মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হোটেলে র্যাব আয়োজিত ‘কতিপয় বিষয়ে জঙ্গিবাদী অপব্যাখ্যা এবং পবিত্র কুরআনের সংশ্লিষ্ট আয়াত ও হাদিসের সঠিক ব্যাখ্যা’ শীর্ষক বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে এই ঘটনা ঘটে।
অনুষ্ঠানের অতিথি আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী বলেন, “বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদীদের দমনের ক্ষেত্রে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পৃথিবীতে এক নম্বরে রয়েছেন।”
প্রশংসার এক পর্যায়ে তিনি বলেন, “আপনারা সন্ত্রাসীদের ধরেছেন… সাথে সাথে মেরেও ফেলেছেন। সেটা পৃথিবীর আর কোথাও ঘটেনি। সে কারণে আপনাদেরকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।”
তার বক্তব্যের পর অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মো. আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, সংসদ সদস্য ‘আবেগের বশবর্তী হয়ে’ আইন শৃঙ্খলা বাহিনী নিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন।
পুলিশের মহাপরিদর্শক একেএম শহীদুল হক এমপির বক্তব্যের বিরোধিতা করে বলেন, পুলিশ কাউকে ‘মেরে ফেলেনি’।
জঙ্গি দমনে র্যাব-পুলিশের সাম্প্রতিক নানা অভিযানে নিহত হওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো। এর মধ্যেই সুইডিশ রেডিওর এক প্রতিবেদনে র্যাবের ক্রসফায়ারের নামে হত্যার অভিযোগও তোলা হয়।
এনিয়ে আলোচনার মধ্যে মঙ্গলবারের অনুষ্ঠানে এমপি নদভীর বক্তব্যে হেসে ওঠেন শ্রোতাদের অনেকে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আবেগের বশবর্তী হয়ে এক সংসদ সদস্য বলেছেন, ‘পুলিশ যাকে পাচ্ছে তাকে মেরে ফেলছে’। পুলিশ যথেষ্ট ধৈর্যের পরিচয় দিচ্ছে। তারা আক্রমণের শিকার হলেই পাল্টা আক্রমণ করছেন।”
পুলিশ প্রধান শহীদুল বলেন, “পুলিশ কোনো জঙ্গিকে ধরে হত্যা করে না। তারাই প্রথমে পুলিশের উপর আক্রমণ করে। তারপর আত্মরক্ষার্থে পুলিশ গুলি চালায়। পুলিশ সব সময়ই জঙ্গিদের গ্রেপ্তার করতে চায়।”
চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার সংসদ সদস্য নদভী ‘মেরে ফেলা’কে সমর্থন জানিয়ে বলেন, “জঙ্গিদের আমরা হেদায়েত করতে পারব না, তারা বধির হয়ে গেছে।”
নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমি যখন এমপি হয়েছিলাম, তখনও জঙ্গি ও জামাতিরা আমাকে হত্যা করতে চেয়েছিল। তারা আমাকে হত্যা করতে একত্রিত হয়েছিল। পরে তিন ঘণ্টা একটা মসজিদে থাকার পর আল্লাহর রহমতে প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলাম।”
ধর্মের শরণ নিয়ে জঙ্গিদের কর্মকাণ্ডের অসারতা তুলে ধরতে র্যাব এই বইটি প্রকাশ করেছে। অনুষ্ঠানে বাহিনীর মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদও ছিলেন। ছিলেন মওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদও।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “পথভ্রষ্ট যুবকদের ফিরিয়ে আনতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দিয়েছেন। যেভাবে তারা র্যাডিক্যালাইজড হচ্ছে, তার বিপক্ষে কুরআনের ব্যাখ্যা তুলে ধরতে বলেছেন।
“ওই যুবকদের ফিরিয়ে আনতে হবে। ইসলাম কী বলে তার সঠিক ব্যাখ্যা তুলে ধরতে হবে।”
বাংলাদেশের জঙ্গিদের আন্তর্জাতিক সংশ্লিষ্টতার দাবি নাকচ করে মন্ত্রী বলেন, “সারা পৃথিবী ষডযন্ত্রের মুখে পড়েছে। বাংলাদেশেও তা হচ্ছে। আরে আইএস বাংলাদেশে কোথা থেকে আসবে, কী কারণে, কেন আসবে?”
জঙ্গি দমনে পুলিশের কাজের প্রশংসা করেন পুলিশ প্রধান। তবে জঙ্গি মতবাদের প্রচার ঠেকাতে এখনও পুরোপুরি সফল না হওয়ার কথা বলেন তিনি।
এক্ষেত্রে আরও কাজকরার আছে জানিয়ে শহীদুল হক বলেন, “বিভিন্ন সময়ে গ্রেপ্তার নারী জঙ্গিরা হাইলি মোটিভেটেড ছিল। পরে আলেম-ওলামা এনে তাদের বোঝানো হয়েছে। এক সময়ে তারা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরেছেন। তারা স্বামীর কথায় এ পথে আসতে বাধ্য হয়েছেন বলে জানিয়েছেন।”
তবে কারাগারে পাঠানোর পর তারা আবার আগের মতো হয়ে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।
“তাদের যখন জেলখানায় পাঠানো হচ্ছে তারা রি-মোটিভেটেড হয়ে যাচ্ছে। জেলখানায় তাদের ডি-মোটিভেশনের ব্যবস্থা আছে কি না, সেটা বিবেচনা করতে হবে।”