জঙ্গি-আতঙ্ক ছাপিয়ে ভোট দেওয়ার আনন্দ

কুমিল্লার কোটবাড়ীতে জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে একটি বাড়ি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ঘিরে রাখলেও ওই এলাকার ভোটে এর কোনো প্রভাব পড়তে দেখা যায়নি।

মাসুম বিল্লাহ কুমিল্লা থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 March 2017, 09:04 AM
Updated : 30 March 2017, 02:09 PM

সিটি করপোরেশনের এক প্রান্তে ওই বাড়ির এক কিলোমিটার উত্তরে আছে দুটি কেন্দ্র, আর দুই কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে আরেকটি কেন্দ্র। তিন কেন্দ্রেই সকাল থেকে ভোটাররা আসছেন, ভোট দিচ্ছেন উৎসাহের সঙ্গে।

সিটির ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে ঘেরাও ওই বাড়ির দিকে ভূইয়া বাড়ি মসজিদের সামনে দিয়ে চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে দেখা যায় আইনশৃঙ্খলবাহিনীর সদস্যদের। বিপরীত দিকের সড়ক দিয়ে ভোটকেন্দ্র ফেরত নারী-পুরুষদের দলবেঁধে হেঁটে যেতে দেখা যায়।

স্থানীয় ভোটার আফরোজা আক্তার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভোট দিয়ে ফিরছি। রিকশা না চলায় একটু কষ্ট আর কি।আর কোনো সমস্যা নাই।”

ভোট দিয়ে এসে স্থানীয় খাদিজা স্টোরের সামনে আড্ডা জমাতে দেখা যায় শাহাবউদ্দিনসহ চারজনকে। নির্বিঘ্নে ভোট দিয়ে আসার কথা জানান বিএড কলেজের চাকুরে শাহাবউদ্দিন।

শালবন বিহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সকাল ১০টায় পুরুষ ভোটারদের দীর্ঘ সারি।

গন্ধমতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নারী ভোটারদের দীর্ঘ সারি।

তিনি বলেন, দক্ষিণ বাগমারা বড় কবরস্থানের পাশে তিন তলা যে বাড়িটি ঘেরাওয়ের মধ্যে আছে, তার সঙ্গে আরেকটি বাড়ি আছে। বাকি বাড়িগুলোর বেশ খানিকটা দূরত্বে । এ কারণে ঘেরাওয়ের ফলে তেমন অসুবিধা হচ্ছে না। একটি সড়ক বন্ধ থাকায় মানুষ ঘুরপথে এসে ভোট দিয়ে আসছেন।

২৪ নম্বর ওয়ার্ডের দুটি কেন্দ্রে দেখা যায় ভোটারদের দীর্ঘ সারি। দক্ষিণ বাগমারা এলাকার গন্ধমতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কেন্দ্রে সকাল ১১টার দিকে ছিল নারী ভোটারদের চারটি লাইন দেখা যায়।

সেখানে কথা হয় হাসিনা আক্তারের সঙ্গে। তিনি ভোট দিয়ে গিয়ে বয়স্ক এক আত্মীয়কে নিয়ে এসেছেন ভোট দিতে সহায়তা করতে।

শালবন বিহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সকাল ১০টায় নারী ভোটারদের দীর্ঘ সারি।

পুলিশের ঘেরাওয়ের সামনে দিয়ে ভোট দিয়ে ফিরছে মানুষ।

হাসিনা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভোটের পরিস্থিতি ভালই। কালকে আমরা টিভিতে দেখছি। অভিযানতো আজকে স্থগিত, কালকে ভোটের পর চলবে।”

আরেক লাইনে দাঁড়ানো কোটবাড়ীর ভোটার নুরুন নাহার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কালকের পর কিছুটা চাপা আতঙ্ক আছে। তবে এটা ভোটের বাধা হতে পারে নাই। এতো লোক দেখেই তো বোঝা যায়।”

ওই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা মোজাম্মেল হোসেন জানান, ২ হাজার ৬৪ ভোটের মধ্যে সকাল ১০টা পর্যন্ত ৪০০ ভোট পড়ে। জঙ্গি আস্তানা ঘেরাওয়ের কোনো প্রভাব ভোটে পড়ছে বলে তার মনে হয়নি।

জঙ্গি আস্তানামুখী সড়কের মুখে পুলিশ প্রহরা

পুলিশের ঘেরাওয়ের সামনে দিয়ে ভোট দিতে যাচ্ছেন ভোটাররা।

ওই এলাকার পুরুষদের কেন্দ্র গভার্নমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুলে সকাল ১১টার দিকে তেমন ভিড় দেখা যায়নি। অনেকে ভোট দিয়ে চলে যাওয়ায় ভিড় কমে গেছে বলে জানান লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা জাকির হোসেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “এখনতো মানুষের কাজের সময়। বিকালের দিকে আরও মানুষ আসবে।”

জঙ্গি আস্তানার বিষয়ে প্রশ্ন করলে ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের কর্মকর্তা জাকির বলেন, “সবকিছুতো স্বাভাবিক আছে। কোনো আতঙ্ক তো দেখছি না।”

বেলা বাড়ার পর ভোটার সংখ্যা কমে যায় গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুল কেন্দ্রে।

জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে ঘিরে রাখা বাড়ির পাশে পুলিশের সতর্ক অবস্থান

ঘেরাওয়ের ভেতরে থাকা বাড়ি থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে শালবন বিহার প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র। সেখানে সকাল ১০টার দিকে পুরুষ-নারী ভোটারদের দীর্ঘ সারি দেখা যায়।

ভোটের লাইনে দাঁড়ানো ষাটোর্ধ্ব আবুল কাশেম বলেন, “পরিস্থিতি ভাল। কোনো সমস্যা নাই। ওই বাড়িতো এখান থেকে দুই-আড়াই কিলোমিটার দূরে।”

নারীদের লাইনে দাঁড়ানো মঞ্জুয়ারা বেগম ও মোর্শেদা বেগমও কোনো আতঙ্ক অনুভূব করছেন না বলে জানান।

পুলিশের ঘেরাওয়ের সামনে দিয়ে ভোট দিয়ে ফিরছে মানুষ।

ভোট দিয়ে এসে আড্ডায় এলাকাবাসী।

শালবন বিহার কেন্দ্রে ভোটের শুরুতে বিএনপির পোলিং এজেন্ট ও কর্মীদের বাধা দেওয়ার ঘটনা ঘটলেও পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আওয়ামী লীগ সমর্থকদের ধাওয়া দিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে।

ঘটনার সামাল দিতে গিয়ে সেখানে উপস্থিত হওয়া সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা আতাউর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, “অভিযোগ যেভাবে পেয়েছি সেভাবে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। পরবর্তীতে পোলিং এজেন্টদের ভেতরে প্রবেশের ব্যবস্থা করা হয়েছে।”