দুই রিভিউ খারিজ, রাজাকার সাঈদীর বাকি জীবন জেলে

যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডের যে রায় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ দিয়েছিল, পুনর্বিবেচনায় তাতে কোনো পরিবর্তন আসেনি।

মেহেদী হাসান পিয়াসবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 May 2017, 05:15 AM
Updated : 15 May 2017, 03:39 PM

আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনার আবেদনে খালাস চেয়েছিলেন একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী দল জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সাঈদী। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের রায় পুনর্বহাল চেয়েছিল।

রবি ও সোমবার শুনানি করে প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারকের বেঞ্চ দুটি রিভিউ আবেদনই খারিজ করে দিয়েছে।

এর ফলে ৭৭ বছর বয়সী সাঈদীর যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়ার পরিসমাপ্তি ঘটল এবং তার আমৃত্যু কারাদণ্ডের রায়ই বহাল থাকল।  

বিএনপি ও চারদলীয় জোট সরকারের সময়ে দুই মেয়াদে পিরোজপুর থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত এই জামায়াত নেতা বর্তমানে আছেন গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে। ২০১০ সালের ২৯ জুন থেকে তিনি কারাবন্দি।

রিভিউ রায়ের পর তার ছেলে মাসুদ-বিন- সাঈদী তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “ন্যায়বিচার পেলাম না, ন্যায় বিচার হল না। ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছি, একদিনের সাজাও প্রাপ্য ছিলো না।”

আর এই জামায়াত নেতার প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, “ যেহেতু সর্বোচ্চ আদালতের রায়, তাই ক্ষোভ-দুঃখ যাই থাকুক না কেন, রায় মেনে নিতে হবে।”

অন্যদিকে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম তার প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে সাঈদীকে দেশ, সভ্যতা ও মানুষের জন্য ‘ক্ষতিকর’ ব্যক্তি হিসেবে বর্ণনা করেন।

তিনি বলেন, “আন্তর্জাতিক অপারধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন এবং তদন্ত সংস্থার ব্যর্থতা ও দুর্বলতার কারণে সাঈদীকে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা যায়নি। সাঈদী যুদ্ধাপরাধীদের শিরোমনি, তার সর্বোচ্চ শাস্তি না হওয়ায় আমি ব্যক্তিগতভাবে ব্যথিত।”

যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ সাজার দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসা গণজাগরণ মঞ্চও এই রিভিউ রায়ে হতাশা প্রকাশ করেছে।

মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার এক বিবৃতি বলেন, “জনগণের দাবির প্রতি সরকারের বারবার বিশ্বাসঘাতকতা কোনো শুভ ফল বয়ে আনবে না। আপসকামিতা পরিহার করে যুদ্ধাপরাধের বিচারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া এবং দ্রুত যুদ্ধাপরাধী সংগঠন জামায়াত- শিবির নিষিদ্ধেরও দাবি জানাচ্ছি।”

ফাঁসি থেকে আমৃত্যু সাজা

যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রথম অভিযুক্ত ব্যক্তি হিসাবে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সাঈদীর বিচার শুরু হয়েছিল ২০১১ সালের ৩ অক্টোবর।

মানবতাবিরোধী অপরাধের কারণে একাত্তরে জামায়াত নেতা সাঈদীকে পিরোজপুরের মানুষ চিনত ‘দেইল্লা রাজাকার’ নামে। সে সময় রাজাকার বাহিনীর সদস্য হিসেবে পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে যেসব মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় তিনি অংশ নিয়েছিলেন, তা উঠে এসেছে এ মামলার বিচারে।

বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীর নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, নির্যাতন ও ধর্মান্তরে বাধ্য করার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি সাঈদীর মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয়।

ওই রায়ের পর দেশজুড়ে সহিংসতা চালায় জামায়াত ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মীরা। ওই তাণ্ডবে প্রথম তিন দিনেই নিহত হন অন্তত ৭০ জন। এছাড়া বহু গাড়ি-দোকানপাট ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, হিন্দুদের মন্দির-ঘরবাড়ি ভাংচুর করা হয়।

এরপর সাঈদী আপিল করলে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর তৎকালীন প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে পাঁচ বিচারকের আপিল বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে রায় দেয়। তাতে সাজা কমে আমৃত্যু কারাদণ্ডের আদেশ আসে।

একাত্তরের ‘দেইল্যা রাজাকারের’ সাজা কমানোর রায়ে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল ও গণজাগরণ মঞ্চসহ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে সোচ্চার বিভিন্ন সংগঠন বিক্ষোভে ফেটে পড়ে।

