আরও ১০০ কোটির বেশি যাচ্ছে মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারে

রাজধানীর মগবাজার-মৌচাক (সমন্বিত) ফ্লাইওভার নির্মাণে ১০৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব অনুমোদন করেছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 April 2017, 03:39 PM
Updated : 16 April 2017, 05:39 PM

রোববার সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে কমিটির এক সভায় এই অনুমোদন দেওয়া হয়।

ফ্লাইওভারের মৌচাক অংশের প্রায় ৩ দশমিক ৯৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই অংশের শান্তিনগর হতে মালিবাগ, রাজারবাগ ও মৌচাক হয়ে রামপুরা পর্যন্ত ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজে এই অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় হবে বলে প্রস্তাবে বলা হয়েছে।

বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এর আগে এই অংশটির চুক্তিমূল্য ছিল ৩৪৩ কোটি ৭০লাখ টাকা। সেটা বাড়িয়ে এখন মোট ৪৫২ কোটি ১০ লাখ ৮৮ হাজার টাকা করা হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “এই অংশে আর টাকা বাড়ানো হয়নি। এই প্যাকেজে ভেরিয়েশন একবারই হয়েছে।”

কী কারণে কেন এই অর্থ বাড়ানো হয়েছে তা বিস্তারিত জানতে চাইলে তিনি মন্ত্রণালয়ে বা প্রকল্প পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন।

এর আগে গত বছরের ১৯ জানুয়ারি এই ফ্লাইওভার নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় প্রায় ৫৮ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাবে সায় দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। সে সময় তৃতীয় বারের মতো প্রকল্পের মেয়াদ দেড় বছর বাড়ানো হয়।

ওই বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানান, মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে প্রায় ১ হাজার ২১৯ কোটি টাকা করা হয়েছে।

২০১৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্য নিয়ে ২০১১ সালে যখন এই ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল, তখন এর ব্যয় ধরা হয়েছিল ৭৭২ কোটি ৭০ লাখ টাকা।

এখনকার লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী আগামী জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা। তবে একের পর এক প্রকল্পের ব্যয় ও মেয়াদ বাড়লেও সময়মতো কাজ শেষ না হওয়ায় প্রকল্প এলাকাজুড়ে নির্মাণ কাজের ডামাডোলে নিয়মিত দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।

এই প্রকল্প বাস্তবায়নে থাকা তমা কনস্ট্রাকশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আতাউর রহমান ভূঁইয়া নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। তাদের বিরুদ্ধে কার্যক্রম পরিচালনায় নিয়ম না মানা ও নিরাপত্তা গাফিলতির অভিযোগ রয়েছে। গত মার্চের এক মধ্যরাতে মালিবাগ রেলগেইট এলাকায় নির্মাণাধীন এই ফ্লাইওভারের গার্ডার পড়ে একজনের মৃত্যু এবং দুইজন আহত হন।

গত বছর ব্যয় বাড়ানোর কারণ হিসেবে ফ্লাইওভারের তেজগাঁও-পান্থপথ লিংক রোড অংশটি এফডিসি গেইটের পরিবর্তে সোনারগাঁও হোটেল পর্যন্ত এগিয়ে নেওয়া, ভূকম্পনরোধক করা এবং মূল থেকে বাদ পড়ে যাওয়া রাস্তার নিচের পানি, পয়ঃনিষ্কাশন, বিদ্যুৎ ও টেলিফোন লাইনকে প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলা হয়েছিল।

সৌদি ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্ট (এসএফডি) এবং ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ওএফআইডি) এই প্রকল্পে ঋণ দিচ্ছে।

সংস্থা দুটির ৫৭২ কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার কথা থাকলেও এখন তা বাড়িয়ে ৭৭৬ কোটি টাকা করা হচ্ছে।

অন্যদিকে সরকারের নিজস্ব অর্থায়নের পরিমাণ ২০০ কোটি ৪৭ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪৪২ কোটি ৭৩ লাখ টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে।

গত বছরের ৩০ মার্চ রমনা থেকে তেজগাঁও সাতরাস্তা পর্যন্ত ফ্লাইওভারের দুই কিলোমিটার যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। পরে বাংলামোটর থেকে ওয়ারলেসের দিকের একপাশে যান চলাচল শুরু হয়।

ব্যয় বেড়েছে কাশিয়ানী-গোপালগঞ্জ-টুঙ্গীপাড়ার রেলে

বাংলাদেশ রেলওয়ের ‘কালুখালী-ভাটিয়াপাড়া সেকশন পুনর্বাসন এবং কাশিয়ানী-গোপালগঞ্জ-টুঙ্গীপাড়া পর্যন্ত নতুন রেলপথ নির্মাণ (১ম সংশোধিত)’  প্রকল্পের ব্যয় ২২৩ কোটি ২১ লাখ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে কমিটি।

