এ ঘটনায় গ্রেপ্তার নারায়ণগঞ্জের লিটন কুমার সরকার (৩০) প্রেমিকার অনুরোধে সাড়া দিয়ে নানিকে হত্যা করে মেয়েটিকে তাদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন বলে তদন্তকারী গোয়েন্দা পুলিশের ভাষ্য।
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার শেখ নাজমুল আলম মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, সোমবার বিকালে ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশনের পাশের আবাসিক হোটেল ‘সীল্যান্ড’ থেকে লিটনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী মাগুরার শ্রীপুর থানার বড়লীদাহ গ্রামের প্রশান্ত দাস ও তার স্ত্রী পান্না দাসের কাছ থেকে দেড় বছরের শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়।
যেভাবে হত্যা ও অপহরণ
এই অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার মো. তরিকুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, স্ত্রী ও তিন-চার বছরের এক সন্তান নিয়ে নারায়ণগঞ্জ সদরে বসবাস করেন লিটন। মোবাইলে ‘মিসড কল’ থেকে পরিচয়ের মাধ্যমে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের এক নারীর সঙ্গে তার সম্পর্ক হয়।
প্রেমিকা তার দুঃসম্পর্কের এক ভাই-ভাবীর জন্য একটি সন্তান দত্তক নেওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে বলেন। এরপর শ্বশুর বাড়ির সূত্রে পূর্ব পরিচিত পুষ্প রানীকে হত্যা করে তার নাতিকে তিনি তাদের হাতে তুলে দেন।
পুষ্প রানী লিটনের কাছ থেকে ছয় হাজার টাকা ধার নিয়েছিলেন। লিটন সেই টাকার জন্য চাপ দিলেও পুষ্প তা পরিশোধ করতে পারছিলেন না। উল্টো লিটনের কাছে আরও কিছু টাকা ধার চান তিনি। এটাকে কাজে লাগিয়ে লিটন তার কাজ সারেন।
ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরে গোয়েন্দা পুলিশের আরেক সহকারী কমিশনার মহররম আলী বলেন, প্রেমিকা অনুরোধ করার পর লিটন নিজেকে সচিবালয়ের কর্মচারী পরিচয় দিয়ে ওই নিঃসন্তান দম্পতিকে বলেন, ঢাকায় সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় কিছু অর্থ নিয়ে এতিম শিশুদের নিঃসন্তান দম্পতিদের কাছে হস্তান্তর করে।
একটি সন্তান যোগাড় করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে ওই দম্পতিকে ঝিনাইদহ থেকে ঢাকায় এনে সচিবালয়ের পাশের একটি হোটেলে রাখেন লিটন। এজন্য তাদের কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা নেন তিনি।
গোয়েন্দা কর্মকর্তা মহররম বলেন, অর্থসংকটে থাকা পুষ্পরাণীকে তার নাতনিকে বিক্রির প্রস্তাব দেন লিটন। কিন্তু পুষ্প রাজি না হওয়ায় তাকে টাকা ধার দেওয়ার কথা বলে গাজীপুর নিয়ে যান। সেখানেও রাজি করাতে না পেরে ১৭ এপ্রিল পুষ্পকে নিয়ে উত্তরার আবদুল্লাহপুরে ‘নীলা’ নামে একটি আবাসিক হোটেলে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে উঠেন লিটন। তাদের সঙ্গে ওই শিশুটিও ছিল।
“ওই দিনই হোটেলটির কর্মচারী শাহআলমকে দিয়ে একটি ছুরি কেনেন লিটন। প্রথমে পুষ্পের মাথায় আঘাত করে তাকে অচেতন করে ফেলেন। পরে ছুরি দিয়ে গলাকেটে তার মৃত্যু নিশ্চিত করেন তিনি।”
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, পুষ্পকে হত্যার পর শিশুটিকে নিয়ে প্রথমে পল্টনের ডিলাক্স হোটেলে উঠেন লিটন। পরে তাকে ওই নিঃসন্তান দম্পতির হাতে তুলে দেন।
এরপর গ্রেপ্তার এড়াতে গাজীপুরের শ্রীপুর, মাগুরা ও নরসিংদীর পলাশসহ বিভিন্ন জায়গায় পালিয়ে থাকেন লিটন। পরে প্রযুক্তির সুবিধা ব্যবহার করে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।