কওমির ১৪ লাখ শিক্ষার্থীর স্বার্থেই সনদের স্বীকৃতি: প্রধানমন্ত্রী

সমালোচনার জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ১৪ লাখ শিক্ষার্থীর কথা ভেবেই কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ সনদকে সাধারণ শিক্ষার স্নাতকোত্তর ডিগ্রির সমান স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 April 2017, 06:03 PM
Updated : 24 April 2017, 06:55 PM

সম্প্রতি সরকার কওমি মাদ্রাসার দায়েরায়ে হাদিসকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রির সমান মর্যাদা দেওয়ার পর তা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা চলছে।

গণভবনে সোমবার আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার নির্বাচন মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠকের শুরুতে শেখ হাসিনা কওমির সনদের স্বীকৃতির প্রসঙ্গ তুলে বলেন, “তাদের কী মূল স্রোতধারায় নিয়ে আসব না?

“তারা যে কারিকুলামেই পড়ুক না কেন; তারা যেন জীবন-জীবিকার সুযোগটা পায়, সেটা তো আমাদের দেখতে হবে, তাদের অধিকারটা আমাদের সংরক্ষণ করতে হবে।”

বাংলাদেশের প্রায় ৭৫ হাজার কওমি মাদ্রাসা থেকে প্রতি বছর ১৪ লাখ শিক্ষার্থী বের হচ্ছে। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এই ১৪ লাখ শিক্ষার্থী এখান থেকে বেরুচ্ছে; তাদের সার্টিফিকেটের কোনো মূল্য নেই, কোথাও তারা কাজ পায় না। না দেশে পায়, না বিদেশে পায়। কোনো কিছু করে খেতে পারে না।

“তাদের জীবনটা কি আমরা ভাসিয়ে দেব? তারা কি এদেশের নাগরিক না? তারা কি এদেশের মানুষ না? তাদের জীবনের কি কোনো মূল্য নাই ? তাদের কি আমরা অন্ধকারে ঠেলে দেব? তাদের কি আমরা আলোর পথ দেখাব না?”

এনিয়ে সমালোচকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “কথায় কথায় তো সবাই ‘ইনক্লুসিভ-ইনক্লুসিভ’ এই শব্দ খুব ব্যবহার করে। আমিও বলব, কওমি মাদ্রাসার ১৪ লাখ শিক্ষার্থী বাইরে পড়ে ছিল; তাদের আমরা ইনক্লুসিভ শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে আনতে চাই।” 

প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর গত ১১ এপ্রিলের ঘোষণার পর কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ সনদকে সাধারণ শিক্ষার স্নাতকোত্তর ডিগ্রির স্বীকৃতি দিয়ে আদেশ জারি করেছে সরকার।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ থেকে প্রকাশিত গেজেটে বলা হয়, “কওমি মাদ্রাসার বৈশিষ্ট্য বজায় রেখে ও দারুল উলুম দেওবন্দের মূলনীতিসমূহকে ভিত্তি ধরে কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিসের সনদকে মাস্টার্স (ইসলামিক স্টাডিজ এবং আরবি) এর সমমান দান করা হল।”

প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণাকে হেফাজতে ইসলামের মতো ইসলামী দলগুলোর কাছে নতি স্বীকার হিসেবে দেখছে বিভিন্ন দল। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, শেখ হাসিনা ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করছেন।

শেখ হাসিনা বলেন, “আমি না কি হেফাজতের সাথে সন্ধি করে ফেলেছি। চুক্তি করে ফেলেছি। চুক্তিটা কী করলাম? হেফাজতের সাথে আমাদের তো কোনো চুক্তি হয়নি। চুক্তির প্রশ্নই ওঠে না।” 

বাংলাদেশে শিক্ষার ক্ষেত্রে কওমি মাদ্রাসার অবদান রয়েছে উল্লেখ করে দেওবন্দীদের ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের কথা তুলে ধরেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।

“দেওবন্দ .. যে কওমি মাদ্রাসা, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে যারা প্রথম .. ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন শুরু করে; এই দেওবন্দ কওমি মাদ্রাসাটা কিন্তু তাদের হাতে তৈরি।” 

ভারতের মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সেখানকার যে কারিকুলাম, ভারত কিন্তু গ্রহণ করে। ভারতে যদি আপনারা খবর নেন, দেখবেন.. সেখানে কলকাতার মাদ্রাসাগুলি আছে, সেখানে হিন্দু-মুসলমান সকলেই কিন্তু পড়াশোনা করে। অন্তত ৪০ ভাগ হিন্দু শিক্ষার্থী সেখানে আছে। এরকমও মাদ্রাসা সেখানে আছে।” 

বাংলাদেশের কওমি মাদ্রাসাগুলোতে আরবি, পারসি, উর্দু শেখানোর পাশাপাশি কম্পিউটার শিক্ষাও রয়েছে বলে জানান তিনি।

“একবার চিন্তা করে দেখেন; ১৪ লাখ শিক্ষার্থী ৭৫ হাজার কওমি মাদ্রাসায় শিক্ষা গ্রহণ করে। তাদের কারিকুলাম কী, কী তারা শিখছে- এর কোনো কিছু কেউ সঠিকভাবে বলতেই পারে না।”

কওমি মাদ্রাসায় পড়েও যেন এই শিক্ষার্থীরা চাকরি পেতে পারে, সেজন্য এই উদ্যোগ বলে জানান তিনি।

২০০৯ সালে সরকার গঠনের পরই এই উদ্যোগ গ্রহণের কথা মনে করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা ওলামাদের নিয়ে কমিশন গঠন এবং সনদ দেওয়ার জন্য আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কথাও উল্লেখ করেন।

“দীর্ঘদিন পর ছয়টা কওমি মাদ্রাসা এক হয়েছে, তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা নীতিগতভাবে সিদ্ধান্তে এসেছে; তারা কারিকুলামটা গ্রহণ করবে। তারা যখন এই সিদ্ধান্তে উপনীত হলেন, তখনই আমরা ঘোষণা দিলাম সনদ দেব।”

দাওরায়ে হাদিসের সনদকে মাস্টার্সের সমমান দেওয়ার লক্ষ্যে কওমি মাদ্রাসা বোর্ডগুলো কর্তৃক গঠিত মান বাস্তবায়ন কমিটির উপর ‘আস্থাভাজনপূর্বক’ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান শাহ আহমদ শফীকে চেয়ারম্যান করে একটি কমিটিও গঠন করে দিয়েছে সরকার।

এই কমিটির অধীনে ও তত্ত্বাবধানে দাওরায়ে হাদিসের পরীক্ষা হবে।

কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা সংক্রান্ত খবর