নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর নিবন্ধনের মেয়াদ বাড়ানোকে বিষয়ে কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন ইসির দ্বিতীয় কমিশন সভায় সংখ্যা কমানোর এই মতামত এসেছে।
নতুন ইসির এ উদ্যোগকে ইতিবাচক বলে স্বাগত জানিয়েছে পর্যবেক্ষক সংস্থার অনেকে।
ইসির বৈঠকের কার্যপত্রে দেখা যায়, পাঁচ সদস্যের ইসিতে তিনজন নির্বাচন কমিশনার পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর অস্তিত্ব খতিয়ে দেখা, সাংবাদিকদের আলাদা নীতিমালার আওতায় আনা এবং পর্যবেক্ষকদের নজরদারিতে রাখার সুপারিশ করেন।
পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর দেখভালের দায়িত্বে থাকা ইসির জনসংযোগ বিভাগের পরিচালক এস এম আসাদুজ্জামান জানান, ২০১১ সালে ১২০টি পর্যবেক্ষক সংস্থাকে প্রথমবারের মতো নিবন্ধন দেওয়া হয়। পাঁচ বছর নিবন্ধনের মেয়াদ শেষ হয় ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে।
পরবর্তীতে কমিশন তা আরও একবছর বাড়ানোর পর সেই মেয়াদ শেষ হয় গত জানুয়ারিতে। এবছর আরও ছয় মাস মেয়াদ বাড়ানো হয় তাদের।
পর্যবেক্ষক নীতিমালার অধীনে সাংবাদিকদেরও নির্বাচনের দিন পরিচয়পত্র দেয় ইসি।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, নিবন্ধন নিলেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সংস্থা ভোট পর্যবেক্ষণ করে না। যেসব সংস্থা পর্যবেক্ষণ করে, তাদের মধ্যে কিছু সংস্থা নিয়মিত ইসিতে প্রতিবেদন জমা দেয়।
নবম সংসদ নির্বাচনে দেশীয় ৭৫টি সংস্থা ভোট পর্যবেক্ষণে থাকলেও দশম সংসদে তা কমে ৩৫টিতে দাঁড়ায়।
স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে পর্যবেক্ষণকারী সংস্থার সংখ্য আরও কমে আসে। গত বছর নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ১৬টি সংস্থা মাঠে ছিল।
২৮ মার্চের কমিশন সভার কার্যপত্রে দেখা যায়, নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম নিবন্ধিত পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর অস্তিত্ব খতিয়ে দেখার কথা বলেন। ঢালাওভাবে নিবন্ধন না দিয়ে নতুন করে নিবন্ধনের প্রক্রিয়া শুরু করার পক্ষে মত জানান তিনি। সাংবাদিকদের জন্যও নীতিমালা করারও পরামর্শ তিনি দেন।
ইসির সাবেক যুগ্ম সচিব রফিকুল ইসলাম বলেন, দেশি পর্যবেক্ষক হিসেবে পরিচিত সাংবাদিকদের নির্বাচন পর্যবেক্ষণের কোনো নীতিমালা নেই। এ বিষয়ে অবশ্যই নীতিমালা থাকতে হবে এবং তা অনুসরণ করে পর্যবেক্ষণ পাস দিতে হবে।
কার্যপত্রে দেখা যায়, পর্যবেক্ষক হওয়ার সুবিধা কাজে লাগিয়ে যেন কেউ অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে তা নিশ্চিত করার উপর জোর দেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার।
তিনি নিবন্ধিত ১২০ সংস্থার সংখ্যা কমিয়ে অর্ধেকে আনার পক্ষে মত দেন। পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন নির্বাচন কমিশনেও জমা দেওয়ার পক্ষে অবস্থান জানান তিনি।
নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানমও ১২০টি পর্যবেক্ষণ সংস্থা রাখা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। সংস্থাগুলোর কাজ তদারকির সুপারিশও করেন তিনি।
‘ভুঁইফোড় সংস্থাকে বাদ দিতেই হবে’
নির্বাচন কমিশনের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদ (জানিপপ)।
২৫ বছর ধরে কাজ করে আসা সংস্থাটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য নিবন্ধিত হওয়ার পর যারা কাজটি করে না, তাদের রাখার কোনো মানে হয় না।
“যারা নিবন্ধিত তাদের কাজটিও ইসির তদারক করা উচিত। নাম সর্বস্ব সংস্থা রেখে তালিকা লম্বা না করে নিষ্ক্রিয়দের বাদ দিতেই হবে।”
একাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের নামে ‘ভুঁইফোড়’ সংগঠন মাঠে নেমে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
জানিপপ চেয়ারম্যানের মতে, বিভিন্ন ধরনের সুবিধা পাওয়ার আশায় অনেক সংস্থা কমিশনে নিবন্ধিত হয়েছে। কিন্তু আর্থিক বা অন্য কোনো সুবিধা আদায় করতে না পেরে মাঠেও নেই তারা।
২৮টি পর্যবেক্ষক সংস্থার মোর্চা ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের পরিচালক আব্দুল আলীম বলেন, “ইসির কাছে নিবন্ধিত হয়েছে-এমন নাম ব্যবহারের জন্যই অনেকে তালিকাভুক্ত হয়েছে। এভাবে ঢালাও নিবন্ধন দেওয়া সঠিক না। কাজ পর্যালোচনা করে নিষ্ক্রিয়দের বাদ দেওয়ার উদ্যোগ বেশ ভালো।”