হাওরে বন্যা ঘিরে ‘ধান্ধাবাজদের’ ঠেকান: খলীকুজ্জমান

হাওরে বন্যায় ফসল নষ্টের পর দুর্গত এলাকায়‘চালসহ অনেক পণ্যের দাম বাড়ানোর’ কথা জানিয়ে তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 April 2017, 04:16 PM
Updated : 27 April 2017, 05:29 PM

বৃহস্পতিবার বিকালে রাজধানীর পিকেএসএফ ভবন মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “আরেক ধরনের ধান্ধাবাজ বেরিয়েছে, তারা ধান্ধা করে। এদের নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

“সুনামগঞ্জের হাওরে দেখছেন না, দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। ছোট ধান্ধাবাজ, বড় ধান্ধাবাজ রয়েছে। এরা সুযোগের সন্ধানী। কারো ভাল-মন্দ বিবেচনার সুযোগ নেই, নিজেদের স্বার্থ হলেই হলো তাদের। এদের নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে।”

এপ্রিলের শুরুতে বৃষ্টি ও উজানের ঢলে সিলেট, সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও নেত্রকোণার হাওরের ফসলের ক্ষেত তলিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কয়েক লাখ পরিবার। ফসল নষ্টের পর মরেছে মাছ এবং হাওরে চরানো হাঁস।

বন্যা শুরুর পর সুনামগঞ্জে চালের দাম বাড়িয়ে দেওয়ার খবর গণমাধ্যমে আসার পর সেখানে বাজার নিয়ন্ত্রণে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জেলা প্রশাসন।

পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) চেয়ারম্যানখলীকুজ্জমান সমাজের সব স্তরের মানুষের অর্থনৈতিক অগ্রগতির উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

তিনি বলেন, “প্রবৃদ্ধির খবর বড় হেডলাইন হয়। কিন্তু এটা কোনো কাজেরই কথা না। প্রবৃদ্ধি বাড়লে তো মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয় না।

“পিছিয়ে পড়াদের মধ্যে প্রবৃদ্ধিকে নিয়ে যেতে হবে। তাহলে দারিদ্র্য কমবে, বৈষম্য কমবে, প্রবৃদ্ধিও বাড়বে। কারণ, এগোতে হলে মানুষকে কেন্দ্র করেই এগোতে হবে।” 

প্রশাসনে আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় সিদ্ধান্ত নিতে বিলম্ব হওয়ায় খেদ প্রকাশ করেন তিনি।

খলীকুজ্জমান বলেন, “উন্নয়ন প্রশাসনে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। উন্নয়ন প্রশাসনকে গণমুখী, বাস্তবমুখী, দক্ষ ও দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার অনুকূলে না আনলে আমরা খুব বেশি দূর এগোতে পারব না।

“রাজনৈতিক প্রশাসন বা অন্য কোনো প্রশাসন কীভাবে চলবে জানি না। আবার এসবের মধ্যে আলাদা করে উন্নয়ন প্রশাসন গতিশীলভাবে চলবে সেটাও আমি মনে করি না। আসলে পুরোটাতে একসাথে পরিবর্তন আনা দরকার।”

ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফিন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইএনএম) ডিপ্লোমা ইন মাইক্রোফিন্যান্স কোর্সের তৃতীয় সনদপত্র বিতরণীর এই অনুষ্ঠানে শিক্ষাখাতের নানা সমস্যা নিয়েও সমালোচনায় সরব হন তিনি।

জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির এই কো-চেয়ারম্যান বলেন, “শিক্ষানীতি করার সময় বলা হয়েছিল, টাকা কোথা থেকে আসবে? কিন্তু টাকা তো বড় কিছু না, বাইরে থেকে নিতে চাইলেও পাওয়া যাচ্ছে। বড় কথা হচ্ছে শিক্ষা প্রশাসন।

“প্রাইমারির শিক্ষক বদলি হলে তাকে ঢাকায় মন্ত্রণালয়ে আসতে হয়। কত শিক্ষক, তাদের অনেকটা সময় যদি এখানেই চলে যায়,তাহলে অন্য কাজ কীভাবে করবে? এখন প্রাইমারির বদলির সমস্যা কিছুটা দূর হচ্ছে, কিন্তু অন্য সব ক্ষেত্রে সমস্যাটা রয়ে গেছে।

“ফাইল, তদবির, দুর্নীতিতেই সব রয়ে গেছে। এসব থাকলে আমরা যা চাচ্ছি, সেটা হবে না।”

বিনামূল্যে বই বিতরণসহ নানা ইতিবাচক দিক তুলে ধরে তিনি বলেন, “কিন্তু প্রশাসনটা এমন, তদারকি সেভাবে হচ্ছে না। নজরদারি হচ্ছে না যে শিক্ষক কী করছে আসলে।”

খলীকুজ্জমান বলেন, “ডিগ্রি নিলেও অনেকে মানুষ হচ্ছে না। অন্যের অধিকার ক্ষুণ্ন করছে। ডিগ্রি নিয়ে কেউ কেউ নিকৃষ্ট মানুষও হচ্ছে।

“এই যে মূল্যবোধের ঘাটতি, দখলদারিত্ব,নদী দখল, পুকুর দখল, বালু দখল, জমি দখল- দখলের মহোৎসব। এসব বন্ধ করতে গিয়েও কাজ হচ্ছে না।”

সরকারের বিভিন্ন পরিকল্পনায় জনগণের সম্পৃক্ততা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে আইএনএম সভাপতি খলীকুজ্জমান বলেন, “পরিবেশটার উন্নতি করা দরকার। পারিপার্শ্বিকতার উন্নতির দরকার আছে। স্থানীয় জনগণের সম্পৃক্ততা না থাকলে অগ্রগতি হবে না।”

অনুষ্ঠানে আইএনএমের ডিপ্লোমা ইন মাইক্রোফিন্যান্সের চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ ব্যাচের ৫৪ জনের হাতে সনদ তুলে দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।

সনদ গ্রহণকারীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “আপনারা এখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, আজকে বেরিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু আপনার জীবনে গুণগত কী পরিবর্তন ঘটল আপনার পেশাগত, সামাজিকও পারিবারিক জীবনে সেটা দেখার বিষয়।

“বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে যাওয়ার অর্থ এই নয় যে, আপনার জ্ঞানের রাজ্যে বিচরণ এখানেই সম্পন্ন হয়েছে। বরং বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষে প্রকৃত জ্ঞানের রাজ্যে প্রবেশ করেছেন। সারা পৃথিবী এখন আপনাদের বিচরণ করতে হবে।” 

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন আইএনএমের নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তফা কে মুজেরী ও পরিচালক সাব্বির আহমেদ চৌধুরী।