হাওরের ছয় জেলায় ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল

বন্যা কবলিত হাওরাঞ্চলের ছয় জেলায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সব কর্মকর্তার ছুটি বাতিল করা হয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 April 2017, 11:46 AM
Updated : 26 April 2017, 11:46 AM

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “ছয় জেলায় আমাদের মন্ত্রণালয়ের সকল কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল করেছি এবং স্ট্যান্ডবাই থাকতে বলেছি। ২৪ ঘণ্টা কাজ করতে নির্দেশনা দিয়েছি।”

এ মাসের শুরুতে অসময়ে টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোণার বিস্তীর্ণ এলাকায় বোরো ধান তলিয়ে যাওয়ায় সর্বস্বান্ত হয়েছেন লাখ লাখ কৃষক।

আকস্মিক বন্যায় বোরো ক্ষেত তলিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি মারা গেছে বিপুল পরিমাণ মাছ ও হাঁস। হাওরের ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারের পক্ষ থেকে ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে।

আগামী বোরো ফসল ঘরে না ওঠা পর্যন্ত সরকার হাওরাঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ দেবে বলে এর আগে জানিয়েছিলেন মন্ত্রী মায়া।

মঙ্গলবার নেত্রকোণায় এক মতবিনিময় সভায় তিনি জানান, হাওরের তিন লাখ ৩০ হাজার পরিবারকে আগামী একশ দিন প্রতি মাসে পরিবার প্রতি ৩০ কেজি চাল ও নগদ পাঁচশ টাকা করে দেওয়া হবে। এজন্য ইতিমধ্যে ৩৫ হাজার মেট্রিক টন চাল ও ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

বুধবারের সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “একটি মানুষও যেন না খেয়ে মারা না যায়, তার জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিয়েছি। আমরা জানি, কৃষকের এই সমস্যা ২-৪ দিন বা ২-৪ মাসের মধ্যে কাটিয়ে উঠা কোনো মতেই সম্ভব না। আগামী ফসল না উঠা পর‌্যন্ত তাদেরকে খাদ্যসহ সব রকমের সাহায্য দেব।

“১০০ দিনের যে কর্মসূচির আওতায় ৬ জেলার ৩ লাখ ৩০ হাজার অতি দরিদ্র পরিবারকে চিহ্নিত করা হয়েছে, এর মূলত কৃষক। এখানে যোগ হবে জেলেরাও। ফলে বাড়বে এই সংখ্যা।”

যাদের অবস্থা অতি দরিদ্রদের চেয়ে ভাল, তাদের জন্য ওএমএসের আওতায় ১৫ টাকা কেজি দরে এক বছর চাল বিতরণ করার উদ্যোগ মন্ত্রণালয় নিচ্ছে বলে জানান মন্ত্রী। এ ছাড়া ১০ টাকা কেজিতে চাল দেওয়ার কর্মসূচিও সেখানে থাকবে বলে তিনি জানান।

‘ঋণের জন্য চাপ দেয়া শুরু করেছে বিভিন্ন এনজিও’

হাওর অঞ্চলের কৃষকদের কাছ থেকে ঋণের কিস্তি আদায়ে জোর না করতে এনজিওগুলোর প্রতি আহ্বান জানালেও তারা তা মানছে না বলে জানান ত্রাণমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “এনজিওরা অনেক জায়গায় চড়া সুদে ঋণ দিয়েছে। তারা বারবার তাদেরকে এই সুদের জন্য চাপ দেওয়া শুরু করেছে। এখন তারা কষ্টে আছেন- তাদের মরার উপর খাঁড়ার ঘা।”

মঙ্গলবার নেত্রকোণায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ অনুষ্ঠানে মন্ত্রী মায়া এবং যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয় হাওরের কৃষকদের কাছ থেকে ঋণের কিস্তি আদায়ে চাপ না দিতে এনজিওগুলোর প্রতি আহ্বান জানান।

আবারও একই আহ্বান জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে মায়া বলেন, “আগামী এক বছর যেন, সুদ নিয়ে কৃষকদের উপর যেন কোন চাপ সৃষ্টি না করে।”

হাওড় অঞ্চলের মানুষরা বিভিন্ন দাবি জানিয়েছে বলে উল্লেখ করেন মন্ত্রী।

দাবিগুলো মধ্যে রয়েছে- কৃষি পুনর্বাসন, বিদ্যুৎ বিল এক বছরের জন্য মওকুফ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শতভাগ শিক্ষার্থীর উপবৃত্তির ব্যবস্থা করা, শিক্ষার্থীদের বেতন মওকুফ করা, বিল-হাওর ইজারামুক্ত করা, বিভিন্ন বিভাগ ও দপ্তরে খালি পদে নিয়োগ, স্বল্প-মধ্য-দীর্ঘ মেয়াদি পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা, সময়মত ফসল রক্ষা বাঁধ মেরামতের ব্যবস্থা, মাছের পোনা অবমুক্তকরণ, নারীদের জন্য বিশেষ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা।

মন্ত্রী বলেন, “এই সব দাবির বিষয়ে আমরা কাজ শুরু করেছি। যেগুলো অন্য মন্ত্রণালয়ের বিষয়, সেক্ষেত্রে আমরা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করব। যেমন, বিদ্যুতের বিল দিতে পারবে না। বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করব।

“তারা বলেছেন, গো-খাদ্য দেওয়ার জন্য। আমাদের মন্ত্রণালয়ের টাকা থেকে গো-খাদ্য কিনে দেওয়ার ব্যবস্থার জন্য বলেছি।”

হাওরের ফসলহানি দেশকে খাদ্য সংকটে ফেলবে কি-না, এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, “আমরা শুধু খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণই না, আমরা খাদ্যে উদ্বৃত্ত দেশ। এই দুর্যোগসহ আগামীতে যদি আরও কোনো দুর্যোগ আসে, আমরা মোকাবেলা করতে সক্ষম।”