কষ্ট চেপে হাস্যরস রাষ্ট্রপতির

বিভিন্ন সময় সরস বক্তব্য দেওয়াটা রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের জন্য নতুন কিছু নয়। আবারও শ্রোতাদের মাতালেন তিনি। তবে বরাবরের মতো হাস্যরস করলেও তার সঙ্গে মিশে ছিল কিছুটা কষ্ট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 April 2017, 01:06 PM
Updated : 19 April 2017, 01:16 PM

বুধবার ময়মনসিংহের ত্রিশালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যের এক পর্যায়ে স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে কথা বলার শুরুতে অনুষ্ঠানস্থলে হাততালি আর হাসির রোল পড়ে।

রসাত্মক কিছু শোনা যাবে- এমন আশায় সবাই নড়েচড়ে বসলেও পরক্ষণেই রাষ্ট্রপতির বক্তব্যে উঠে আসে বন্যায় তলিয়ে থাকা হাওর অঞ্চলের মানুষের কষ্টের কথা।

“ভিসি সাহেব বলেছেন লিখিত বক্তব্যের বাইরে কিছু বলতে (তালি আর হাসির রোল)। মনে আসলে রঙ নাই,” এভাবেই শুরু করেন কিশোরগঞ্জের হাওর অঞ্চলের মানুষ আবদুল হামিদ।

তিনি বলেন, “আমি এই বৃহত্তর ময়মনসিংহের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর একজন সদস্য। হাওর, জঙ্গল আর মহিষের শিং তিনে মিলে ময়মনসিংহ। আমি হাওর এলাকার লোক। এখানে আসছি, বাতাস, বৃষ্টি। এগুলি দিয়া আমার মন চুইপসা গেছে।”

সম্প্রতি বৃষ্টি আর উজানের ঢলে কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোণা, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জের বিস্তৃর্ণ হাওর অঞ্চলের ফসল তলিয়ে গেছে।হাওরে এমন দুর্দশায় আগেও উদ্বেগ জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি।

তার সমাবর্তন অনুষ্ঠানের বক্তব্যেও উঠে আসে হাওর প্রসঙ্গ।  

“আপনারা জানেন ১৬, ১৭, ১৮ এই তিনদিন হাওরে...কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোণা, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া এগুলা ঘুরে দেখেছি। ফসলের বারোআনাই ধ্বংস হয়ে গেছে। কী যে অবস্থা! ধান পানির নিচে পচে গেছে। মাছও মরে যাচ্ছে।”

“এখন যে অবস্থা, বৃষ্টি বাতাসে যে তিন-চার আনা আছে সেটাও শ্যাষ। এই ধরনের অবস্থার মধ্যে মনের অবস্থা সুবিধার না। সুতরাং রঙ মিশায়া কথা বলবার মতো মনের অবস্থা নাই।”

ঝড়-বৃষ্টির কারণে বৈশাখ বা চৈত্র মাসের শেষে সমাবর্তন না করতে উপাচার্যের প্রতি অনুরোধ করেন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আচার্য আবদুল হামিদ।

নিজেকে মঞ্চ অভিনেতার সঙ্গে তুলনা করে আঞ্চলিকতার টানে বলেন, “আরও কিছু ইনভার্সিটিতে আমি গেছি। এদের আমি ডিগ্রি প্রদান করি। এরার চেহারাডা দেখতাম পারি না। সব অন্ধকার, কিছুই দেখি না। কিন্তু আমরারে...নাট্য মঞ্চের মত..দর্শক যারা থাকে তারা অন্ধকারে আর আমাদের দেখা যায়, মনে হয় যেন পাট করতাছি।”

বরাবরের মতো স্ত্রীর সঙ্গে খুনসুটির কথাও উঠে আসে রাষ্ট্রপ্রধানের কথায়, যা শুনে আবারও হাসির ফোয়ারা ছোটে অনুষ্ঠানস্থলে।

“আজকের একটা ঘটনা বলি। তিনদিন ঘুরতাছি (হাওরে), পত্রিকাতেও উঠতাছে। সকালে নাস্তা করার সময় আমার স্ত্রী বলল, ‘পত্রিকায় নিউজ দেখলাম, তুমি যা বলতাছ, পুরান কথা বলতাছ’। আমি কইলাম, আগেও তো বন্যা হইছে, এখনও তো একই জিনিস ঘটছে। একই কথাই বলব।”

“উনি বললেন, ‘তবুও নতুন কিছু বক্তব্য থাকা উচিত’। আমি বললাম ঠিকই বলছ, পাশাপাশি আজকে তুমি ৫৪ বছর ধরে আমার সঙ্গে ঘর করতাছ, তুমিও তো পুরান হইয়া গেছ। এখন আমি যদি বলি নতুন একজনরে নিয়া আসি তখন তোমার কেমন লাগব? (হাসির রোল) তখন কথা থামছে এবং গাল ফুলায়া বইয়া রইছে। এর ফাঁকে আমি চইলা আসছি। এই হইল অবস্থা।”

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আতিথেয়তা নিয়ে কৌতুক ঝরে রাষ্ট্রপতির মুখে।

“অনেক ইনভার্সিটিতে আমারে নিয়া যায়, নিয়া আপনারা এক কাপ চাও খাওয়ান না। এত ঢাকঢোল পিটায়, কিন্তু চা খাওয়ানোর ব্যবস্থা নেই।”

অনুষ্ঠান সমাবর্তন বক্তা ছিলেন ইমেরিটাস অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম। অন্যদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মোহীত উল আলম, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান বক্তব্য রাখেন।

সমাবর্তনে মোট এক হাজার ৮৪৫ জনকে বিভিন্ন ধরনের ডিগ্রি দেওয়া হয়। এছাড়া শিক্ষা জীবনে কৃতিত্বের জন্য ২৯ জনকে স্বর্ণপদক দেওয়া হয়।