‘গাছ নাড়ালে সোনা পাবে’ আশ্বাসে ঘুরছে জীবন

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সবকিছু বদলালেও পাল্টায়নি তাদের জীবন, পৌনে দুশো বছর ধরে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ঘুরছে একই বৃত্তে- চা শ্রমিক।

ফায়হাম ইবনে শরীফবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 April 2017, 07:48 PM
Updated : 1 May 2017, 08:53 AM

বর্তমানে চা বৃহৎ পুঁজি ও শ্রমঘন এবং দীর্ঘমেয়াদি কৃষিভিত্তিক আন্তর্জাতিক শিল্প পণ্য হলেও বঞ্চনার জীবন কাটান তারা।

একাত্তরে এই ভূখণ্ডের বাসিন্দাদের স্বাধীনতা এলেও এখনও ব্রিটিশ উপনিবেশের অনুশাসনে বাধা তাদের জীবন। সর্বোচ্চ দৈনিক মজুরি একশ টাকার কম, যা বাংলাদেশে আর কোনো পেশায় নেই বলেই সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য।

আইন অনুযায়ী বাগান মালিকের শ্রমিকদের চিকিৎসা, বাসস্থান, রেশন, পেনশন, স্যানিটেন ও সন্তানদের শিক্ষার ব্যবস্থা করার কথা থাকলেও বাস্তবে সে চিত্র বড়ই করুণ। মালিক পক্ষের কাছ থেকে কখনোই প্রতিশ্রুত সুযোগ-সুবিধা পান না শ্রমিকরা। ঐতিহাসিকভাবে ইংরেজ মালিকদের প্রচলিত রীতি-নীতি ও কাঠামো এখনও চালু বাগানগুলোতে।

বাংলাদেশে চা’র আবাদ শুরু হয় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাত ধরে। ব্রিটিশ সাংবাদিক ড্যান জোনসের তথ্য অনুযায়ী, উনিশ শতকের মাঝামাঝি চুক্তিবদ্ধ শ্রমের (বন্ডেড লেবার) মাধ্যমে চা বাগানের কার্যক্রম শুরু হয়।

মূলত ‘আফিম যুদ্ধ’ ও চা’র আবিষ্কারক দেশ চীনের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি মেটাতে উপমহাদেশে প্ল্যান্টেশন ইকনোমি’র (চা, কফি, তুলা, আখ, রাবার- যার কোনোটিই মৌসুমী ফলনের উপর নির্ভরশীল নয় এবং শ্রমঘন শিল্প) বিস্তার ঘটায় ইংরেজরা। চা শ্রমিকদের এভাবে কাজে নিয়োজিত করাকে দাস প্রথা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন সমাজবিজ্ঞানীরা।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক নেতা ও লেখক পরিমল সিং বারাইক বলেন, ভারতের বিহার, উড়িষ্যা, অন্ধ্র প্রদেশ, মধ্য প্রদেশ, উত্তর প্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গসহ অন্যান্য জায়গা থেকে দালালদের মাধ্যমে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে আদিবাসী ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মানুষকে বর্তমান আসাম ও সিলেটে এনে রেল ও চা শিল্পের শ্রমিক হিসেবে কাজে লাগায় ইংরেজরা।

“লম্বা যাত্রাপথ এবং আসার পর প্রতিকূল পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে না পেরে প্রায় এক তৃতীয়াংশ শ্রমিক মারা যায়।”

চা শ্রমিকের ইতিহাস লেখা পরিমল বলেন,  ‘গাছ নাড়ালে সোনা পাবে’- এমন কথা বলে এই শ্রমিকদের কাজে আসতে প্রলুদ্ধ করা হয়। যদিও বলা হয়েছিল বছর শেষে তারা বাড়ি ফিরতে পারবে, কিন্তু প্রকৃত অর্থে চুক্তির বিষয়াদি সম্পর্কে বিস্তারিত না জানায় পালিয়ে আসা ছাড়া কখনোই শ্রমিকরা আর তাদের ভিটেমটিতে ফিরতে পারেনি।

সময়ের সাথে সাথে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে আরও বিভিন্ন ইংরেজ প্রতিষ্ঠান এই ব্যবসায় যোগ দেয়। ১৯৪৭-এ  দেশভাগের পর থেকে চা শিল্পে দেশীয় ব্যবসায়ীদের অংশগ্রহণ বাড়ার পাশাপাশি কমে ইংরেজদের আধিপত্য। বর্তমানে ডানকান ব্রাদার্স ছাড়া আর কোনো বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশে চা শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা নেই।

চা বোর্ডের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে নিবন্ধিত মোট ১৬২টি বাগান রয়েছে।  তার মধ্যে ১৪৪টির মালিকদের প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশীয় চা সংসদ।

