পুলিশের অধীন এলিট ফোর্স র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়নের ত্রয়োদশ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আয়োজিত দরবারে সরকারপ্রধান শেখ হাসিনার এ বক্তব্য আসে।
র্যাব সদস্যদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধান করাই আপনাদের মূল লক্ষ্য। আইন-কানুন এবং নিয়ম-নীতি মেনে আপনাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করবেন- এটাই আমাদের প্রত্যাশা”
২০০৪ সালে তৎকালীন বিএনপি-জামায়েত জোট সরকারের সময়ে পুলিশের অধীনে একটি এলিট বাহিনী হিসেবে যাত্রা শুরুর পর ‘বন্দুকযুদ্ধ’ বা ‘ক্রসফায়ারের’ নামে বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগ কখনোই র্যাবের পিছু ছাড়েনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আদেশ পালন করা একটি বাহিনীর সদস্যদের জন্য অবশ্য পালনীয় কর্তব্য। নৈতিক স্খলন যে কোনো বাহিনীর মনোবল দুর্বল করে দেয়।”
এ বাহিনীর সদস্যদের ‘জনগণের সেবক হিসেবে’ দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের সকলের, আপনাদের বেতন-ভাতা জনগণের অর্থে আসে। কাজেই আমরা সকলেই জনগণের সেবক।”
র্যাব সদস্যদের দেশপ্রেম, সততা, কর্তব্যনিষ্ঠা, দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের মনোভাব নিয়ে দায়িত্ব পালনের কথাও বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যের শুরুতেই সিলেটের জঙ্গি আস্তানা ‘আতিয়া মহলে’ অভিযান পরিচালনার সময় বিস্ফোরণে নিহত র্যাবের গোয়েন্দা বিভাগের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদসহ বিভন্ন সময়ে দায়িত্ব পালনকালে নিহত এ বাহিনীর সদস্যদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন।
জঙ্গি দমনে সাফল্য এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকার জন্য র্যাব সদস্যদের ধন্যবাদ জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় র্যাব যথেষ্ঠ সাফল্য অর্জনে সক্ষম হয়েছে। অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার, সন্ত্রাস, জঙ্গি, চরমপন্থি দমনসহ সকল ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে র্যাব অগ্রণী ভূমিকা পালন করে চলেছে।”
জঙ্গিবিরোধী অভিযানে র্যাবের ভূমিকার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “র্যাব সদস্যরা জঙ্গি সংগঠনের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাসহ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক জঙ্গি সদস্যকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করেছে বিপুল পরিমাণ অবৈধ অস্ত্র, বোমা ও বিস্ফোরক দ্রব্য।”
এ অনুষ্ঠানে জঙ্গিবাদকে ‘বিশ্বব্যাপী নতুন উপসর্গ’ হিসেবে বর্ণনা করেন শেখ হাসিনা।
র্যাবসহ সব আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে জঙ্গিবিরোধী বিশেষ অভিযান অব্যাহত রাখার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ ক্ষেত্রে অন্যান্য দেশের চেয়ে বাংলাদেশ ‘কার্যকর ভূমিকা’ রেখেছে।
তিনি বলেন, রংপুরে জাপানি নাগরিক এবং ঢাকায় ইতালীয় নাগরিককে ‘পরিকল্পিতভাবে’ হত্যা করা হয়েছিল দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য।
“ভবিষ্যতে কেউ যেন এ ধরনের কাজ করার সাহস না পায়, সে ব্যবস্থা নিতে হবে।”
সুন্দরবনের জলদস্যুদের আত্মসমর্পণকে ‘যুগান্তকারী পদক্ষেপ’ হিসেবে বর্ণনা করে প্রধানমন্ত্রী এ কাজে র্যাবের ভূমিকার প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, সুন্দরবন এখন একটি ‘নিরাপদ জনপদ’।
তিনি বলেন, “দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের চরমপন্থি দমনেও র্যাব কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছে। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক চরমপন্থিকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। র্যাব তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করেছে বিপুল পরিমাণ অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্র।”
প্রধানমন্ত্রী মানবপাচার বন্ধে র্যাবের ভূমিকার প্রশংসা করেন এবং এ বাহিনীর উন্নয়নে গত ৮ বছরে নেওয়া পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, র্যাব সদরদপ্তর এবং র্যাব ট্রেনিং স্কুলসহ সকল ব্যাটালিয়নের জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। র্যাব সদরদপ্তর, র্যাব-১৩ এবং ১৪ ছাড়া সকল ব্যাটালিয়নের অবকাঠামো নির্মাণ কাজ একনেকের অনুমোদনও পেয়েছে। ২০১৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত র্যাবের বাজেট বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।
তিনি বলেন, “র্যাব জল, স্থল ও আকাশপথে দ্রুত আভিযান কার্যক্রম পরিচালনার সক্ষমতা অর্জন করেছে। পরিণত হয়েছে একটি ত্রিমাত্রিক বাহিনীতে।”
অনুষ্ঠানের আগে প্রধানমন্ত্রী র্যাব সদর দপ্তরে পৌছালে তাকে গার্ড অফ অনার দেওয়া হয়। কোরআন থেকে তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে দরবারের কার্যক্রম শুরু হয়।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বাহিনীর মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ। এরপর র্যাবের বিভিন্ন অভিযান, এ বাহিনীর স্পেশাল ফোর্স এবং সুন্দরবনে জলদস্যুবিরোধী অভিযানের ওপর তিনটি প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। পরে প্রধানমন্ত্রী র্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে ছবি তোলেন এবং প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কেক কাটেন।