কিছু দলের বক্তব্য জঙ্গিদের পক্ষে যায়: আইজিপি

জঙ্গি দমনে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান নিয়ে বিএনপি নেতাদের সন্দেহের জবাব এসেছে পুলিশ মহাপরিদর্শক একেএম শহীদুল হকের কথায়।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 April 2017, 12:28 PM
Updated : 30 April 2017, 12:28 PM

রোববার পুলিশ সদরদপ্তরে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “জঙ্গিদের ব্যাপারে কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের ‘রির্জাভেশন’ আছে। তারা আমাদের (পুলিশ) কর্মকাণ্ড পছন্দ করেন না। তারা যা কিছু বক্তব্য-বিবৃতি দেন, যেটা জঙ্গিদের পক্ষে দেন।

“আবার জঙ্গিদের সঙ্গে সংঘর্ষে কোনো পুলিশ সদস্য মারা গেলে তারা একটা নিন্দাও জানান না, বা দুঃখও প্রকাশ করেন না।”

আওয়ামী লীগ সরকার যেভাবে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়ছে, তা নিয়ে আপত্তি আছে বিএনপির।

দলটির নেতারা জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে ‘সবাইকে নিয়ে’ জাতীয় ঐক্য গড়ার কথা বলছেন। পাশাপাশি বিভিন্ন আস্তানায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে জঙ্গিদের জীবিত গ্রেপ্তার করতে না পারা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন তারা।    

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গত ২৮ মার্চ এক বিবৃতিতে বলেন, “বর্তমান স্পর্শকাতর একটি সময়ে জঙ্গিবাদের আকস্মিক বিস্তার ও দমন অভিযানে স্বচ্ছতার অভাবে জনমনে নানা প্রশ্ন ও সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। এই সব সন্দেহ দূর করতে হবে। আমি এই বিষয়গুলো অবিলম্বে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি।”

বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোশিয়েশনের নব নির্বাচিত কমিটির সঙ্গে মত বিনিময়ে পুলিশ প্রধান শহীদুল হক বলেন, জঙ্গিদের আত্মসমর্পণের জন্য সময় দেওয় হয়। কিন্তু তারা আত্মঘাতী। পুলিশের আহ্বানে সাড়া না দিয়ে আত্মাহুতির পথ বেছে নেয় জঙ্গিরা।

“একজন জঙ্গি মারা গেছে, তারা (রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ) বলেন- কেন মারল? গ্রেপ্তার করল না কেন? জীবিত গ্রেপ্তার করলে তথ্য পাওয়া যেত... হেন-তেন বলেন।

“বিশ্বচিত্রের দিকে তাকালে দেখা যায়, কেউ জঙ্গি গ্রেপ্তার করতে পারে না। গ্রেপ্তার করার কোনো সুযোগই নাই। ওর (জঙ্গি) কাছে অস্ত্র থাকে, বোমা থাকে। ও সুইসাইডাল, ও পণ করেছে ও মরবে, মরে বেহেশতে যাবে।”

দেশে বিভিন্ন অভিযানে জঙ্গিদের জীবিত গ্রেপ্তারে ‘অনেক চেষ্টা’ হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আত্মসমর্পণের জন্য সময় দেওয়া হয়েছে, আত্মীয়-স্বজনদের মাধ্যমে চেষ্টা করা হয়েছে, কিন্তু জঙ্গিরা আত্মসমর্পণ করতে চায়নি।

আইজিপি বলেন, “যারা এসব নিয়ে কথা বলেন, তারা বুঝে বলেন, নাকি না বুঝে বলেন জানি না। আমি বলি তারা যদি কিছু জানার থাকে বা সন্দেহ থাকে আমার কাছে আসুক।”

তবে পুলিশ জঙ্গিদমনে গণমাধ্যমকে সবসময় পাশে পেয়েছে বলে মন্তব্য করেন এ বাহিনীর প্রধান।  

পুলিশ এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি ‘জন ও মিডিয়াবন্ধব’ দাবি করে শহীদুল হক বলেন, “আগে পুলিশের কাছ থেকে কোনো তথ্য চাইলে সাধারণত পুলিশ দিতে চাইত না। অনেক ভয়-ভীতি থাকত। ‘রেফারেন্স’ দিত। এখনও চাকরির চুক্তিপত্রে লেখা আছে, কোনো তথ্য দিতে হলে ঊর্ধ্বতন অফিসারের লিখিত অনুমতি লাগবে। তারপরও আমাদের পুলিশ কর্মকর্তারা এখন মিডিয়ার সঙ্গে ফ্রিলি, ফ্রেন্ডলি কথা বলে থাকে।”

আইজিপি বলেন, কিছু তথ্য নিরাপত্তা ও নৈতিকতার কারণে প্রকাশ করা যায় না। যে তথ্য জনগণের জানা দরকার, পুলিশ এখন তা প্রকাশ করে।  

“সবার আগে নিউজ দেওয়ার জন্য সাংবাদিক পুলিশের কাছে আসে। ঘটনার সাথে সাথেই জানতে চায়। এখানে যদি পুলিশ বিরক্ত হয় তাহলে মুশকিল। আবার ঘটনার শুরুতে কোন বিষয়গুলো দিতে পারবে পুলিশ, এর বেশি তখন দিতে পারবে না- এটাও সাংবাদিকদের বুঝতে হবে।”

ক্র্যাব নেতৃবৃন্দ ছাড়াও পুলিশ সদরপ্তরের ডিআইজি (মিডিয়া) মহসিন হোসেন, অতিরিক্ত ডিআইজি হাবিবুর রহমান, এআইজি মো. মনিরুজ্জামান, সহেলী ফেরদৌস, জনসংযোগ কর্মকর্তা একেএম কামরুল আহছান এ মতবিনিময়ে উপস্থিত ছিলেন।