শ্রমিকদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে কাজ করে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন। নিয়মিত কার্যক্রমের পাশাপাশি প্রতি দুই বছর পর পর মালিকদের সঙ্গে বসে শ্রমিকদের মজুরি ও অন্যান্য বিষয়াদির মীমাংসা করে তারা। সবশেষ চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে গত বছর ৩১ ডিসেম্বর।

চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রামভজন কৈরী বলেন, “জানুয়ারির মাঝামাঝি আমরা নতুন দাবিনামা পেশ করেছি। এবারের দাবিতে আমরা দৈনিক বেতন ২৩০ টাকা করার প্রস্তাব রেখেছি। দৈনিক বেতনের মধ্যে কোনো ধরনের গ্রেডিং না রাখার কথাও বলেছি।”

এছাড়া কর্মক্ষেত্রে নারী ও পুরুষ শ্রমিকদের আলাদা টয়লেটের ব্যবস্থা করার দাবি তোলার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “আইনে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকলেও তার বাস্তবায়ন নেই এতদিনেও। এবার চা শ্রমিকের ভূমি অধিকার নিশ্চিত করার জন্যও সরকারের কাছে দাবি জানাই আমরা।”

 

 সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ অঞ্চলের চা বাগানের গড় উৎপাদন (কেজি)

চট্টগ্রাম ও রাঙামাটি অঞ্চলের চা বাগানের গড় উৎপাদন (কেজি)

গ্রেড ০২

স্থায়ী শ্রমিকের (দৈনিক)

বেতন  (টাকা)

গ্রেড ০১

স্থায়ী শ্রমিকের (মাসিক)

বেতন  (টাকা)

সর্দার, মিস্ত্রী, ধাই, পিয়ন, মেসেঞ্জার, লেদ অপারেটর

গ্রেড ০১

স্থায়ী শ্রমিকের (মাসিক)

বেতন  (টাকা)

ইলেকট্রিসিয়ান, ড্রেসার

ক্লাস এ চা বাগান

১৮০,০০০ থেকে বেশি

১১৩,০০০ থেকে বেশি

৮৫

৪,৬৮০

৪,৮১০

ক্লাস বি চা বাগান

১০৮,০০০ – ১৮০,০০০

৪৫,০০০ – ১১৩,০০০

৮৩

৪,৬৮০

৪,৮১০

ক্লাস সি চা বাগান

২৭,০০০ – ১০৮,০০০

৪৫,০০০ থেকে কম  

৮২

৪,৬৮০

৪,৮১০

চা শিল্পে শ্রমিক কত সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই এই শিল্পের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ চা বোর্ড ও বাংলাদেশীয় চা সংসদের কাছে। তবে শ্রমিক ইউনিয়নের তথ্য অনুযায়ী, দেশের বাগানগুলোতে স্থায়ী, মৌসুমি ও চুক্তিবদ্ধ মিলিয়ে প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার শ্রমিক কাজ করছেন। এদের অর্ধেকেরও বেশি নারী শ্রমিক। তাদের মধ্যে রয়েছে প্রায় ৮০টি ভিন্ন জাতিসত্তার মানুষ।

চা শিল্পের শ্রম বিভাজনে পাতা তোলার কাজটি মূলত নারীরাই করেন, যারা দৈনিক স্থায়ী শ্রমিক হিসেবে পরিচিত। আর কারখানা কিংবা অন্যান্য হালকা প্রযুক্তিগত কাজে নিয়োজিত হন পুরুষ শ্রমিকরা, যারা মাসিক বেতনে কাজ করেন।

উপরের তালিকায় দেখা যায়, কাঠামোগতভাবেই শ্রমের মূল্যের দিক থেকে এখানে পিছিয়ে আছেন নারীরা। যদিও বাগানের কাজ ও পারিবারিক দায়িত্ব মিলিয়ে এখানে বেশি শ্রম দিতে হয় ক্ষুদ্র জাতিসত্তার এই নারীদের।

বিভিন্ন চা বাগান ঘুরে দেখা যায় সেগুলোর বেশিরভাগেই শ্রমিকদের জন্য স্যানিটেশন সুবিধা বলতে কিছুই নেই। অধিকাংশ জায়গাতেই শ্রমিকেরা খোলা জায়গায় বা কাঁচা টয়লেট ব্যবহার করেন। শ্রমিকদের সন্তানদের বিনা বেতনে শিক্ষার ব্যবস্থা করার কথা থাকলেও তার অবস্থা খুব ভালো নয়। স্কুলগুলোর অবকাঠামোগত সমস্যার পাশাপাশি চা শ্রমিকদের অর্থনৈতিক অবস্থাও শিশুদের শিক্ষা বঞ্চিত করার বড় কারণ। পানীয় জলের ব্যবস্থা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ছড়া-নালা বা কুয়া থেকে হয়ে থাকে। টিউবওয়েল নেই বেশিরভাগ জায়গায়।

