আফগানফেরত জঙ্গি জানলে মেয়ে বিয়ে দিতাম না: হান্নানের শাশুড়ি

জঙ্গি হামলায় ফাঁসি কার্যকর হওয়া মুফতি হান্নান কৃতকর্মের ফল পেয়েছেন মন্তব্য করে তার শাশুড়ি আলেয়া বেগম বলেছেন, হান্নান আফগানিস্তান ফেরত জঙ্গি জানলে কোনোভাবেই তার সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দিতেন না।

মাগুরা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 April 2017, 06:04 PM
Updated : 12 April 2017, 06:43 PM

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার হিরণ গ্রামের হান্নান বিয়ে করেন মাগুরা সদর উপজেলার মঘি গ্রামের আনসার উদ্দিন মোল্লা ও আলেয়া বেগমের মেয়ে রুমা খাতুনকে।

স্বাধীনতাবিরোধী নূর উদ্দিন মুন্সীর ছেলে আবদুল হান্নান মুন্সী বাংলাদেশে মাদ্রাসায় পড়ার পর ভারতের দেওবন্দ এবং পাকিস্তানের করাচিতে মাদ্রাসা শিক্ষা নেন। সেখানে থাকাকালে সীমান্তবর্তী এলাকায় প্রশিক্ষণ নিয়ে আফগান যোদ্ধাদের সঙ্গে সোভিয়েত ইউনিয়নের সেনাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেন তিনি।

১৯৯৩ সালে দেশে ফেরার পরের বছর মাগুরায় গিয়ে বিয়ে করেন সদ্য এসএসসি পাস করা রুমাকে। তাদের ঘরে এখন চার ছেলে-মেয়ে।

২০০৪ সালে সিলেটে তৎকালীন ব্রিটিশ হাই কমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা মামলায় বুধবার রাতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয় মুফতি হান্নান ও তার দুই সহযোগীর।

হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নান

রাতে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে হান্নানকে ফাঁসিতে ঝোলানোর আগে বিকালে তার শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে দেখা যায় এক ধরনের নিস্তব্ধতা। বাড়ির এক কোণায় চেয়ারে চুপচাপ বসে আছেন আনসার উদ্দিন ও তা স্ত্রী আলেয়া বেগম। মেয়ের অমতে হান্নানের সঙ্গে তাকে বিয়ে দেওয়ায় অনুশোচনায় ভুগছেন দুজনই।

জঙ্গি দল হরকাতুল জিহাদের শীর্ষ নেতা হান্নানের ফাঁসিকে তার কৃতকর্মের ফল বলে মন্তব্য করেন তারা।

ইসলামের নামে বোমাবাজি ও মানুষ হত্যার জন্য জামাতা হান্নানের ওপর ঘৃণা প্রকাশ করেন আনসার ও আলেয়া।

চরমোনাই পীরের অনুসারী আনসার মোল্লা জঙ্গিবাদের বিরোধিতার পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতিরও সমালোচনা করেন।

“তাদের কথা ও কাজের মিল নেই। জামায়াত কোনো ইসলামী দল নয়।”

মুফতি হান্নান চতুরতার আশ্রয় নিয়ে তাদের মেয়েকে বিয়ে করেন বলে অভিযোগ করেন আনসার ও আলেয়া দম্পতি।

তারা জানান, যশোরে মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করা অবস্থায় হান্নান আগে কোনো যোগাযোগ ছাড়াই বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে তাদের বাড়িতে আসেন মেয়ে দেখতে।

আলেয়া বেগম বলেন, “কিন্তু আমি কিছুতেই মেয়ে দেখাতে রাজি ছিলাম না। কিন্তু ওর বাবা নরম মনের মানুষ হওয়ায় শেষ পর্যন্ত মেয়ে দেখানোর ব্যবস্থা করেন। তবে হান্নানকে দেখে মেয়ে বা পরিবারের সকলের অপছন্দ হয় এবং তার সাথে বিয়ে দেওয়া হবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়।

“কিন্তু কাউকে কিছু না জানিয়ে হান্নান কয়েক দিন পর হঠাৎ একদিন তার চাচা তৎকালীন কোটালীপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যানসহ গাড়ি ভর্তি লোকজন নিয়ে বাড়িতে হাজির হয়। হান্নান বলে, সে শিক্ষিত, অবস্থাসম্পন্ন একজন পরহেজগার মানুষ। আমার মেয়েকে ছাড়া আগে কখনো কোনো মেয়ের মুখ দেখেনি।  তখন সকলের অমতে হান্নান তার চাচা উপজেলা চেয়ারম্যানকে দিয়ে এক রকম চাপ প্রয়োগ করে সেদিন রুমাকে বিয়ে করে।”

আনসার ও আলেয়া জানান, বিয়ের পর ৫-৬ বছর হান্নান নিয়মিত তাদের বাড়িতে যাওয়া-আসা করতেন।  হান্নান আফগান যোদ্ধা এবং তার জঙ্গি তৎপরতা সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণা ছিল না। ২০০০ সালে কোটালীপাড়ায় শেখ হাসিনার জনসভাস্থলে বোমা পুঁতে রাখার খবর পত্রিকায় দেখে প্রথম বিষয়টি তারা জানতে পারেন।

পরে ২০০৪ সালে সিলেটে এবং ঢাকায় আওয়ামী লীগের সভায় গ্রেনেড হামলার ঘটনার পর তাদের কাছে জামাতার জঙ্গি তৎপরতার আসল রূপ প্রকাশ পায় বলে জানান তারা।

হান্নানের শাশুড়ি আলেয়া বলেন, “সে জোর করে আমার মেয়েকে বিয়ে করেছে।  আফগানফেরৎ জঙ্গি জানলে কখনো তার সাথে মেয়ের বিয়ে দিতাম না।

“আমার মেয়ের জীবনটা শেষ করেছে। এখন মেয়ে ও নাতি- নাতনির ভবিষ্যৎ নিয়েই বেশি চিন্তা।”

আনসার মোল্লা বলেন, জামাতার লাশ দেখা ও দাফন কাফনে অংশ নেবেন না। তবে নিজের মেয়েকে ফেলতে পারবেন না। ভবিষ্যতে মেয়ে ও নাতি-নাতনিদের দেখবেন।

তিনি বলেন, দুই মাস আগেও যাবতীয় বাজারসহ মেয়েকে ১০ হাজার টাকা দিয়ে এসেছেন।

মুফতি হান্নানের দুই ছেলের একজন যশোরের একটি কলেজে এবং অপরজন ঢাকার একটি মাদ্রাসায় পড়েন। মাদ্রাসা পড়ুয়া দুই মেয়েকে নিয়ে কোটালীপাড়ায় স্বামীর বাড়িতে থাকেন রুমা।

হান্নানের শ্যালক আব্দুল্লাহ  (১৮) বলেন, এই বোনজামাইকে কখনো দেখেননি। কিন্তু তার জন্য সমাজে তাকে হেয়প্রতিপন্ন হতে হয়।

মঘিগ্রাম সংলগ্ন সত্যপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষব রেজাউল ইসলাম বলেন, “অবস্থাসম্পন্ন আনসার মোল্লা একজন ভালো মানুষ। তার মেয়ে রুমা নম্র-ভদ্র স্বভাবের, ভালো ছাত্রীও ছিল।

“তবে দুর্ভাগ্য তার অমতে এমন একটি ছেলের সাথে বিয়ে হয়েছে। মেয়েটার জীবন শেষ হয়ে গেছে।”