হাওর অধিদপ্তরের শীর্ষ ৫ কর্মকর্তার ৪ জনই বিদেশ সফরে

অকাল বন্যায় ফসল নষ্ট হয়ে হাওর অঞ্চলের মানুষের দুর্গতির মধ্যে বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তরের পাঁচ শীর্ষ কর্মকর্তার মধ্যে মহাপরিচালকসহ চারজনই দেশের বাইরে অবস্থান করছেন।

তাবারুল হকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 April 2017, 07:48 PM
Updated : 25 April 2017, 07:53 PM

পরিস্থিতি মোকাবেলায় নেত্রকোণায় মাঠ পর্যায়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের উদাসীনতার চিত্র উঠে আসার পর রাজধানীতে ‘বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তরে’ও একই চিত্র ধরা পড়েছে।

সরকারি একটি কর্মসূচিতে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে এই কর্মকর্তারা কানাডায় অবস্থান করছেন বলে অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালকের দায়িত্বে থাকা উপ-পরিচালক (কৃষি ও মৎস্য) মো. নুরুল আলম জানিয়েছেন।

১৮ এপ্রিল থেকে এক সপ্তাহের জন্য বিদেশ সফরে থাকা এই কর্মকর্তারা হলেন- হাওর ও জলাভূমি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মজিবুর রহমান, পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) মো. নুরুল আমিন,পরিচালক (জলাভূমি) মো. রুহুল আমীন ও উপ-পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) মোহাম্মদ নাজমূল আহসান।

এপ্রিলের শুরুতে টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোণার হাওরের বোরো ধানের ক্ষেত তলিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কয়েক লাখ পরিবার। ধান নষ্ট হওয়ার পর বিষক্রিয়ায় মারা গেছে হাওরের মাছ, সেখানে চরানো হাঁস।

হাওর ও জলাভূমি অঞ্চলের জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা,বন্যা ব্যবস্থাপনা ও অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে জনগণের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করা হাওর ও জলাভূমি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মজিবুর রহমান বিদেশে যাওয়ার আগেই দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেন বলে জানান ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক।

তিনি মঙ্গলবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা দেশের বাইরে গেলেও হাওরের বর্তমান পরিস্থিতিতে হাওরাঞ্চলে কাজ করার ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নিতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না।

হাওর ও জলাভূমি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মজিবুর রহমান

“এখন ডিজিটাল যুগ। ডিজি মহোদয়ের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ হচ্ছে। হাওরে সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ ও দুর্গত মানুষদের সহায়তার জন্যে নেওয়া কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছি আমরা।”

অধিদপ্তরের ৩০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নিয়ে প্রয়োজনীয় সব কাজ করছেন বলে দাবি করেন তিনি।

অধিদপ্তরের শীর্ষ চার কর্মকর্তা নেহাত ‘বাধ্য হয়েই’হাওর উন্নয়ন সংক্রান্ত একটি কর্মসূচিতে অংশ নিতে বিদেশে গেছেন দাবি করে ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক বলেন,“দুই বার সফর সূচি বদলে শেষবার নির্ধারিত সময়ে মন্ত্রণালয়ের টিমের সঙ্গে তারা গেছেন। তাদের অনুপস্থিতিতে কাজের কোনো অসুবিধা হচ্ছে না।”

নেত্রকোণায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা এবং উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলায় করণীয় নিয়ে সোমবার রাতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এক সভায় স্থানীয় কর্মকর্তাদের উদাসীন ও দায়সারা বক্তব্য শুনে ক্ষোভ প্রকাশ করেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রীসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।

হাওর অঞ্চলের মানুষের জীবনমানের উন্নয়নে ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ হাওর উন্নয়ন বোর্ড গঠিত হলেও ১৯৮২ সালে সরকারের এক আদেশে তা বিলুপ্ত হয়।

এরপর ২০০০ সালে আওয়ামী লীগ সরকার আমলে বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন বোর্ড আবার গঠিত হয়। সর্বশেষ ২০১৬ সালের ২৪ জুলাই পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তর গঠিত হয়।

বর্তমানে ঢাকার গ্রীন রোডে এ অধিদপ্তরের কার্যালয়।