দুই লাখের বেশি ভোটারের এ নগরে ১০৩টি কেন্দ্রের মধ্যে ১০১টিতে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোট চলে। এরপর কেন্দ্রে কেন্দ্রে শুরু হয় গণনা।
কেন্দ্র থেকে পাঠানো ফলাফল কুমিল্লা টাউন হলে রিটার্নিং কর্মকর্তার নিয়ন্ত্রণ কক্ষে পৌঁছানোর পর সেখান থেকে তা একীভূত আকারে ঘোষণা করা শুরু হয়।
তাতে বিএনপির মনিরুল হক সাক্কুই মেয়রের চেয়ারে থাকবেন; নাকি আওয়ামী লীগের আঞ্জুম সুলতানা সীমা নগর ভবনে যাবেন – তা দেখার অপেক্ষায় আছে পুরো দেশ।
এ নির্বাচনে কয়েকটি কেন্দ্রে জাল ভোট দেওয়ার অভিযোগ এসেছে। হাতবোমা ফাটিয়ে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়েছে একটি কেন্দ্রের বাইরে।
বিএনপি সমর্থক কয়েকজন প্রার্থী তাদের এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ করেছেন। এর বাইরে বড় কোনো গোলযোগ ঘটেনি বলে জানিয়েছেন এ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা রকিব উদ্দিন মণ্ডল।
ভোট শেষে সার্বিক পরিস্থিতিতে সন্তোষ প্রকাশ করে বিডিনিউজ টোয়োন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “দুটি কেন্দ্র গোলাযোগের কারণে স্থগিত করা হয়েছে। আর সব জায়গায় শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে।”
এবার ভোটের হার ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ হতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেন নির্বাচন কমিশন সচিব মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ।
এ কারণে কুমিল্লার নির্বাচনকে কেএম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের আস্থা তৈরির পরীক্ষা হিসেবে দেখা হাচ্ছিল।
কিন্তু কুমিল্লা সদর দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাক্কু ভোট শুরুর এক ঘণ্টার মাথায় কয়েকটি কেন্দ্রে অনিয়মের অভিযোগ করেন।
আর ঢাকায় তার দলের পক্ষ থেকে এক সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ক্ষমতাসীনরা ‘প্রশাসনকে ব্যবহার ও ভোটারদের সন্ত্রস্ত করাসহ নানাভাবে’ কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে ‘প্রভাবিত করেছে’।
অন্যদিকে কুমিল্লার প্রভাবশালী আফজল পরিবারের মেয়ে আঞ্জুম সুলতানা সীমা ভোটের পরিস্থিতি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেছেন, ফলাফল যাই হোক, তিনি মেনে নেবেন।
তিনি বলেন, “সুষ্ঠু ভোটের মাধ্যমে সবার আস্থা অর্জনে শতভাগ সফল হয়েছি। আমরা দাবি করি, এ নির্বাচনে আমরা সফল ও সার্থক হয়েছি।”
সাক্কু ও সীমা ছাড়াও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির শিরিন আক্তার ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মামুনুর রশীদ মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
এছাড়া সিটি করপোরেশনের ২৭টি সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে ১১৪ জন এবং নয়টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে ৪০ জন প্রার্থী ছিলেন এবার।
এদিন সকাল থেকেই বিভিন্ন কেন্দ্রে দেখা যায় ভোটারদের দীর্ঘ লাইন। কেন্দ্রের পরিবেশ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন অধিকাংশ ভোটার।
সকালে ফরিদা বিদ্যায়ত কেন্দ্রে ভোট দিয়ে পূবালী ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহবুবুল আলম বলেন, “ভোট ভাল হচ্ছে। শুরুতেই দিয়ে দিলাম, যাতে পরে গ্যাদারিংয়ে পড়তে না হয়।”
এদিকে ভোটের আগের দিন শহরের কোটবাড়ী এলাকায় একটি ‘জঙ্গি আস্তানা’র সন্ধান মেলায় কিছুটা উত্তাপ ছড়ায় কুমিল্লাবাসীর মধ্যে।
শেষ পর্যন্ত সেই আতঙ্ক ছাপিয়ে আনন্দ নিয়েই ভোট দেন ওই জঙ্গি আস্তানার আশপাশের তিনিটি কেন্দ্রের ভোটাররা।
গভার্নমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুলে ভোট দিতে আসা জাকির হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সবকিছুতো স্বাভাবিক আছে। কোনো আতঙ্ক তো দেখছি না।”
কুমিল্লা সিটিতে এবার ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৭ হাজার ৫৬৬ জন। তাদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ২ হাজার ৪৪৭ জন এবং ১ লাখ ৫ হাজার ১১৯ জন নারী।
দুটি পৌরসভা নিয়ে ২০১১ সালের জুলাই মাসে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন গঠিত হওয়ার পর দ্বিতীয় ভোট হচ্ছে এবার।
২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি প্রথম নির্বাচন নির্দলীয়ভাবে হলেও এবার মেয়র পদে ভোট হয়েছে দলীয় প্রতীকে।