেদার আবেদনের ভিত্তিতেই তা বদলে কামরুল হোসেনের আদালতে দিয়েছিল হাই কোর্ট।

বকশীবাজারে বিশেষ আদালত ভবনে চলমান দুটি মামলায় ১৩ এপ্রিল আত্মপক্ষ সমর্থনের শুনানির দিন দুই বিচারকের প্রতি অনাস্থার আবেদন প্রত্যাখ্যান করায় হাই কোর্টে যান খালেদা জিয়া।

এর মধ্যে জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিচারক আবু আহমদ জমাদারের আদালতে ১৮ মে খালেদা জিয়ার আত্মপক্ষ সমর্থনের দিন ঠিক রয়েছে।

জিয়া দাতব্য ট্রাস্টের নামে আসা তিন কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০১০ সালের ৮ অগাস্ট তেজগাঁও থানায় এই মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

খালেদা জিয়া ছাড়া অভিযুক্ত অপর আসামিরা হলেন- বিগত চারদলীয় জোট সরকার আমলে খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছের তৎকালীন একান্ত সচিব ও বিআইডব্লিউটিএ-এর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।

তদন্ত কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি খালেদা জিয়াসহ চার জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন। পরের বছরের ১৯ মার্চ অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে আসামিদের বিচার শুরু হয়।

এ মামলায় মোট ৩২ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে। আসামিদের মধ্যে জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও মনিরুল ইসলাম আত্মপক্ষ সমর্থন করে আদালতে লিখিত বক্তব্য জমা দিয়েছেন। হারিছ চৌধুরী মামলার শুরু থেকেই পলাতক।

আর প্রধান আসামি খালেদা জিয়া গত ১ ডিসেম্বর আত্মপক্ষ সমর্থনে নিজের বক্তব্য উপস্থাপন শুরু করেন। ট্রাস্টের তিন কোটি ১৫ লাখ টাকা আত্মসাতের এ মামলায় নিজেকে নির্দোষ দাবি করে আদালতের কাছে সুবিচার চান তিনি।

কিন্তু এরপর তার আইনজীবীরা দফায় দফায় সময় নেওয়ায় তার আত্মপক্ষ সমর্থনের বাকি বক্তব্য এখনও আদালতের শোনা হয়নি।

জিয়া এতিমখানা: আত্মপক্ষ সমর্থনের শুনানি ২৩ মে

এদিকে সোমবার জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার আত্মপক্ষ সমর্থনের শুনানি আবারও পিছিয়েছে।

ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ কামরুল হোসেন মোল্লা ‘অসুস্থজনিত কারণে অনুপস্থিত’ দেখিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের পক্ষে করা সময়ের আবেদন মঞ্জুর করে ২৩ মে শুনানির দিন ঠিক করেন।

ফাইল ছবি

এই মামলায় এর মধ্যেই উচ্চ আদালতের আদেশে বিচারক পরিবর্তন হয়েছে বলে জানান তার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া।

এতিমদের জন্য বিদেশ থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট মামলা দায়ের করে দুদক। ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় মামলাটি দায়ের করা হয়। তদন্ত শেষে দুদক ২০০৯ সালের ৫ অগাস্ট আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে।

তার পাঁচ বছর পর ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ বাসুদেব রায় অভিযোগ গঠন করে খালেদাসহ ছয় আসামির বিচার শুরুর নির্দেশ দেন।

আসামিদের মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া, মাগুরার সাবেক সাংসদ কাজী সালিমুল হক কামাল ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ জামিনে আছেন। খালেদার বড় ছেলে তারেক রহমান আছেন দেশের বাইরে।

এছাড়া সাবেক মুখ্য সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান মামলার শুরু থেকেই পলাতক।