শিল্পকলা একাডেমিতে লোককবি আবদুল হাই মাশরেকী স্মরণে সাংস্কৃতিক উৎসবের উদ্বোধনের পাশাপাশি মঞ্চায়ন হয় নৃত্যনাট্য ‘মহুয়া’র, ছিল একাডেমির কর্মচারী ইউনিয়নের নাট্যোৎসবের ঘোষণাও।
এছাড়া জাতীয় জাদুঘরের মিলনায়তনে গান কবিতার যুগলবন্দি আয়োজনের পাশাপাশি জাতীয় গণগন্থাগারের মিলনায়তনেও ছিল আবৃত্তির অনুষ্ঠান।
আবদুল হাই মাশরেকী স্মরণে সাংস্কৃতিক উৎসব
লোক কবি আবদুল হাই মাশরেকীর ৯৮তম জন্মদিনে রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে শুরু হয়েছে দুই দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক উৎসব।
শনিবার বিকালে একাডেমির সংগীত ও নৃত্যশালা মিলনায়তনে এ উৎসবের আয়োজন করে লোককবি আবদুল হাই মাশরেকী গবেষণা কেন্দ্র।
উদ্বোধনীতে অতিথি ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম। ড. আফসারুজ্জামানের সভাপতিত্বে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন কবিপুত্র নঈম মাশরেকী।
অনুষ্ঠানের শুরুতে কবির ‘হে আমার দেশ’ কবিতা থেকে নেওয়া বাণী ‘এবার জাগাও মোরে’ স্মারক উদ্বোধন করেন তারানা হালিম।
“তার সংগীত ও কাব্য মানুষের ভেতরে নাড়া দিয়েছে, তেমনি রচিত হয়েছে দেশাত্মবোধ ও দেশমাতৃকার জন্য মমত্ববোধ-লালন পালনের শিক্ষার বাণী। আবদুল হাই মাশরেকী ছিলেন জীবনবোধের আদর্শ কবি।”
সমাজ ও দেশ চেতনাবোধ থেকে কবি লিখেছেন ‘বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতার জারি’ এবং ‘দুখু মিয়ার জারি’।
প্রধান বক্তা আমিনুর রহমান সুলতান বলেন, “মানবিকবোধ ও মূল্যবোধ জাগ্রত থাকার পাশাপাশি অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে প্রতিটি কবিতায় প্রতিবাদী শব্দ উচ্চারণ করেছেন।”
বক্তারা বলেন, আবদুল হাই মাশরেকী ছিলেন সাধারণ মানুষের নিত্যদিনের হাসি কান্না, সুখ-দুঃখ, বিরহ-বেদনা, আনন্দ-মিলন, আশা-আকাঙ্ক্ষার রূপকার। তিনি ছিলেন খেটে খাওয়া মানুষের জীবনবোধের আদর্শ কবি। গ্রামের মাটির সোঁদা ঘ্রাণ আর শ্রমজীবী মানুষের গায়ের ঘাম তার কাব্যে পাওয়া যায়। তার প্রতিটি লেখনী বাংলা সাহিত্যেও শিকড়।
তরুণ প্রজন্মের মধ্যে আবদুল হাই মাশরেকীর জীবন-আদর্শকে ছড়িয়ে দিতে তার উপর গবেষণা কাজ আরও গতিশীল করার আহ্বান জানান।
এরপর অনুষ্ঠানে আজীবন সম্মাননা জানানো হয়-কবি অসীম সাহা, গীতিকবি ফজল-ই-খোদা, অভিনেতা শংকর সাঁওজাল, আবৃত্তিশিল্পী ভাস্বর বন্দোপাধ্যায়, লোকসংগীত গবেষক রফিকুল হক ঝন্টুকে।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বাংলা একাডেমির উপপরিচালক আমিনুর রহমান সুলতান, কবি অসীম সাহা, গীতিকবি ফজল-ই-খোদা, অভিনেতা শংকর সাঁওজাল, লোকসংগীত গবেষক রফিকুল হক ঝন্টু, লোককবি আবদুল হাই মাশরেকীর গবেষণা কেন্দ্রের সহসভাপতি নাসির উল্লাহ ভুঁইয়া।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে কবির গান শোনান বেতার, টিভি ও নারায়ণগঞ্জের শিল্পীরা।
শিল্পকলা একাডেমির কর্মচারী ইউনিয়নের নাট্যোৎসব
শিল্পকলা একাডেমির কর্মচারী ইউনিয়নের ৩৭ বছর পূর্তি উপলক্ষে ২৪ এপ্রিল থেকে শুরু হচ্ছে পাঁচ দিনব্যাপী নাট্যোৎসব।
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এবং শিল্পকলা একাডেমির সহযোগিতায় ১০টি নাট্যদলের ১০টি প্রযোজনা মঞ্চস্থ হবে এ উৎসবে। উৎসবের ভেন্যু হিসেবে থাকছে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তন ও এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে। উৎসব শেষ হবে ২৮ এপ্রিল।