শাহবাগে সে সময় শ্লোগান ওঠে - ‘আঁতাতের এই রায় মানি না, প্রহসনের এই রায় মানি না’।

আপিল বিভাগের রায়ে ‘ধর্মীয় নেতা’র লেবাসধারী সাঈদীর মুখোশ উন্মোচিত হলেও সাজায় প্রত্যাশিত হয়নি জানিয়ে রাষ্ট্রপক্ষ রিভিউ চাওয়ার কথা জানিয়েছিল সে সময়।

আপিলের রায়ের ১৫ মাস পর ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর সর্বোচ্চ আদালত এর পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করলে বিষয়টি রিভিউয়ের পর্যায়ে আসে।

এরপর গতবছর ১২ জানুয়ারি সাঈদীর আমৃত্যু কারাদণ্ডের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। এর পাঁচদিনের মাথায় খালাস চেয়ে রিভিউ আবেদন করেন সাঈদী।

রোববার দুই রিভিউ আবেদন আদালতে উঠলে প্রধান বিচারপতি নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে প্রথম দিন এক ঘণ্টা শুনানি শুরু হয়। এরপর সোমবার সকাল সোয়া ৯টায় আবারও আদালত বসে এবং শুনানি শেষে ১১টা ৫ মিনিটে রায় দেয় আদালত।

রায় পুনর্বিবেচনার দুটি আবেদনই খারিজ হয়ে যাওয়ায় যুদ্ধাপরাধী সাঈদীর আমৃত্যু কারাদণ্ডের সাজাই বহাল থাকে।

আপিল বিভাগের এই বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেন- বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসাইন হায়দার।

সাঈদীর পক্ষে শুনানি করেন খন্দকার মাহবুব হোসেন। তার সঙ্গে ছিলেন এসএম শাহজাহান ও তানভীর আল আমিন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

তিন অপরাধে আমৃত্যু দণ্ড

আপিলের রায়ে ১০, ১৬ ও ১৯ নম্বর অভিযোগে হত্যা, নিপীড়ন, অপহরণ, নির্যাতন, ধর্ষণ ও ধর্মান্তরে বাধ্য করায় সাঈদীকে ‘যাবজ্জীবন’ কারাদণ্ড দেয়া হয়। যাবজ্জীবন বলতে ‘স্বাভাবিক মৃত্যুর সময় পর্যন্ত’ কারাবাস বোঝাবে বলে ব্যাখ্যা দেয় আদালত।

এছাড়া ৮ নম্বর অভিযোগের একাংশের জন্য সাঈদীকে ১২ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ৭ নম্বর অভিযোগে ১০ বছর কারাদণ্ডের আদেশ দেয় আপিল বিভাগ।

এর মধ্যে ৮ ও ১০ নম্বর অভিযোগে ইব্রাহিম কুট্টি ও বিসাবালীকে হত্যা এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি ঘরে আগুন দেওয়ার ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সাঈদীর ফাঁসির রায় দিয়েছিল। তবে চূড়ান্ত বিচারে তা টেকেনি।

অভিযোগ-১০:  ১৯৭১ সালের ২ জুন সকাল ১০টার দিকে সাঈদীর নেতৃত্বে তার সশস্ত্র সহযোগীরা ইন্দুরকানি থানার উমেদপুর গ্রামের হিন্দুপাড়ার হানা দিয়ে ২৫টি ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। যার মধ্যে রয়েছে চিত্তরঞ্জন তালুকদার, হরেণ ঠাকুর, অনিল মণ্ডল, বিসাবালি, সুকাবালি, সতিশবালার ঘর। সাঈদীর ইন্ধনে তার সহযোগীরা বিসাবালীকে নারকেল গাছের সঙ্গে বেঁধে গুলি করে হত্যা করে।

অভিযোগ-১৬:  স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে সাঈদীর নেতৃত্বে ১০-১২ জন সশস্ত্র রাজাকার পারেরহাট বন্দরের গৌরাঙ্গ সাহার বাড়ি থেকে তার তিন বোনকে অপহরণ করে পাকিস্তানি সেনাদের হাতে তুলে দেয়। সেখানে তাদের আটকে রেখে তিন দিন ধরে ধর্ষণ করে পরে ছেড়ে দেয়া হয়।

