বৃহস্পতিবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে ক্যামেরন বলেন, “আমরা কেবল তখনই জয়ী হব যদি আমরা এই মতাদর্শের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হই এবং তারপরই আমরা সফল ও বিকশিত হতে পারি।”
ব্রিটিশ-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ আয়োজিত ওই সভায় রাজনীতিক, সাবেক কূটনীতিক, শিক্ষক ও এনজিওকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
সন্ত্রাসবাদের পাশাপাশি ‘পূর্ণ গণতন্ত্র চর্চার প্রয়োজনীয়তা’ এবং দুর্নীতিবিরোধী লড়াইকে বর্তমান বিশ্বের চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত করেন ক্যামেরন।
সন্ত্রাসবাদ নিয়ে তিনি বলেন, “এটা সভ্যতার সঙ্গে সভ্যতার সংঘাত নয়। এটা একটি ধর্মের মধ্যে সংঘাত।”
এই বক্তব্যে ইসলাম ধর্মকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, এই ধর্মের বেশিরভাগ মানুষই এই চরমপন্থি মতাদর্শে বিশ্বাসী নয়।
“আমরা যদি এটা (সংভ্যতার মধ্যে সংঘাত) মনে করি তাহলে আমাদের যাবতীয় কৌশল ভেস্তে যাবে।”
তার মতে, “সন্ত্রাসীরা চায়, আমরা এটাকে সভ্যতার সঙ্গে সভ্যতার সংঘাত হিসেবে দেখি। তাদের মূল চাওয়া আমরা (বিভিন্ন ধর্মের মানুষ) যাতে একসঙ্গে বসবাস করতে না পারি। তরুণ মুসলমানদের তারা বোঝায়-এটা (সহাবস্থান) অসম্ভব, আইএসআইএলের মতাদর্শের সমাজ না হলে সেখানে তোমরা টিকে থাকতে ও বিকশিত হতে পারবে না।”
গতবছর গণভোটে যুক্তরাজ্যের ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছেড়ে যাওয়ার পক্ষে রায় আসার পর প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে যান ক্যামেরন। ব্যক্তিগত সংক্ষিপ্ত সফরে বুধবার রাতে ঢাকা আসেন তিনি।
২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ, ঢাকার একটি পোশাক কারখানা এবং যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা ডিএফআইডির প্রকল্প পরিদর্শন এবং ইন্টারন্যাশনাল গ্রোথ সেন্টারের একটি রুদ্ধদ্বার বৈঠকে যোগ দেন তিনি।
বিকালে গুলশানের একটি হোটেলে এই অনুষ্ঠানে বক্তব্যের শুরুতে প্রধানমন্ত্রিত্বের ছয় বছরে বাংলাদেশ সফর না করার জন্য ক্ষমা চান ক্যামেরন।
বাংলাদেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সফলতার প্রশংসা করে তিনি বলেন, প্রায় ৫০ লাখ ব্রিটিশ-বাংলাদেশির যুক্তরাজ্যে বসবাস ছাড়াও অনেক কারণে বাংলাদেশকে নিয়ে গর্ব করেন।
“তারা ব্রিটেনকে সমৃদ্ধ এবং একে আরও উন্নত ও শক্তিশালী করেন।”
ক্যামেরন বলেন, অনুদানের অর্থ দিয়ে কীভাবে দারিদ্র্য বিমোচন এবং জনগণকে আরও ভালো স্বাস্থ্য ও শিক্ষা দেওয়া যায় তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বাংলাদেশ।
তবে বাংলাদেশের উন্নয়নের পরবর্তী ধাপে অবকাঠামো ও জ্বালানিতে প্রচুর বিনিয়োগ দরকার বলে মনে করেন সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। এর কারণ হিসেবে ব্যবসা বাড়তে থাকার কথা বলেন তিনি।
পাশাপাশি দক্ষতা বৃদ্ধি ও পেশাগত শিক্ষার উন্নয়নে বাংলাদেশের বিনিয়োগ করা উচিত বলে মনে করেন তিনি।
এজন্য সব সময়ের মতো ব্রেক্সিটের পরও যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের পাশে থাকবে বলে মন্তব্য করেন দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মতো বন্ধু দেশগুলোর সঙ্গে তারা ‘আরও বেশি’ কাজ করবেন।
বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনায় একটি সফল দেশ হিসেবে গড়ে উঠতে পূর্ণ গণতন্ত্র চর্চার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন ক্যামেরন।
এই ভাবনাকে সম্পূর্ণ ভুল মনে করেন জানিয়ে ক্যামেরন বলেন, “এর মধ্য দিয়ে একটি খারাপ সরকার আসে। এটা ব্যবসার জন্যও ক্ষতিকর।”
এখন পুরো বিশ্বই এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বিশ্বজুড়ে রাজনীতিকদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান ডেভিড ক্যামেরন।
“সামান্য দুর্নীতি তেমন কোনো বিষয় না-এই ধারণা ভুল। এটা একটা ক্যান্সার যা রাজনীতির প্রতি ও দেশের প্রতি আস্থা নষ্ট করে দেয়।”
দুর্নীতি রোধে দরিদ্র দেশগুলোকে যথেষ্ট সহায়তা না করার জন্য পশ্চিমাদের সমালোচনাও করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ সফরের জন্য ক্যামেরনকে ধন্যবাদ জানান। ব্রেক্সিটের পরেও যুক্তরাজ্যের সহায়তা অব্যাহত থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশি পণ্যের তৃতীয় বৃহত্তম আমদানিকারক দেশ যুক্তরাজ্য।
এই অনুষ্ঠান শেষে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে লন্ডনের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেন ক্যামেরন।