টাকার জোরে যেন পার না পায়: সাফাত গ্রেপ্তারে ফেইসবুক প্রতিক্রিয়া

বনানীতে দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী ‘ধর্ষণে’ সাফাত আহমেদ ও তার বন্ধু সাদমান সাকিফ গ্রেপ্তারে সন্তোষ প্রকাশ করে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে ফেইসবুকে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন অনেকে।

সোশ্যাল মিডিয়া ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 May 2017, 07:19 PM
Updated : 11 May 2017, 08:33 PM

বৃস্পতিবার রাতে সিলেট থেকে তাদের গ্রেপ্তারের খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ফেইসবুক পাতায় (যেখানে অনুসারী ৮০ লাখের বেশি) শেয়ার করার ঘণ্টাখানেকের মধ্যে সাড়ে তিন শতাধিকের বেশি মন্তব্য আসে।

মন্তব্যকারীদের অনেকেই সাফাত-সাদমানের পারিবারিক অবস্থার কারণে শেষ পর্যন্ত তাদের শাস্তি নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। কেউ কেউ দাবি করেছেন ‘ক্রসফায়ারের’।

অনেকে পুলিশকে ধন্যবাদ দিলেও শুরুতে মামলার তদন্তের দায়িত্বে থাকা বনানী থানার শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তার গ্রেপ্তার চেয়েছেন ‘ধর্ষকদের’ পালাতে সহায়তার অভিযোগ তুলে। 

সংবাদের নিচে মন্তব্যে আমজাদ হোসেন লিখেছেন, “আলহামদুল্লিাহ… আমি এদের বিচার চাই। বাপের টাকা আছে বলে যা ইচ্ছা তা করবে এটা হবে না।”

সুজন ধর নামে একজন লিখেছেন, “ওদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক যেন কেউ এ ধরনের কাজ করতে সাহস না পায়।”

রুবেল শাহ লিখেছেন, “এই জানোয়ারের দলের অন্য সদস্যদেরও গ্রেফতার করে দেশের প্রচলিত আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড প্রদান করে বাংলার জমিনে ধর্ষণকারী যত বড় বাবা কিংবা পুত্রই হন না কেন রেহাই নেই মর্মে ইতিহাস রচনা করা হোক।”

আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদের ছেলে সাফাত এবং পিকাসো রেস্তোরাঁর মালিক মোহাম্মদ হোসেন জনির ছেলে সাদমান সাকিফ।

তাদের বিচার নিয়ে সংশয় জানিয়ে জসিম উদ্দিন লিখেছেন, “গ্রেপ্তার করে কোনো লাভ নাই। এদের সঠিক বিচার এই বাংলার মাটিতে হবে না। এখানে শুধু চলে পয়সা- ফেইক তামাশা দেখ।”

তার মতো সংশয়ী মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের জন্য সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে সদিচ্ছা প্রত্যাশা করেছেন।

“এদের কিছুই হবে না, টাকার কাছে সব কিছু বৃথা যাবে। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর জিরো টলারেন্স দেখানো উচিত। এতেই দুই ধর্ষিতা বিচার পাবে। আমারা তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।”

আইনের মারপ্যাঁচে তারা যাতে বেরিয়ে আসতে না পারে সেই ব্যবস্থা চেয়েছেন মোহাম্ম ইলিয়াস।

বিকল্প শাস্তির দাবি জানিয়ে সেলিম খাঁন রনি লিখেছেন, “শালাদের ঢাকায় নিয়ে এসে জুতার মালা পরিয়ে, ঢাকঢোল পিটিয়ে সারা ঢাকা শহর ঘুরানো হোক। পরে সবার সামনে লাথি মেরে জনগণের কাছে ছেড়ে দেওয়া হোক নতুবা সবার সামনে গুলি করে মেরে ফেলা হোক।

