দুই অঙ্গ ব্যর্থ হলে বিচার বিভাগ নীরব থাকতে পারে না: প্রধান বিচারপতি

নির্বাহী বিভাগের সঙ্গে টানাপড়েনের মধ্যে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা বলেছেন, রাষ্ট্রের দুটি অঙ্গ যখন দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয় তখন বিচার বিভাগ নীরব থাকতে পারে না।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 May 2017, 04:47 PM
Updated : 9 May 2017, 07:51 PM

নিম্ন আদালতের চাকরি বিধি নিয়ে পাল্টাপাল্টি বক্তব্যের মধ্যে প্রধান বিচারপতির কথা নিয়ে সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের পরদিন মঙ্গলবার একথা বলেন তিনি।

সুপ্রিম কোর্ট মিলনায়তনে এক কর্মশালার সমাপনী অনুষ্ঠানে বিচারপতি সিনহা বলেন, “যখন রাষ্ট্রের দুটি অঙ্গ তাদের দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হয়, তখন বিচার বিভাগ নীরব দর্শকের ভূমিকায় থাকতে পারে না।”

প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বিতর্কের মধ্যে রাষ্ট্রের তিন অঙ্গ আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগের সমন্বয়ের কথা বলে আসছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরিবিধির গেজেট প্রকাশ নিয়ে দ্বন্দ্ব থেকে মার্চ মাসের মাঝামাঝিতে এক অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি বিচার বিভাগ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তাকে পাশ কাটানোর অভিযোগ তোলার পর থেকে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য চলছে।

এর মধ্যে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক মন্তব্য করেন যে বিশ্বের কোথায় প্রধান বিচারপতিরা এত কথা বলেন না। তার প্রতিক্রিয়ায় বিচারপতি সিনহা বলেন, ‘আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায়’ বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় অনেক পিছিয়ে আছে বলে তাকে কথা বলতে হচ্ছে।

প্রধান বিচারপতির ওই বক্তব্য নিয়ে সংসদেও আলোচনা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার সংসদে বলেন, “আমি জানি না আমাদের চিফ জাস্টিস কীভাবে বললেন- আইনের শাসন নেই, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নাই।”

কর্মশালায় প্রধান বিচারপতি বলেন, “আইনের সীমার মধ্যে থেকে সুপ্রিম কোর্ট সব সময় সংবিধানের অন্যতম অভিভাবক হিসেবে দাঁড়িয়েছে।”

বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, “বিচারিক স্বাধীনতা মানে কোনো ধরনের প্রভাব বা হস্তক্ষেপ ছাড়া বিচারকের ক্ষমতা প্রয়োগ করা। বিচার বিভাগীয় স্বাধীনতার মূল ও ঐতিহ্যগত অর্থ হলো- সরকারের রাজনৈতিক শাখাগুলো থেকে বিশেষত নির্বাহী সরকার থেকে বিচারকদের সামষ্টিক ও স্বতন্ত্র স্বাধীনতা।

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা (ফাইল ছবি)

“ব্যক্তিগতভাবে একজন বিচারকের পরিপূর্ণ স্বাধীনতার উপাদানগুলো হল- ব্যক্তিগত স্বাধীনতা, পারিপার্শ্বিক স্বাধীনতা এবং অভ্যন্তরীণ স্বাধীনতা।”

বিচার বিভাগের কাজ করার ক্ষেত্রে সরকারের সমর্থন এবং রাষ্ট্রের অন্য অঙ্গগুলোর সহযোগিতা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, “আইন ও নির্বাহী বিভাগের কাজের উপর আদালত বিচারিক পর্যালোচনার মাধ্যমে এবং কার্যকরভাবে পর্যবেক্ষকের (ওয়াচডগ) দায়িত্ব পালন করছে।

“সাংবিধানিক পদ্ধতির অধীনে স্বাধীন বিচার বিভাগ এ দায়িত্ব পালন করে। রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গের ভূমিকা সঠিকভাবে অঙ্কন করার মাধ্যমে সংবিধানকে সমুন্নত রাখা সুপ্রিম কোর্টের প্রধান অবদান।”

‘বিচারিক স্বাধীনতা’ শীর্ষক তিন দিনব্যাপী যে কর্মশালার সমাপনীতে প্রধান বিচারপতি বক্তব্য রাখেন, তা আয়োজন করে

সুপ্রিম কোর্ট, কমনওয়েলথ সেক্রেটারিয়েট ও কমনওয়েলথ ম্যাজিস্ট্রেট এন্ড জাজেস অ্যাসোসিয়েশন। অধস্তন আদালতের বিচারকদের জন্য এ কর্মশালার আয়োজন করা হয়।

কমনওয়েলথ দেশের সরকারগুলো কমনওয়েলথ লিগ্যাল রিসার্চ জুডিশিয়াল একাডেমি স্থাপন করবে বলে আশা প্রকাশ করেন প্রধান বিচারপতি।

“যেখানে সবাই তাদের অভিজ্ঞতা আদান-প্রদান করবে। একইসঙ্গে সন্ত্রাস এবং স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক মামলার বিষয়েও আলাপ-আলোচনা করবে।”

অনুষ্ঠানে অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডের চিফ ম্যাজিস্ট্রেট রয় রিনাউডে, যুক্তরাজ্যের বিচারক শামীম কোরাইশী, কমনওয়েলথ সেক্রেটারিয়েটের আইন উপদেষ্টা মার্ক গোথরে, সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম বক্তব্য রাখেন।