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি এস এম সালাউদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী, বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল আকতারুজ্জামান এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সচিব জাহাঙ্গীর হোসেন চৌধুরী।
‘শিল্প-সংস্কৃতি-সৃজনশীলতা, জয় জয় জয় মানবতা’ শিরোনামে নাট্যোৎসবটি উৎসর্গ করা হচ্ছে সদ্যপ্রয়াত সুরস্রষ্টা লাকী আখন্দকে।
উৎসবের মূল হলে ২৪ এপ্রিল মঞ্চস্থ হবে থিয়েটারের নাটক ‘মেরাজ ফকিরের মা’, এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে মঞ্চস্থ হবে মহাকাল নাট্যসম্প্রদায়ের ‘শিখন্ডী কথা’।
উৎসবে অংশ নেবে নাট্যকেন্দ্র, নাগরিক নাট্যাঙ্গন, থিয়েটার আর্ট ইউনিট, প্রাঙ্গণেমোর, লোক নাট্যদল (সিদ্ধেশ্বরী), সুবচন নাট্য সংসদ, আরণ্যক নাট্যদল, প্রাচ্যনাট।
জাদুঘরে গান-কবিতার যুগলবন্দী
শনিবার গান ও কবিতার এই যুগলবন্দী পরিবেশনাটি হয় জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে। গান-কবিতায় সাজানো অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে ইন্দিরা গান্ধী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র (আইজিসিসি)।
শামা রহমান শুরুতেই গেয়ে শোনান ‘ধায় যেন মোর সকল ভালোবাসা/প্রভু, তোমার পানে, তোমার পানে, পানে’। দ্বিতীয় গানে শিল্পী বলে যান অপার আনন্দের কথা; গেয়ে শোনান ‘বহে নিরন্তর অনন্ত আনন্দধারা’। তৃতীয় গানে কণ্ঠে তুলে নেন ভালোবাসায় সৃষ্ট রাগ-অনুরাগের ভাষাটি; গেয়ে শোনান ‘গভীর বিরহ মধুর হল আজি মধুরাতে/ গভীর রাগিণী উঠে বাজি বেদনাতে’।
এরপর শিল্পী একে একে গেয়ে শোনান ‘বিপুল তরঙ্গরে’, ‘ছায়া ঘনাইছে বনে বনে’, ‘মেঘের পরে মেঘ জমেছে’সহ বেশকিছু গান।
নৃত্যালোকের ‘মহুয়া’
আবহমান বাঙালি সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ ‘ময়মনসিংহ গীতিকা’। মধ্যযুগে এ সাহিত্যে দ্বীজ কানাই রচনা করেন অপরূপ পালা ‘মহুয়া’। বিভিন্ন সময় নানা আঙ্গিকে মহুয়া মঞ্চস্থ হয়েছে দেশ-বিদেশের মঞ্চে।
এবার নৃত্য সংস্থা নৃত্যালোকের প্রতিষ্ঠার রজতজয়ন্তী উপলক্ষে শনিবার নৃত্যনাট্য হিসেবে মঞ্চস্থ হলো ‘মহুয়া’।
শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে এ মঞ্চায়ন হয়। নৃত্যনাট্যটির ভাবনা ও পরিচালনায় ছিলেন কবিরুল ইসলাম রতন।
‘মহুয়া’ চরিত্রে রূপ দিয়েছেন সাদিয়া ইসলাম মৌ ও নদের চাঁদের চরিত্রে রূপ দিয়েছেন কবিরুল ইসলাম রতন। এছাড়া ‘হোমরা বেদে’সহ বিভিন্ন চরিত্রে রূপ দিয়েছেন রহমত আলী, দীপা খন্দকার, গোলাম মোস্তফা খান, শামীম ফরহাদ, আজিজ রেজা, লিখন রায়।
‘শব্দরথে অভিযাত্রী’
শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর জাতীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তনে স্রোত আবৃত্তি সংসদ আয়োজন করে আবৃত্তি প্রযোজনা ‘শব্দরথে অভিযাত্রী-৬’। এতে আবৃত্তি করেন মাসুদুজ্জামান, তাপস হাওলাদার, আজিম রানা ও প্রজ্ঞা হক।
পরিবেশিত সব কবিতার ধরণ অনুযায়ী অনুষ্ঠানটিকে তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত করা হয়। পর্যায়গুলো হল- ‘প্রকৃতি ও প্রেম’ , ‘সংগ্রাম ও দ্রোহ’ ও ‘সমাজ ও বোধ’।
শিল্পী মাসুদ্জ্জুামান পরিবেশন করেন ‘ছুটির আয়োজন’, ‘হলদিঘাট’, ‘স্বাধীনতা তুমি’, ‘জন্মের আগেই আমি মৃত্যুকে করেছি আলিঙ্গন’-সহ মোট নয়টি কবিতা। শিল্পী তাপস হাওলাদার পরিবেশন করেন নদী, ১৬ ডিসেম্বর বিজয় পর্ব, পাহাড় চূড়াসহ সাতটি কবিতা। শিল্পী আজিম রানা ও প্রজ্ঞা হক দ্বৈতসহ আবৃত্তি করেন আরো ১১টি কবিতা।