অভিযোগ-১৯: স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে সাঈদী জোর করে মধুসুদন ঘরামী, কৃষ্ট সাহা, ডা. গণেশ সাহা, অজিত কুমার শীল, বিপদ সাহা, নারায়ণ সাহা, গৌরাঙ্গ পাল, সুনীল পাল, নারায়ণ পাল, অমূল্য হাওলাদার, শান্তি রায়, হরি রায় জুরান, ফকির দাস, টোনা দাস, গৌরাঙ্গ সাহা, হরিদাস, গৌরাঙ্গ সাহার মা ও তিন বোন মহামায়া, অন্যরাণী ও কামাল রাণীসহ ১০০/১৫০ জন হিন্দুকে ধর্মান্তরিত করেন।

তদন্তে গাফিলতি

আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায়ে তদন্ত কর্মকর্তার গাফিলতি তুলে ধরে বলা হয়, “আমরা বেশ কয়েকটি অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তার গাফিলতি লক্ষ্য করেছি। তদন্ত কর্মকর্তা ইব্রাহিম কুট্টি হত্যার অভিযোগের বিষয়ে মমতাজ বেগমের করা এজাহার সংগ্রহে কার্যকর চেষ্টা চালাননি। একইভাবে প্রসিকিউটরও কোনো পদক্ষেপ নেননি। মমতাজ বেগমের করা ওই এজাহার সত্য না মিথ্যা- প্রসিকিউটর তার তদন্ত করেনি।… প্রসিকিউশন দল শহীদের রক্ত নিয়ে জুয়া খেলতে পারে না।”

ওই রায়ে বলা হয়, সরকার জনমতের দিকে তাকিয়ে এই বিচারের ঝুঁকি নিয়েছে। কর্মকর্তসহ এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যারা সংশ্লিষ্ট, তাদের ঝুঁকির জন্য সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে। প্রসিকিউটরদের দায়িত্ব ছিল যথাযথ আইনি সাক্ষ্য সংগ্রহ করা, এতে তারা ব্যর্থ হয়েছেন।

তদন্ত সংস্থা মামলার গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীদের নিরাপত্তা দিতেও ব্যর্থ হয়েছে বলে ওই রায়ে পর্যবেক্ষণ দেয় সর্বোচ্চ আদালত।

দেইল্লা রাজাকার

১৯৪০ সালে পিরোজপুরের ইন্দুরকানী গ্রামে জন্ম নেওয়া দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী লেখাপড়া করেছেন মাদ্রাসায়। একাত্তরের ভূমিকার কারণে নিজের এলাকায় তার নাম হয় ‘দেইল্লা রাজাকার’।

আশির দশকের শুরুর দিকে সারা দেশে ওয়াজ-মাহফিল করে সুবক্তা হিসেবে পরিচিতি পান সাঈদী। ওই সময় জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতিতেও তার উত্তরণ ঘটতে থাকে।

১৯৯৬ সালের নির্বাচনে প্রথমবারের মতো সাংসদ নির্বাচিত হন সাঈদী। এরপর ২০০১ সালের আবারও পিরোজপুর থেকে তিনি ভোটে জয়ী হন। ওই বছর জামায়াতের সঙ্গে জোট বেঁধে সরকারেও যায় সাঈদীর দল জামায়াত।

বিএনপি-জামায়াত জোট বাংলাদেশের ক্ষমতায় আসার পর সারা দেশে হিন্দু সম্প্রদায় ও বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর ব্যাপক নির্যাতন চালানো হয়। পরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে নির্যাতনকারী হিসেবে ২৬ হাজার ৩৫২ জনকে চিহ্নিত করে, যে তালিকায় সাঈদীর নামও আসে।

জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সমর্থকদের মধ্যে ‘মাওলানা সাঈদী’ সমাদৃত একজন ‘সুবক্তা’ হিসেবে, যদিও তার সেসব ওয়াজে নারী ও প্রগতি বিদ্বেষী বিভিন্ন বক্তব্য নিয়ে সমালোচনা রয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সাবেক শিক্ষার্থী তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার অংশ হিসেবে করা এক গবেষণায় দেখান, জামায়াত নেতা সাঈদী ওয়াজের একটি বড় অংশজুড়ে নারীদের নিয়ে বিভিন্ন চটকদার মন্তব্য থাকত, যার মূল উদ্দেশ্য ছিল পুরুষদের তার মতাদর্শে আকৃষ্ট করা।

ট্রাইব্যুনালে এ মামলার রায় ঘোষণার সময় বিচারপতি ফজলে কবীরের বর্ণনাতেও যুদ্ধাপরাধী সাঈদীর সেই রূপটি স্পষ্ট হয়।

