সুপ্রিম কোর্ট থেকে ভাস্কর্য সরাতে হবে না কেন: হাসিনা

সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে ভাস্কর্য সরানোর পক্ষে নান্দনিকতার পাশাপাশি পাশে ঈদগাহের অবস্থানকে যুক্তি দেখিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 April 2017, 06:23 PM
Updated : 25 April 2017, 11:04 AM

গত ১১ এপ্রিল তিনি ওই ভাস্কর্য সরানোর পক্ষে মত দেওয়ার পর থেকে দেওয়ার পর থেকে তা নিয়ে সমালোচনা চলছে।

সোমবার গণভবনে দলের এক সভায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “সরাতে হবে কেন-এটা নিয়ে চিৎকার।

“সরাতে হবে না কেন? তারা কি দেখছেন না; গ্রিক আর এখন গ্রিক নাই। এটা অর্ধ গ্রিক, অর্ধ বঙ্গ। বঙ্গগ্রিক হয়ে গেছে ওটা। এটা কি উনাদের চোখে পড়েনি?”

রোমান যুগের ন্যায়বিচারের প্রতীক ‘লেডি জাস্টিস’র আদলে একটি ভাস্কর্য কিছুদিন আগে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত প্রাঙ্গণে স্থাপন করা হয়।

এরপর থেকে হেফাজতসহ কয়েকটি ইসলামী সংগঠন তার বিরোধিতায় নামে। হেফাজত এই ভাস্কর্য সরানোর দাবি জানিয়ে সরকারকে ৫ মে মতিঝিলে ফের সমাবেশের হুমকি দেয়। ওলামা লীগও তা অপসারণের দাবি জানায়।

এরপর ১১ এপ্রিল হেফাজতের আমির শাহ আহমদ শফী নেতৃত্বাধীন এক দল ওলামার সঙ্গে গণভবনে বৈঠকে শেখ হাসিনা ভাস্কর্যটি সরাতে পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।

সোমবারের সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এটা হল গ্রিক গডেস অফ জাস্টিস.. থেমেসিস। গ্রিক স্ট্যাচুকে যখন শাড়ি পরিয়ে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হলো.. সেটাই চিফ জাস্টিসকে বলেছিলাম, এই গ্রিক স্ট্যাচুতে আপনি শাড়ি পরাতে গেলেন কেন?”

“গ্রিক স্ট্যাচুকে বিকৃত করতে হবে কেন? নিজে কত লম্বা, পাল্লাটা কত লম্বা.. ঠিক ঠিকানা নাই। বানিয়ে খাড়া করে দিল। গ্রিককে এখন বাঙালি বানানো হল।”

ভাস্কর মৃণাল হকের সঙ্গেও এই বিষয়ে কথা বলেছেন বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

এই রকম ভাস্কর্য স্থাপন নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, “স্ট্যাচু আমাদের দেশে বহু আছে, থাকবে। কিন্তু হাই কোর্টের মতো জায়গায় একটা স্ট্যাচু করা হবে .. এটা তো হাজার হাজার বছরের পুরনো, সব দেশে তো এটা নাই। আমাদের দেশে হঠাৎই এটা বানাতে হবে কেন?”

সুপ্রিম কোর্টের সামনেই ঈদগাহ থাকার বিষয়টি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “লাগানো যখন হয়েছে.. এখানে অসুবিধা হলো, ঈদগাহ। সেখানে আমাদের ঈদের নামাজ হয়। ঠিক সেই সময়টা সামনে এসে পড়ে। সকলের মন মানসিকতা তো এক না। নামাজের সময় এটা চোখে পড়বে।”

সেখানে এধরনের ভাস্কর্য স্থাপনে নিজের আপত্তির কথা জানিয়ে তা সরানোর প্রক্রিয়ার কথা কবলেন তিনি।

“সেটা যাতে চোখে না পড়ে আড়াল করে দেওয়া অথবা রিমুভ করা।”

এনিয়ে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আলোচনার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “চিফ জাস্টিসকে প্রকাশ্যে বলিনি। তার সাথে যখন দেখা হয়েছে, তাকে বলেছি। এটা ঠিক হয়নি।

“এটা করতে হলে চিফ জাস্টিসের সকলের সঙ্গে আলোচনা করা উচিৎ ছিল। কোন জায়গাটায় এটা বসবে, সেটাও দেখা উচিত ছিল।”

বাল্যবিয়ে

বাল্যবিয়ে নিরোধ আইন পরিবর্তন করে অপ্রাপ্তবয়স্কদের বিশেষ ক্ষেত্রে বিয়ের সুযোগ রাখার সমালোচনার জবাবও দেন প্রধানমন্ত্রী। 

“বিবাহের বয়স নির্ধারণ করা.. এটা কিন্তু আমি ব্রিটিশ আইন থেকে নিয়েছি। ব্রিটিশ বিধানে এটা দেওয়া আছে। ব্রিটিশ অস্ট্রেলিয়াসহ যেখানেই আইন করা হয়েছে, সেখানেই এই বিশেষ বিধানটা.. বিবাহের বয়সের ক্ষেত্রে আছে।”

যুক্তরাষ্ট্রের কোনো কোনো অঙ্গরাজ্যে বিয়ের সর্বনিম্ন বয়স ১৩ থাকার কথাও জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “১৩ বছর আছে, ১৪ বছরও আছে। যারা আলোচনা করছেন; তারা জানেন কি না, আমি জানি না। না জেনেই নানা কথা বলে বেড়াচ্ছেন।”

এই আইনের পক্ষে আগের যুক্তিই তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমাদের দেশের গ্রামের বাস্তবতা জেনেই এবং সামাজিক মূল্যবোধটাকে মাথায় রেখেই এই আইন.. সাথে সাথে বিশেষ বিধানটা করা হয়েছে।

“এটা নিয়ে চেঁচামেচি করার কিছু নাই। যারা করছেন; তারা গ্রামে যায় নাই। গ্রামে থাকে নাই। গ্রামের পরিবারের সমস্যা সম্পর্কে কোনো ধারণাই নাই। ঢাকা শহরে এয়ার কন্ডিশনে বসে নানা ধরনের উর্বর চিন্তা করা যায়।”