কওমির সর্বোচ্চ সনদ পাবে স্নাতকোত্তরের স্বীকৃতি

কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ সনদকে সাধারণ শিক্ষার স্নাতকোত্তর ডিগ্রির স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 April 2017, 05:23 PM
Updated : 7 May 2017, 03:31 PM

মঙ্গলবার রাতে গণভবনে বাংলাদেশের ‘কওমি মাদ্রাসার আলেমগণের সঙ্গে সাক্ষাৎকার’ অনুষ্ঠানে এই ঘোষণা দেন সরকার প্রধান।

এই অনুষ্ঠানে কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান শাহ আহমদ শফী, কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা কর্তৃপক্ষ আইন পর্যালোচনা কমিটির আহ্বায়ক মওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদসহ কয়েকশ আলেম উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “কওমি মাদ্রাসার স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য বজায় রেখে এবং দারুল উলুম দেওবন্দের মূল নীতি সমুহের উপর ভিত্তি করে কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিসের সনদকে মাস্টার্স (ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি সাহিত্য) সমমান প্রদান করা হল।”

বাংলাদেশে কয়েক ধারার শিক্ষা ব্যবস্থায় কওমি মাদ্রাসার সনদের এই ধরনের স্বীকৃতিতে শিক্ষাবিদ অনেকের বিরোধিতা রয়েছে। জঙ্গিবাদের বিস্তার রোধে মাদ্রাসা শিক্ষা বিলুপ্তির দাবিও রয়েছে।

কওমির সনদের স্বীকৃতির বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “এই সম্মানটা পেলে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ আলোর পথে যাত্রা শুরু করবে, অন্ধকারে থাকবে না। তারা দেশে বিদেশে চাকরি করতে পারবে। তারা বিভিন্ন জায়গায় কাজ পাবে। তাদের জীবনে অনেক সুযোগ আসবে।

“যেহেতু এই শিক্ষার সরকারি স্বীকৃতি ছিল না। তারা কোথাও তেমন কোনো সুযোগ পেত না।” 

ব্রিটিশ আমলে এই অঞ্চলে কওমি মাদ্রাসার যাত্রা শুরু হয়। সারা বাংলাদেশে প্রায় ১৪ হাজার কওমি মাদ্রাসায় প্রায় ১৪ লাখ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে।

গণভবনের অনুষ্ঠানে শাহ আহমদ শফীর সঙ্গে কুশল বিনিময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: সাইফুল ইসলাম কল্লোল

আওয়ামী লীগ সরকার কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা সনদের স্বীকৃতি দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়ার পর ‘বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা কর্তৃপক্ষ’ গঠনেরও সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু মাদ্রাসাগুলোর সবাই একমত না হওয়ায় তা ঝুলে যায়।

শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের দেশের শিক্ষা শুরুই হয়েছে এই কওমি মাদ্রাসার মাধ্যমে। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে যারা দেওবন্দ প্রতিষ্ঠা করেছে তাদের বিরাট ভূমিকা ছিল। তারাই প্রথম ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন শুরু করে।

“আমি সবসময় মনে করেছি, আমাদের কওমি মাদ্রাসার সরকারি স্বীকৃতি পাওয়া একান্তভাবে দরকার।”

কীভাবে পাঠ্যক্রম করা যায় তা নিয়ে এর আগে আহমদ শফীকে প্রধান করে কমিটি গঠনের কথাও বলেন তিনি।

“যে যে পয়েন্টে সবাই এক হতে পারেন, সে সর্বনিম্ন পয়েন্ট নিয়েও আপনারা একটা ব্যবস্থা করে দেন; যাতে কওমি মাদ্রাসার সনদের স্বীকৃতিটা দিতে পারি।”

ফরীদ উদ্দীন মাসউদ বলেন, “আজকে ওলামায়ে কেরামরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হল। এটা দেশের কল্যাণ বয়ে আনবে।”

গণভবনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত আলেমদের একাংশ। ছবি: সাইফুল ইসলাম কল্লোল

শেখ হাসিনা ও আহমদ শফীর উপস্থিতির কথা উল্লেখ করে অনুষ্ঠানের শুরুতেই সঞ্চালক বলেন, “রাষ্ট্রের প্রধান মুরুব্বি ও অভিভাবক এবং আধ্যাত্মিক মুরুব্বি ও অভিভাবকের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠান শুরু করতে যাচ্ছি।”

প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদিনের স্বাগত বক্তব্যের মাধ্যমে শুরু হয়ে অনুষ্ঠান শেষ হয় আহমদ শফীর মোনাজাত পরিচালনার মাধ্যমে।

কওমি মাদ্রাসার সনদের স্বীকৃতির ঘোষণা আসায় আহমদ শফী শুকরিয়া আদায় করেন এবং আল্লাহর কাছে দেশ ও মানুষের সম্মৃদ্ধি কামনা করেন।

গণভবনের মাঠ ঘিরে তৈরি হওয়া অনুষ্ঠানস্থলে রাতের খাবারেরও আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে জঙ্গিবাদ নিয়েও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

ইসলামকে শান্তির ধর্ম উল্লেখ করে ধর্মের নামে জঙ্গিবাদের নিন্দা জানান প্রধানমন্ত্রী। ছেলেমেয়েরা যাতে ভুল পথে চলে না যায় সে বিষয়ে আলেমদের সহযোগিতা চান তিনি।

গণভবনে আলেমদের সঙ্গে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: সাইফুল ইসলাম কল্লোল

ইসলামের জন্য বঙ্গবন্ধুর নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে শেখ হাসিনা প্রত্যেকটা জেলা ও উপজেলায় মসজিদ তৈরি করে ইসলামী সংস্কৃতি কেন্দ্র গড়ে তোলার কথাও বলেন।

তিনি বলেন, “এই দেশে সব ধর্মের মানুষই বসবাস করবে। যার যার ধর্ম সেই সেই পালন করবে।”

উন্নয়ন কাজে মসজিদ অপসারণ করা হচ্ছে না বলেও আশ্বস্ত করেন শেখ হাসিনা।

ভূমি আইন সংশোধনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এটা মসজিদ সরানোর আলাদা কোনো আইন করা হচ্ছে না। এটা ভুল ধারণা।”

এই প্রসঙ্গে মক্কায় মসজিদ আল হারাম বা মদিনায় মসজিদে নববীর সম্প্রসারণের জন্য ছোট ছোট মসজিদ সরিয়ে নেওয়ার উদাহরণও আলেমদের সামনে তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।