“শালা নষ্ট বীজের নষ্ট সন্তানেরা, এদের মতো কুলাঙ্গার না থাকলে আমাদের বাংলাদেশ সোনার বাংলায় পরিণত হবে। আমি দোয়া করি, শালারা যেন খুব তাড়াতাড়ি ধ্বংস হয়।”

হারুনুর রশিদ লিখেছেন, “ঢাকায় আনার কোনো প্রয়োজন নেই। রাস্তায়-ই ক্রসফায়ার করা হোক। এ ধরনের একটা দৃষ্টান্ত আপাতত দেখান, আমার মনে হয় অপরাধ প্রবনতা অনেক কমে যাবে।”

“ক্রসফায়ার দিন- মন থেকে বলছি। জাতি অনেক খুশি হয়ে পুলিশকে দোয়া দেবে,” লিখেছেন এম নাসির।

তাদের সঙ্গে সুর মিলিয়ে সাইদুল আখতার লিখেছেন, “এদের শাস্তি একটাই-প্রকাশে এদের গুলি করে মেরে ফেলা। অন্তত কয়েকটা মানুষরূপী কুত্তার বাচ্চা পৃথিবী থেকে দূর হতো, স্যরি কুত্তার সাথে তুলনা করলাম-এতে কুত্তাও মাইন্ড করতে পারে।”

দুজনকে গ্রেপ্তারে পুলিশকে অভিনন্দন জানিয়ে সায়েদুল আক্তার লিখেছেন, “সাবাশ পুলিশ বাহিনী! আমি অনেকবার বলেছি, পুলিশ ঘুষ আর দুর্নীতি না করলে আমাদের সম্মানিত এমপি, মন্ত্রীরা অপরাধীকে ছায়া না দিলে এমন কেউ নাই একটা অপরাধও করতে পারে। অপরাধ করতে কম করে দশ বার চিন্তা করবে।”

বিপ্লব আলী লিখেছেন, “ বাংলাদেশের পুলিশ ইচ্ছে করলে অনেক কিচ্ছু পারে।”

“পুলিশ যে সব পারে তার প্রমাণ। চাই সততা, দেশপ্রেম ও নিরপেক্ষ কাজ করার নিশ্চয়তা। অপরাধী যে-ই হোক তার বিচার হোক,” লিখেছেন শরীফুল ইসলাম।

শুরুতে এই মামলার তদন্তের দায়িত্বে ছিলেন বনানী থানার পরিদর্শক আব্দুল মতিন। সে সময় বনানী থানা পুলিশ কয়েকবার সাফাতদের গুলশানের বাসায় অভিযান চালালেও তাকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। তখন পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, আসামি প্রভাবশালী পরিবারের হওয়ায় তাকে ধরা হচ্ছে না।

এই বিষয় ধরে সারোয়ার জামান নামে একজন মন্তব্যে লিখেছেন, “ধর্ষণকারীদের পালিয়ে যেতে সহযোগী বনানী থানার ওসিকে গ্রেপ্তার করার অনুরোধ করছি।”

অধিকাংশ ফেইসবুক ব্যবহারকারীর সঙ্গে ভিন্নমত জানিয়ে ইকবাল হাসান নামে একজন লিখেছেন, “ভাল, এবার ক্রসফায়ার এ মেরে দাও? আর মেয়েদের বল, রাত ১২ টার পরে পার্টি, নাইটক্লাব, ছেলেদের আড্ডায় বেশি করে যেতে। যাতে ছেলেদের ব্লাকমেইল্ড ও অর্থ ইনকামসহ জেল-ফাঁসি দেওয়া জায়।”

ইয়াসির আহমেদ নাদিম লিখেছেন, “এখন থেকে কয়েক সপ্তাহ পরে হঠাৎ করে নতুন ইস্যু সামনে আসবে, সবাই তখন নতুন বিষয় নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়বে। ধীরে ধীরে এই ঘটনা আমাদের মন থেকে মুছে যেতে শুরু করবে, যেমনটি হয়েছে সোহাগী জাহান তনুর ক্ষেত্রে, যাকে নৃশংসভাবে ধর্ষণ ও হত্যা করা হয়েছিল।”