মূল চুক্তিতে মূল্য ছিল ৫৯৯ কোটি টাকা। এর সাথে কাজের হ্রাস-বৃদ্ধির কারণে টাকা বাড়িয়ে এখন মূল্য দাঁড়িয়েছে ৮২২ কোটি ৩৩ লাখ টাকা।

এখানে কাজের মধ্যে চুক্তিপত্রের কাশিয়ানি-গোপালগঞ্জ সেকশনের পিএসসি স্লিপার, নতুন বাঁধ নির্মাণ, ছোট-বড় ব্রিজ নির্মাণ, স্টেশন ভবন, প্ল্যাটফর্ম, লেভেল ক্রসিং গেট, একটা ফ্লাইওভার প্রভৃতি রয়েছে।

বাস্তবায়নাধীন ‘শেখ হাসিনা সফটওয়ার টেকনোলজি পার্ক, যশোর’ প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধিত প্রস্তাবের আওতায় সফটওয়ার টেকনোলজি পার্কের বিদ্যমান ১৫ তলার ভিত্তির ওপর ফ্লোর-৪ থেকে ১৪ পর্যন্ত নির্মাণ কাজের ব্যয় ২ কোটি ৬৯ হাজার টাকা বাড়ানোর প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে কমিটি।

মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের বাস্তবায়নাধীন ‘মংলা বন্দর হতে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র পর্যন্ত পশুর নদীতে ক্যাপিটাল ড্রেজিং’ শীর্ষক প্রকল্পের ড্রেজিং কাজের ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা কমিটি। এখানে সর্বনিম্ন দরদাতা ড্রেজিং কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া। তাদের প্রস্তাবিত দর ১১৯ কোটি টাকা, যা প্রাক্কলিত ব্যয়ের চেয়ে ২২ দশমিক ৮৯ শতাংশ কম।

২০১৬-১৭ অর্থবছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের ঢেউটিন কেনার প্রস্তাবেও সম্মতি দিয়েছে কমিটি। পাঁচ লটে মোট পাঁচজন ঠিকাদারের মাধ্যমে ৫ হাজার ৮২ মেট্রিক টন টিন কেনা হবে, যার মূল্য ৬৫ কোটি ৯৪ লাখ টাকা।

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ও নেদারল্যান্ডস সরকারের অর্থায়নে ‘সাউথওয়েস্ট এরিয়া ইনটিগ্রেটেড ওয়াটার রিসোর্সেস প্ল্যানিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট প্রজেক্ট-সেকেন্ড ফেইজ’র আওতায় ‘ইনস্টিটিউশনাল স্ট্রেনদেনিং অ্যান্ড প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট কনসালটেন্টস’ শীর্ষক পরামর্শক নিয়োগের প্রস্তাব, রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় আবাসন পল্লী এলাকায় ২০তলা ভিত্তির প্রতি তলায় ১২৫০ বর্গফুট আয়তনের ৬ ইউনিটের দুটি ২০তলা এবং দুটি ১৬তলা আবাসিক ভবন নির্মাণ (সিভিল, অভ্যন্তরীণ স্যানিটারি, অভ্যন্তরীণ বৈদ্যুতিকরণ ও গ্যাস লাইন স্থাপনসহ) কাজে ক্রয় প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে মন্ত্রিসভা কমিটি।

ভূমি মন্ত্রণালয়ের আওতায় তেজগাঁওয়ে ১৩তলা ভূমি ভবন কমপ্লেক্স নির্মাণের ক্রয় প্রস্তাবেও সায় দিয়েছে কমিটি।

পূর্বাচলে নতুন শহর প্রকল্পের বিভিন্ন সেক্টরে সারফেইস ড্রেনসহ অভ্যন্তরীণ রাস্তা নির্মাণ কাজও অনুমোদন পেয়েছে। ঢাকার তেজগাঁও-এ ডিটিসিএ সদরদপ্তর ভবনের কাজের ক্রয় প্রস্তাব পুনর্বিবেচনাপূর্বক অনুমোদনের প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে কমিটি। ১৩৮ কোটি ৬০ লাখ টাকা এই প্রস্তাবের অর্থমূল্য।

বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের ‘৭০ হাজার ওভারলোডেড বিতরণ ট্রান্সফর্মার প্রতিস্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ২০ হাজার ৯১০টি ট্রান্সফর্মার কেনা হবে। এর অর্থমূল্য ২০৬ কোটি ২১ লাখ টাকা।

এর আগে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রাশিয়া, বেলারুশ ও কানাডা হতে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) কর্তৃক মিউরেট অব পটাশ আমদানি চুক্তি নবায়নের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে।

একই অর্থবছরে সংযুক্ত আরব আমিরাতের রুওয়াইস ফার্টিলাইজার ইন্ডাস্ট্রিজ থেকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ইউরিয়া সার আমদানি চুক্তির ভূতাপেক্ষ অনুমোদনের প্রস্তাবে সম্মতি দেয় কমিটি। এর আওতায় দুই লাখ টন ইউরিয়া সার আমদানি করা হবে।