বিএনপির কাছে হাওর দূষণের প্রমাণ চাইলেন প্রধানমন্ত্রী 

সুনামগঞ্জে হাওরের পানিতে তেজষ্ক্রিয় দূষণে মাছ ও জলজ প্রাণী মারা যাচ্ছে বলে বিএনপির দাবির সপক্ষে প্রমাণ চেয়েছেন  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 April 2017, 04:12 PM
Updated : 24 April 2017, 05:38 PM

সোমবার সন্ধ্যায় গণভবনে স্থানীয় সরকার নির্বাচন মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, “আমি বলব, তারা যে কথাটা বলছে; সেটার প্রমাণ নিয়ে উপস্থিত হোক।

“এটা বৈজ্ঞানিক বিষয়, এটা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণ হবে। ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করা হবে। তারা ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করে এভাবে দেখাতে পারলে; জনগণ বিশ্বাস করবে। না হলে, তাদের এই মিথ্যা অপপ্রচারে জনগণ কখনো কান দেবে না। অযথা মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে।”

সম্প্রতি অসময়ের ঢলে তলিয়ে যায় সিলেট অঞ্চলের বিভিন্ন হাওর। হাওরে মাছ ও হাঁসের মরে ভেসে থাকার খবর আসার পর ইউরেনিয়াম দূষণের সন্দেহের কথাও আসে।

এর পরিপ্রেক্ষিতে পরমাণু শক্তি কমিশনের একটি দল সুনামগঞ্জের হাওরের পানি পরীক্ষা করে রোববার জানায়, সেখানে ইউরেনিয়াম  দূষণের কোনো প্রমাণ তারা পায়নি। পানিতে তেজষ্ক্রিয়তার মাত্রাও স্বাভাবিকের চেয়ে কম।

সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আনবিক শক্তি কমিশনের তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, “হাওর অঞ্চলে অকাল বন্যার পানির সাথে উজানের ইউরোনিয়াম খনির বর্জ্য ভেসে আসার ফলে জলজ প্রাণীর মড়ক ধরেছে। গণমাধ্যমসহ ফেইসবুকে এই বিষয়টি এসেছে। সরকার যে তদন্ত করেছে, তাতে সেখাকার পানি পরীক্ষা ছাড়াই বলা হচ্ছে যে, কোনো তেজষ্ক্রিয়তা নেই।”

তদন্তে অনাস্থা জানিয়ে রিজভী বলেন, “এই সরকারের কোনো তদন্তই জনগণ বিশ্বাস করে না। পার্শ্ববর্তী দেশের সরকার বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের এতই অকৃত্রিম বন্ধু যে বাংলাদেশের প্রতি ভারতের যে কোনো অন্যায়কে এরা অন্যায় বলে মনে করে না।”

বিএনপির বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, “কিছু লোক আছে, জ্ঞানপাপী। তারা দেখেও, না দেখেও বা উদ্দেশ্যমূলকভাবে নানা কথা বলে বেড়াবে।”

প্রধানমন্ত্রী আবহাওয়ার বিরূপ আচরণের কথা তুলে ধরে তার বক্তব্যে বলেন, “আমরা দেখতে পাচ্ছি; কিছু আগাম বন্যা ও বর্ষা শুরু হয়ে গেছে। ফলে, হাওর অঞ্চলে মানুষের দুর্ভোগ.. সেখানে বাঁধ ভেঙে গেছে, সেখানে ক্ষেতের ফসল নষ্ট হচ্ছে।”

“হাওর অঞ্চলে এটা সব সময় হয়ে থাকে। তবে, ২০০৯-এ সরকার গঠনের পর থেকে এত খারাপ পরিস্থিতি হয়নি। এটা প্রকৃতির নিয়ম, প্রাকৃতিকভাবে এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে।”

বন্যার্তদের সহায়তায় সরকারের নেওয়া ব্যবস্থার কথা মনে করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন,  “আমরা এ ব্যাপারে চুপ করে বসে নেই। প্রত্যেকের জন্য ৩০ কেজি করে চাল ও ৫০০ করে টাকা নির্দিষ্ট করে দিয়েছি।  প্রশাসনের কর্মকর্তারা সেখানে যথেষ্ট সজাগ এবং তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা সেখানে নিচ্ছে।”

সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী হাওরাঞ্চলে ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ ও পুর্নবাসনে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর তৎপরতা বাড়ানোর নির্দেশ দেন।

হঠাৎ এই বন্যা নিয়ে বিরূপ প্রচারণার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “তবে, কিছু প্রচার-প্রপাগান্ডা আমরা দেখতে পাচ্ছি।

“বিএনপির কোন এক নেতা মহাজ্ঞানী, মহাবিজ্ঞানী বলে দিলেন, ভারত থেকে ইউরেনিয়াম এসে এই অঞ্চলের মাছ মেরে ফেলছে।”

পরমাণু শক্তি কমিশনের একটি দলের সুনামগঞ্জের হাওরের পানি পরীক্ষা করার বিষয়টি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “অভিযোগটা যখন আসলো.. আমরা কিন্তু বসে ছিলাম না। অ্যাটমিক এনার্জি থেকে বিশেষজ্ঞ পাঠিয়ে সেখানকার পানি পরীক্ষা করা হলো। তারা বললো, এখানে এ ধরনের কিছু পাওয়া যায় নাই।”

বিএনপির সংবাদ সম্মেলন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এই কথা শোনার পরও তারা প্রেস কনফারেন্স করে এই কথাটা বলে বেড়াচ্ছে। এর অর্থটা কী দাঁড়াচ্ছে? তাদের কী প্রমাণ আছে ?” 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যখন একটা ফ্লাশ ফ্লাড হয়, তখন মাছ বা জলজ প্রাণী মারা যায়। এটাও কেন মারা যাচ্ছে; সে বিষয়টাও আমরা খবর নিচ্ছি।”

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যের শুরুতেই নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়ার কথা উল্লেখ করে বলেন, “আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় নির্বাচন যে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়; সেটা আমরা প্রমাণ করতে পেরেছি। যে কারণে.. পৌরসভা, মেয়র বা সিটি করপোরেশন ইলেকশনে আমাদের প্রার্থী হেরে গেছে, বিএনপি প্রার্থী জিতেছে, কোথাও আমরা জিতেছি। কিন্তু, কোথাও অস্বাভাবিক ঘটনা আমরা ঘটতে দিইনি।”