ডাক্তার, সহকারী ও ধাত্রীসহ শ্রমিকদের জন্য হাসপাতাল, ডিসপেনসারি বা গ্রুপ হাসপাতাল থাকার নিয়ম থাকলেও সেখানে সেবা বলতে তেমন কিছু পাওয়া যায় না।

কোম্পানি থেকে দেওয়া পুরনো কাঁচা ঘরবাড়ির ১০ শতাংশ হারে প্রতি বছর পাকা করার কথা থাকলেও কাঁচা ঘরবাড়ির মেরামতই ঠিকমত হয় না। শিশুশ্রম নিষিদ্ধ হলেও চা বাগানের শ্রম কাঠামোর কারণেই তা উৎসাহিত হয়।

এ রকম নানা সমস্যার কারণে মাঝে মাঝেই বিভিন্ন বাগানে মজুরি কিংবা অন্যান্য কারণে আন্দোলনে নামতে হয় শ্রমিকদের। বর্তমানে ধামাই, সোনারুপা ও আতিয়াবাগ নামের তিনটি বাগানের স্থায়ী শ্রমিকরা মজুরি পাচ্ছেন না প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে। অস্থায়ী শ্রমিকদের মজুরি বন্ধ প্রায় ১৫ সপ্তাহ। রেশন নেই প্রায় ২৫ সপ্তাহ ধরে।

একই মালিকের বাগানগুলোতে যেসব স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র রয়েছে সেখানে এখন ডাক্তার, ওষুধ কিছুই নেই। বাগানের স্টাফরাও বেতন পাচ্ছেন না প্রায় ১১ মাস। এই অবস্থায় শ্রমিক ও স্টাফরা মালিক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসক, শ্রম কল্যাণ বিভাগ, শ্রম প্রতিমন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদের কাছে এই সমস্যা সমাধানের জন্য সাহায্য চাইলেও কোনো সমাধান হয়নি।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য এই তিন চা বাগানের মালিকপক্ষ ও বাংলাদেশীয় চা সংসদের বিভিন্ন সদস্যের সাথে যোগাযোগ করা হলেও সাড়া মেলেনি।

চা শিল্প শ্রম কল্যাণ বিভাগের উপ-পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান জানান, কাজের অংশ হিসেবে বিভিন্ন সময়ে মালিক-শ্রমিকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব নিরসনে মধ্যস্ততা করেন তারা।

“কোনো কোনো সময় অবশ্য আমরা সফল হতে পারি না। যেমন-  ধামাই,সোনারুপা, আতিয়াবাগ বাগানের মালিকদের সাথে শ্রমিকদের আলোচনায় আমরা মধ্যস্ততা করার চেষ্টা করেছি, কিন্তু মালিকপক্ষ সময় চেয়েছেন। ২৭ এপ্রিল আরেকবার আলোচনায় বসবার কথা থাকলেও মালিকপক্ষ এখন মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত সময় চাচ্ছেন।”

তিনি বলেন, “আমাদের হাতে মামলা করার সুযোগও আছে, কিন্তু অনেক সময়ই শ্রমিকরা মামলা-মোকদ্দমায় যেতে চান না। আবার সিলেট অঞ্চলেই শ্রম আদালতের কোনো আঞ্চলিক কার্যালয় না থাকায় পুরো প্রক্রিয়াটাই একটু জটিল।”   

এই তিন বাগানের সমস্যা সম্পর্কে ‘কিছুই জানেন না’ বাংলাদেশ চা বোর্ডের সচিব মো. নূরুল্লাহ নূরী।

নিজেদের সীমাবদ্ধতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন,  “বোর্ড একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হলেও এর আর্থিক অবস্থা খুব ভালো নয়। সুতরাং শ্রমিকদের মজুরি বন্ধের মত অবস্থার সৃষ্টি হলে আমরা সাধারণত জেলা প্রশাসককে জানাই তার তহবিল থেকে সাহায্য করার জন্য বা লিজ বাতিল করার জন্য।

“অতীতে মালিকানা পরিবর্তনের মতো বিষয়েও মধ্যস্থতা করতেও গিয়েছি আমরা। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা গেছে, এই সব বিষয়ে আইনি জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে, যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না করে আরও জটিল করে তোলে।”

তিনি বলেন, “বাগানে শ্রমিক ব্যবস্থাপনায় কোনো অসুবিধা হলে আমরা চেষ্টা করি সমঝোতার মধ্য দিয়ে সেটি সমাধান করার। শাস্তিমূলক ব্যবস্থা এক্ষেত্রে খুব একটা নেওয়া হয় না। তবে আইন অনুযায়ী বাগানে চাষের আওতাভুক্ত জমির পরিমাণ বাড়ানোসহ অন্যান্য বিষয়ে অব্যবস্থাপনা হলে আমরা জরিমানা করি। এটা একটা রুটিন ওয়ার্কের মতোই হয়ে থাকে।”

