বাংলাদেশকে জঙ্গি দেশ বানাতে পারলেই যেন ষোলকলা পূর্ণ হয়: মন্ত্রী

গত কয়েক বছরে দেশ জুড়ে একের পর এক জঙ্গি হামলার পেছনে বাংলাদেশকে জঙ্গিবাদী রাষ্ট্র বানাতে একটি গোষ্ঠীর পরিকল্পিত চেষ্টা দেখছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 April 2017, 02:50 PM
Updated : 29 April 2017, 02:50 PM

শনিবার বিকালে রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজ মাঠে মাদক ও জঙ্গিবিরোধী এক সমাবেশে একথা বলেন তিনি।

মন্ত্রী বলেন, “আজকে জঙ্গির কথা বলেন, সন্ত্রাসের কথা বলেন- সবকিছুর পেছনে কিন্তু একটা সন্ত্রাসের পরিচালনা, পরিকল্পনা রয়েছে। বাংলাদেশ হঠাৎ করে অশান্ত হচ্ছে, তা কিন্তু নয়। একাত্তরের পর পঁচাত্তরে, বিভিন্ন সময়ে জঙ্গিরা বিভিন্ন নামে আত্মপ্রকাশ করতে চেয়েছে।

“বাংলাদেশে কিছু হলেই বলা হয় আইএস এই ঘটনা ঘটিয়েছে। আরে, আইএস এখানে কোথা থেকে আসবে। বাংলাদেশকে জঙ্গি দেশ বানাতে পারলেই যেন ষোল কলা পূর্ণ হয়।”

সারা দেশে একের পর এক কুপিয়ে ও গুলি টার্গেট কিলিংয়ে বেশ কিছু ঘটনায় মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসের নামে দায়-স্বীকারের বার্তা আসার পর গত বছরের ১ জুলাই রাজধানীর হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলায় ১৭ বিদেশিসহ ২০ জনকে হত্যার ঘটনায়ও তাদের নামে দায়-স্বীকারের বার্তা আসে।

গুলশান-শোলাকিয়া হামলার পর জঙ্গিবিরোধী অভিযানে কঠোর হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযানে নিহত হয় প্রায় অর্ধশত জঙ্গি।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান বিভাগ আয়োজিত অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশের মানুষ ধর্মান্ধ নয়, ধর্মভীরু। অন্য ধর্মের প্রতি আমাদের সবার শ্রদ্ধা আছে।

“সবাই মিলে একসঙ্গে চলতে পারি তার জ্বলন্ত উদাহরণ আজকের বাংলাদেশ। এদেশের মানুষ সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ পছন্দ করে না। হলি আর্টিজানের পর সবখানে পুলিশের সঙ্গে যারা চ্যলেঞ্জ করে নিহত হয়েছেন, পরিবার তাদের লাশও বুঝে নেয়নি। কারণ তারা তাদের ওই সন্তনদের মতাদর্শকে সমর্থন করেনি।”

সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও মাদকের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে কামাল বলেন, “সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও মাদক দেশের উন্নয়নে বড় শত্রু। আসুন সবাই মিলে এদের বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়াই, তা নাহলে দেশের যুব সমাজ ধ্বংস হয়ে যাবে।

“আমরা জঙ্গিবাদ শতভাগ নির্মূল করেছি বলব না। তবে এদের বিরুদ্ধে জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। তারা একই সুরে কথা বলেছে। জনগণকে মাদকের কুফল বোঝাতে হবে। তাহলে এর অভিশাপ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। কারো রক্ত হনন আমাদের উদ্দেশ্য না, সবাইকে নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে চাই।”

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পথভ্রষ্ট তরুণদের ফিরিয়ে আনতে কাজ করতে বলেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা তার নির্দেশনা মেনে নিরলসভাবে কাজ করছি।”

পুলিশের মহাপরিদর্শক একেএম শহীদুল হক বলেন, “মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশ জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। অনেক সময় অভিযোগ আসে পুলিশ মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত আছে।

“আমি বলেছি, পুলিশের কোনো সদস্যের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মাদক ব্যবসায়ীদের যোগাযোগ থাকলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাদের বদলি করা, বিভাগীয় ব্যবস্থা এমনকি প্রয়োজনে ফৌজদারি মামলা করে আদালতে তা জমা দেব।”

যারা মাদক ব্যবসা ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছেন তাদেরকে নজরদারিতে রাখতেও নির্দেশ দেন তিনি।

আইজিপি বলেন, “জঙ্গিবাদ মুসলমানদের ধ্বংস করতে আন্তর্জাতিক চক্রান্ত। আমরা জঙ্গিদের আস্তানা খুঁজে বের করে তাদের পরাস্ত করেছি। বিশ্বে এমনটি কোথাও নেই। জঙ্গিরা যেন আস্তানা না গড়তে পারে, সেজন্য পদক্ষেপ নিয়েছি।

“জঙ্গিরা ধর্মের নামে মানুষ হত্যা করছে। মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ খ্রিস্টান কাউকে রেহাই দিচ্ছে না, হত্যা করছে। মানুষ হত্যা করে ইসলাম কায়েম হয় না, ইসলামে মানুষ হত্যার কথা বলা হয়নি। যারা মানুষ হত্যা করে ইসলাম কায়েম করতে চান, আমি বলব তারা ইসলামের অপব্যাখ্যা দিচ্ছেন।”

মাদকের বিরুদ্ধে তিনি বলেন, “ইয়াবা তৈরি হয় মিয়ানমারে, কিন্তু মিয়ানমারের জনগণ ইয়াবা খায় না; তা বাংলাদেশে পাচার হয়। ফেনসিডিল তৈরি হয় প্রতিবেশী দেশে। সেখানে কেউ খায় না, তারা বাংলাদেশে পাচার করে। তারা বাংলাশের যুবসমাজকে ধ্বংস করতে চায়।”

বাসা ভাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে বাড়ির মালিকদের সতর্ক হওয়ার আহ্বানও জানান পুলিশের মহাপরিদর্শক।

সমাবেশে উপস্থিতদের উদ্দেশে ডিএমপি কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, “আপনারা প্রভু, আমরা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। আমাদের পাশে এসে দাঁড়ান।

“পুলিশ পেশাদারী আচরণ করছে। এখানে রাজনীতির কোনো গন্ধ নেই। অপরাধী যেই হোক না কেন, ছাড় পাবে না।”