‘হাওর পরিস্থিতি খারাপ হয়েছে আমলাতান্ত্রিক জটিলতায়’

হাওর এলাকার চলমান পরিস্থিতির পেছনে ‘আমলাতান্ত্রিক জটিলতা’র পাশাপাশি রাজনীতিবিদ ও নীতিনির্ধারকদের ‘জ্ঞানের অভাব’কে দায়ী করে রাজধানীর এক গোলটেবিল বৈঠক থেকে দুর্যোগ মোকাবেলায় ‘দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা’ নেওয়ার পরামর্শ এসেছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 April 2017, 05:30 PM
Updated : 28 April 2017, 05:30 PM

শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে যৌথভাবে এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), পল্লীমা গ্রীণ ও শাল্লা সমিতি।

এতে পবা সাধারণ সম্পাদক কামাল পাশা বলেন, “যারা কথা বলছেন তাদের বেশিরভাগই হাওর সম্পর্কে কিছুই জানেন না, টিভি টক-শোতে মনগড়া কথা বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে তারা।”

হাওর অঞ্চলে বাঁধ দিয়ে বন্যা রোধ করা যাবে এমন মন্তব্য করে ‘হাওরের মানুষ’ কামাল পাশা বলেন, “হাওরের বন্যা নতুন কিছু নয়, প্রতিবছরই পানি উঠে এ অঞ্চলে। প্রতিবছর বৈশাখ- জ্যৈষ্ঠ মাসে ধান যখন কাঁচা থাকে, ভারতের চেরাপুঞ্জি, আসাম ও মেঘালয় থেকে সুরমা-কুশিয়ারা বেয়ে পানি আসে হাওরে, যা আটকাতে বাঁধ দিতে হয়।

“এরপর ধান কেটে ফেলার পর আরও একবার পানি আসে, যা হাওরের জন্য আশির্বাদ; সব রোগ-বালাই ধুয়ে যায় সেই পানিতে। সেই পানি আটকালে হাওরের জন্য ক্ষতি হয়। তাই বাঁধ কত বড় করে দিলাম তা মুখ্য নয়, সময়মত বাঁধ দিতে হয়। এবার ১৫ দিন আগে চলে এসেছে বলেই হাওরের এই অবস্থা।”

সময়মত বাঁধ না দেওয়া এবং হাওরের দুর্যোগের পেছনে ‘আমলাতান্ত্রিক জটিলতাকে’ দায়ী করে কামাল পাশা বলেন, “প্রতিবছরই বাঁধ নিয়ে তাল-বাহানা চলে, দুর্নীতি হয়। নয় ফিটের কথা বলে তিন ফিট বাঁধ বানানো হয়। অব্যবস্থাপনা চলে লাগামহীন।”

এবার পানিতে তলিয়ে ফসলহানির পর হাওরাঞ্চল ঘুরে এসে নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে হাওর গবেষক মুজিবুর রহমান বলেন, “হাওরে আজ সবাই দুর্গত, চরম অবস্থার মধ্যে বাস করছে সবাই। কবরস্থান ভেঙে লাশ ভেসে যেতে দেখেছি।”

নিজেকে ‘হাওর অঞ্চলের মানুষ’ হিসেবে অভিহিত করে মুজিবুর রহমান বলেন, “ত্রাণ নেওয়ার মানসিক অবস্থা আমাদের নেই। যে চাষি ১০০ মন ধান ফলাত, ১০ কেজি ধান তার ক্ষতি মিটাবে?

“সত্যি যদি হাওরের মানুষদের উপকার করতে চান, সুদমুক্ত ঋণ ও গবাদি পশুর খাদ্য দিন; শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বেতন ও আগের ঋণের সুদ মওকুফ করুন।  স্পেশাল টিম করে স্বাস্থ্য সেবা দিন।”

পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, “হাওর অঞ্চলের ইকোসিস্টেম খুবই খুবই ইউনিক, দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা ছাড়া যা ঠিকমত ম্যানেজ না করা সম্ভব নয়।”

‘বিকল্প উপায়’ খুঁজে দেখার পরামর্শ দিয়ে এই প্রবীণ পরিবেশবিদ বলেন, “শুধু বোরো ধান নয়, এ অঞ্চলে অন্যান্য ফসলও চাষ করা উচিত। বর্ষাকালে হাওরে পানি উঠার কারণে এ অঞ্চলের প্রায় দুই কোটি মানুষ কর্মহীন হয়ে পরে, তাদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে।”

আলোচনা অনুষ্ঠানে শাল্লা সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুব্রত দাশ খোকন, পল্লীমা গ্রীণের চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান লিটন, ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পংকজ ভট্টাচার্য, পল্লীমা সংসদের প্রতিষ্ঠাতা মু. হাফিজুর রহমান ময়না, সভাপতি হাফিজুর রহমান হাফিজ ও সাধারণ সম্পাদক মু. লুতফর রহমান ছাড়াও সংগঠনগুলোর অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।