হাজিরা দিতে দুই সপ্তাহ পেলেন মুসা

বিলাসবহুল গাড়িতে শুল্ক ফাঁকি ও মুদ্রাপাচার সংক্রান্ত তদন্তকাজে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তরে হাজিরা দিতে দুই সপ্তাহ সপ্তাহ সময় পেয়েছেন বিতর্কিত ব্যবসায়ী মুসা বিন শমসের।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 April 2017, 07:03 PM
Updated : 7 May 2017, 11:02 AM

পক্ষাঘাতগ্রস্ত থাকার কারণ দেখিয়ে হাজিরার জন্য সময় আবেদন করায় তার হাজিরার সময় পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে বলে শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের মহাপরিচালক মইনুল খান জানিয়েছেন।

তিনি শনিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মুসা বিন শমসেরের আবেদনটি পরীক্ষা করে তাকে দুই সপ্তাহ সময় দিয়ে নোটিশ ইস্যু করা হয়েছে। আগামী ৭ মে বিকাল ৩টায় তাকে অধিদপ্তরে হাজির হতে বলা হয়েছে।

শুল্ক ফাঁকি দিয়ে বিলাসবহুল গাড়ি ব্যবহারেরর ঘটনায় মুসা বিন শমসেরকে ২০ এপ্রিল বিকাল ৩টায় শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তরে হাজির হতে নোটিশ দেওয়া হয়েছিল।

তার একদিন আগে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে স্বশরীরে হাজির হতে সময় আবেদন করেন মুসা।

মইনুল খান বলেন, “তার (মুসা) আবেদনে হাজিরার সময় পুনর্নির্ধারণ করা হল।”

গত ২১ মার্চ ধানমণ্ডির একটি বাড়ি থেকে মুসার রেঞ্জ রোভার গাড়ি জব্দ করে শুল্ক গোয়েন্দারা। গোয়েন্দাদের চোখ ফাঁকি দিতে গাড়িটির রংও বদলে ফেলা হয়েছিল। গাড়িটি জমা দিতে মুসাকে নোটিস দেওয়া হলেও সেটি লুকিয়ে ফেলা হয়েছিল।

শুল্ক গোয়েন্দারা গুলশান ২ নম্বর সেকশনের ১০৪ নম্বর রোডের মুসার বাড়িতে গাড়িটি থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছিলেন বাড়ির সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ দেখে। কিন্তু ওইদিন সকালেই সকালে গাড়িটি অন্য স্থানে সরিয়ে ফেলেন তিনি।

মুসা বিন শমসেরের জব্দ করা গাড়িটি

গাড়িটিতে করে সকালে নাতিকে ধানমণ্ডির স্কুলে পাঠান মুসা। দুপুরে শুল্ক গোয়েন্দারা বাড়িতে অভিযান চালানোর পর গাড়িটি আর বাড়িতে আনা হয়নি। নাতিকে অন্য একটি গাড়িতে করে বাসায় আনা হয়।

শুল্ক গোয়েন্দার দল গাড়ির খোঁজ করতে করতে ধানমণ্ডির ৬ নম্বর সড়কের ৫১/এ নম্বর বাড়িতে রাখা অবস্থায় গাড়িটি পায়।

গাড়িটি যখন উদ্ধার করা হয়, তখন এটি ছিল কালো রঙের। তবে নথিপত্র দেখে এর রঙ সাদা ছিল বলে শুল্ক গোয়েন্দারা নিশ্চিত হন।

গাড়িটি ভোলা বিআরটিএ থেকে ভুয়া বিল অব এন্ট্রি দিয়ে মো. ফারুকুজ্জামানের নামে রেজিস্ট্রেশন করানো হয় জানান শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মইনুল খান।

“মুসা গাড়িটি শুল্কমুক্ত সুবিধার অপব্যবহার এবং জালিয়াতি করে অন্যের নামে রেজিস্ট্রেশন করেন। তিনি নিজেই গাড়িটি ব্যবহারকারী। এতে সরকারের দুই কোটি ৪৮ লাখ কোটি টাকা শুল্ক ফাঁকি হয়েছে।”

এ ঘটনায় সংঘটিত কাস্টমস অপরাধ তদন্তের প্রয়োজনে বিভিন্ন গণমাধ্যমে ‘প্রিন্স মুসা’ হিসেবে পরিচিত বিতর্কিত এ ব্যবসায়ীকে তদন্ত দলের কাছে হাজির হতে নোটিশ দেওয়া হয় ২৩ মার্চ।

এর প্রেক্ষাপটে করা সময়ের আবেদনে মুসা ‘ফেসিয়াল পালসি অ্যান্ড ডায়াবেটিস মেলিটাস উইথ ইসকেমিক হার্ট ডিজিজ’ এ আক্রান্ত বলে উল্লেখ করেন।

‘মুখের ডানপাশ আংশিক প্যারালাইজড বা পক্ষাঘাতে জর্জরিত’ থাকায় ঠিকমত কথাও বলতে পারছেন না বলে আবেদনে বলেন তিনি।

আবেদনের সঙ্গে তিনি স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক কাজী দ্বীন মোহাম্মদ ও প্রফেসর এমএ আজহারের কাছ থেকে নেওয়া শারীরিক অসুস্থতার সনদও যুক্ত করেন।

মুসা বিন শমসেরের সম্পদ নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনও তদন্ত চালাচ্ছে।

১৯৫০ সালের ১৫ অক্টোবর ফরিদপুরে জন্ম নেয়া মুসা ড্যাটকো গ্রুপের মাধ্যমে জনশক্তি রপ্তানির ব্যবসা শুরু করেন। তবে তার পরিচিতি তুলে ধরতে গিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলো অস্ত্র ব্যবসার কথাই আগে আনে। ১৯৯৭ সালে যুক্তরাজ্যে নির্বাচনে লেবার পার্টির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী টনি ব্লেয়ারের নির্বাচনী প্রচারের জন্য ৫ মিলিয়ন ডলার অনুদান দেওয়ার প্রস্তাব দিয়ে আলোচনায় আসেন বাংলাদেশের এই ব্যবসায়ী।

একটি দৈনিকে সুইস ব্যাংকে মুসা বিন শমসেরের ৫১ হাজার কোটি টাকা থাকার খবর ছাপা হয়েছিল। তবে দুদকে জিজ্ঞাসাবাদের পর গত বছর মুসা সাংবাদিকদের বলেছিলেন, বাংলাদেশে বসে কেউ এত অর্থ উপার্জন করতে পারবে না।

মুসার বিরুদ্ধে একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনীকে সহায়তা করার অভিযোগও রয়েছে, যার অনুসন্ধান করছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। 

সম্প্রতি তার ‘যুদ্ধাপরাধের তথ্য’ সম্বলিত নথি তদন্ত সংস্থার কাছে হস্তান্তর করেছেন সাংবাদিক সাগর লোহানী ও প্রবীর সিকদার।

তবে মুসার দাবি, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে বন্দি ছিলেন তিনি।