চা শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যক্তি জানান, মূলত প্রভাবশালী ধনী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ঐতিহ্যগতভাবে চা বাগানের মালিক। শ্রমিক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে তারা ইংরেজদের তৈরি করে যাওয়া কাঠামোই অনুসরণ করে থাকেন।

বাংলাদেশের শ্রম আইনেও চা শ্রমিকদের স্বার্থ উপেক্ষিত হয়েছে। সংবিধানে যে কোনো ধরনের জবরদস্তি শ্রম নিষিদ্ধ ও আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ বলে চিহ্নিত রয়েছে। আবার শ্রম আইন ২০০৬ এ বলা হয়েছে, শ্রমিকের চাকরির অবসান হলে যে কোনোভাবে ৬০ দিনের মধ্য তার মালিকের দেওয়া আবাসস্থল ছাড়তে হবে। কিন্তু এক সময়ের অভিবাসী চা শ্রমিকদের ভিটামাটি মূলত চা বাগানেই। তাই মালিকের বরাদ্দ করা বাসস্থান হারালে শ্রমিকদের যাওয়ার আর কোনো জায়গা নেই। তার মাথাগোজার ঠাঁই ধরে রাখতে প্রতিটি পরিবারের কাউকে না কাউকে চা বাগানের স্থায়ী শ্রমিকের চাকরি রাখতে হবে।

একইভাবে অর্জিত ছুটি, মুনাফায় শ্রমিকের অংশীদারিত্ব, শিশু শ্রম বা ন্যূনতম মজুরি বোর্ড; শ্রম আইনের এ বিষয়গুলোর কোনোটিই চা শ্রমিকদের বেলায় খাটছে না।

এ বিষয়ে শ্রমিক নেতা রামভজন কৈরী বলেন, শ্রম আইনে বছরে ১০ দিন পূর্ণ মজুরিতে ছুটি পাওয়ার কথা থাকলেও, বলা হয়েছে এটি চা শ্রমিকদের জন্য প্রযোজ্য নয়।

আবার চাকরি শেষ হলে বা চাকরিচ্যুত হলে বাসস্থান ছাড়ার কথা বলা হয়েছে, যেটি চা শ্রমিকদের জন্য প্রযোজ্য হলে অবস্থা আরও জটিল হবে।

“তাই আমাদের দাবি, উপরে উল্লেখিত প্রথম ধারার ‘চা শ্রমিকের জন্য প্রযোজ্য নয়’ লাইনটি কেটে তা বরং উল্লেখিত দ্বিতীয় ধারার শেষে জুড়ে দেওয়া হোক। এতে খুব দ্রুত আমাদের অন্তত দুটি অধিকার নিশ্চিত হবে।”               

সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে একটি কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এছাড়া চা শিল্পের উন্নয়নে একটি রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে সরকার। তবে শিল্পের অন্যান্য বিষয়ের মতো শ্রমিক উন্নয়নের বিষয়টি এখানে কাঠামোগতভাবে নির্দেশ না করা হলে, তা আসলে শ্রমিদের কতটুকু কাজে লাগবে সে বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন অনেকেই।

এই বিষয়ে চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি রাজেন্দ্র প্রসাদ বুণার্জি বলেন, “চা বাগানের শ্রমিকদের সংবিধানে উল্লিখিত অনগ্রসর জনগোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত করে উচ্চ শিক্ষা ও সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে কোটা ব্যবস্থা চালু করার আবেদন জানাচ্ছি। একই সাথে অন্য শিল্পের থেকে কিছুটা ভিন্ন হওয়ায় এই শিল্প বিষয়ক সমস্যা সমাধানের জন্য আলাদা কোনো প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোও গড়ে তোলা যেতে পারে।”

বাংলাদেশ চা বোর্ডের চা বাগান ব্যবস্থাপনা সেলের মহা-ব্যবস্থাপক মো. শাহাজাহান বলেন, “বর্তমানে আমাদের দেশ কোয়ালিটি থেকে কোয়ান্টিটির দিকে মনযোগ দেয় বেশি। চা খুবই সেনসিটিভ একটি পণ্য। চা শিল্পের মান উন্নয়ন করতে হলে স্বল্পমেয়াদি,মধ্য মেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার প্রয়োজন।

“এক্ষেত্রে আমাদের গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এই শিল্প সংশ্লিষ্ট অন্যান্য পক্ষেরও একসাথে কাজ করতে হবে। অন্য যে কোনো শিল্পের তুলনায় এই শিল্পের শ্রমিকেরা আরও বেশি প্রান্তিক। এই অবস্থার উন্নয়নে কাঠামোগত পরিবর্তনের লক্ষ্যে সব পক্ষের এসাথে কাজ করতে হবে।”