বিচারপতি ফজলে কবীর বলেন, “এই মামলা যার বিরুদ্ধে তিনি বাংলাদেশে অত্যন্ত সুপরিচিতি। তার ওয়াজ শুনতে দূর দূরান্ত থেকে মানুষ ভিড় করে।

“দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী কেবল মাওলানা হিসোবেই সুপরিচিত নন, তিনি দুইবার সংসদ সদস্যও নির্বাচিত হয়েছেন।

“তার আরেকটি পরিচয় হলো, তিনি জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির।”  

এভাবে আসামির পরিচয় দেওয়ার পর ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বলেন, “আজ এখানে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে মামলার রায় হচ্ছে না। দুই বারের সংসদ সদস্য বা জামায়াতের নেতা সাঈদীরও রায় দিচ্ছে না ট্রাইব্যুনাল।

“আজ যার বিরুদ্ধে মামলার রায় দেয়া হচ্ছে, তাকে জানতে হলে আমাদের চল্লিশ বছর পেছনে তাকাতে হবে। তখন পিরোজপুরে সাঈদীকে মানুষ চিনত দেলু নামে।” 

“সেই সময়ের ৩০ বছরের যুবক সাঈদী ছিলেন রাজাকার বাহিনীর একজন সদস্য। উর্দু ভাল বলতে পারতেন বলে পাকিস্তানি সেনাদের সব অপারেশনেই তিনি তাদের সঙ্গে ছিলেন।”

যেসব অভিযোগে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিচার হয়েছে- তার মধ্যে যে হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট ও নির্যাতনের মতো অপরাধও ছিল- তা সেই মনে করিয়ে দেয় আদালত।

ছয় মামলার নিষ্পত্তি

২০১০ সালে যুদ্ধাপরাধের বহু প্রতীক্ষিত বিচার শুরুর পর এ নিয়ে যুদ্ধাপারের মোট ছয়টি মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হল বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতে। 

এই ছয় মামলার সাত আসামির মধ্যে ছয়জনের মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয় আপিল বিভাগ। রিভিউ আবেদন খারিজ হয়ে যাওয়ার পর তাদের সবার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।

এ পর্যন্ত কেবল সঈদীর মামলাতেই আপিলের রায়ে সাজা কমেছে এবং এ মামলাতেই আসামির পাশাপাশি রাষ্ট্রপক্ষও রিভিউ চেয়েছে। কোনো আবেদনই শেষ পর্যন্ত ধোপে টেকেনি।   

এছাড়া শুনানি চলার মধ্যেই মুক্তিযুদ্ধকালীন জামায়াত আমির গোলাম আযম ও বিএনপির সাবেক মন্ত্রী আবদুল আলীমের মৃত্যু হওয়ায় তাদের আপিলের নিষ্পত্তি হয়ে গেছে।

# ২০১২ সালের ১২ ডিসেম্বর ফাঁসিতে ঝোলানো হয় জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লাকে, নৃশংসতার জন্য আলবদর বাহিনীর এই সদস্যের কুখ্যাতি ছিল মিরপুরের কসাই নামে।

# ২০১৫ সালের ১১ এপ্রিল ফাঁসিতে ঝোলানো হয় জামায়াতের অপর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল যুদ্ধাপরাধী মুহাম্মদ কামারুজ্জামানকে; একাত্তরে তার নৃশংসতাকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালের নাৎসি বাহিনীর পাশবিকতার সঙ্গে তুলনা করে আদালত।

# ২০১৫ সালের ২১ নভেম্বর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় একই রাতে। এই মুজাহিদই একাত্তরে নিজামীর পর বদর বাহিনীর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। আর সাকা চৌধুরী চট্টগ্রামে কায়েম করেছিলেন ত্রাসের রাজত্ব।  

# ২০১৬ সালের ১১ মে ফাঁসিতে ঝোলানো হয় জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীকে যার পরিকল্পনা, নির্দেশনা ও নেতৃত্বে আলবদর বাহিনী বুদ্ধিজীবী হত্যার নীলনকশা বাস্তবায়ন করেছিল।

# ২০১৬ সালের ৩ সেপ্টেম্বর জামায়াতের মজলিসে শুরার সদস্য ও দলটির প্রধান অর্থ যোগানদাতা মীর কাসেম আলীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। মুক্তিযুদ্ধকালীন চট্টগ্রামে আল-বদর বাহিনীর নির্যাতন কেন্দ্র ডালিম হোটেলের হোতা কাসেমের রায়ে সর্বোচ্চ আদালত বলেছিল, অপরাধের মাত্রা বিবেচনায় তিনি দণ্ডের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের ছাড় পেতে পারেন না।