বৃহস্পতিবার সকালে শুরু হতে যাওয়া এই ভোট উপলক্ষে নির্বাচনী এলাকা নিরাপত্তার চাদরে ঘিরে ফেলার কথা বলেছেন নির্বাচন কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা।
নিয়োগ পাওয়ার পর বিএনপির অভিযোগবিদ্ধ নূরুল হুদা সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সরকারবিরোধীদের প্রশংসা কুড়িয়েছেন।
এই কুমিল্লা থেকেই ‘গণতন্ত্রের নবযাত্রা হবে’ বলে সিইসি বলেছেন জানিয়ে বিএনপি নেতারা বলছেন, চাকরি জীবনে সর্বোচ্চ জায়গায় উপনীত একজন মানুষ কখনোই অবান্তর কথা বলবেন না। তার কথার বাস্তবায়ন ঘটবে বলেই তারা আশা করেন।
এই প্রত্যাশা রেখে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, “কুমিল্লা সিটি নির্বাচন বর্তমান ইসির কাছে একটা অগ্নিপরীক্ষা। এ ইসির প্রতি অনেক রাজনৈতিক দলের নানা প্রশ্ন রয়েছে। এ পরীক্ষায় পাস করলে রাজনৈতিক দলগুলো ইসির প্রতি আস্থা পাবে।”
নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে ‘সচেষ্ট’ নির্বাচন কমিশনও এরইমধ্যে তার কিছুটা প্রমাণ দিয়েছেন। ভোটের আগের দিন বুধবার কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানা এলাকার ১৯জন পুলিশ সদস্যকে নগরীর অন্যত্র দায়িত্বে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
সকালে এক ব্রিফিংয়ে এ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে প্রয়োজনে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ার করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা রকিব উদ্দিন মণ্ডল।
তার বক্তব্যের সূত্র ধরে ব্রিফিংয়ে কুমিল্লার পুলিশ সুপার শাহ আবিদ হোসেন বলেন, যে কোনো ধরনের অনিয়ম, সহিংসতা ও দাঙ্গা-হাঙ্গামার বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ দেখানো হবে।
“কেউ কেন্দ্রে বিশৃঙ্খলা করতে এলে আমরা সেখান থেকে তাকে স্বাভাবিকভাবে যেতে দেব না। বিশৃঙ্খলা করলে কেউ অক্ষত অবস্থায় পুলিশের সামনে থেকে যেতে পারবে না।”
নির্বাচন কমিশনের ‘যে কোনো বৈধ আদেশ’ পুলিশ সদস্যরা পেশাদারিত্বের সঙ্গে পালন করবে বলে মন্তব্য করেন পুলিশ সুপার।
ভোটের শান্তিপূর্ণ রাখতে নয়জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও ২৭জন নির্বাহী ম্যাজিস্টেট ২৭টি ওয়ার্ডে দায়িত্ব পালন করবেন।
সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত নগরীর ১০৩টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হবে। কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের দ্বিতীয়বারের নির্বাচনে ভোটার আছেন ২ লাখ ৭ হাজার ৫৬৩ জন।
ভোটের আগের দিন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমা এদিন দ্বিতীয় কান্দিরপাড়ে ঠাকুরপাড়ার রামমালা রোডের বাসায় নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করে দিন পার করেন।
তার ভাই ইমরান খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গত ২৮ দিন ধরে আওয়ামী লীগের যেসব স্থানীয় নেতাকর্মী নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিয়েছেন তাদের অনেক বাসায় এসেছিল। তিনি তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করে শেষ দিন পার করেছেন।”
পেশায় কুমিল্লা মডার্ন স্কুলের শিক্ষক সীমা এর আগে বিলুপ্ত কুমিল্লা পৌরসভায় ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছেন দীর্ঘদিন।
২০১২ সালের জানুয়ারিতে নগরীর প্রথম ও নির্দলীয় মেয়র নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী হয়ে হেরেছিলেন তার বাবা আফজাল খান, সে সময়ে বিজয়ী প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুর বিরুদ্ধে এবার দলীয় প্রতীক নৌকার টিকেটে লড়ছেন কুমিল্লার প্রভাবশালী আফজাল পরিবারের মেয়ে সীমা।
১৯৭১ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর জন্ম নেওয়া সীমার শিক্ষাগত যোগ্যতা বিএ ও বিএড পাস বলে উল্লেখ করা হয়েছে নির্বাচনী হলফনামায়।
গতবার বিএনপির পদ ছেড়ে দলীয় সমর্থন নিয়ে মেয়র পদে জয়ী মনিরুল হক সাক্কু এবার লড়ছেন দলের ধানের শীষ প্রতীকে, পেশায় ব্যবসায়ী সদর দক্ষিণ বিএনপির এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে তেমন উন্নয়ন করতে পারেননি বলে অভিযোগ রয়েছে স্থানীয়দের।
দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পাশাপাশি বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য পদে থাকা সাক্কুর জন্ম ১৯৬২ সালের ১১ ডিসেম্বরে।
বৃহস্পতিবার সকালে বজ্রপুরের হোচ্ছামিয়া স্কুল কেন্দ্রে ভোট দেবেন তিনি।
মেয়র পদে প্রধান দুই দলের পাশাপাশি জেএসডির শিরীন আক্তার এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী অবসরপ্রাপ্ত মেজর মামুনূর রশীদও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
দলীয় তারা মার্কায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ‘মৌসুমী ব্যবসায়ী’ শিরীন; আর পেশায় ওষুধ ব্যবসায়ী অবসরপ্রাপ্ত মেজর মামূনের প্রতীক টেবিল ঘড়ি।
নির্বাচনে ২৭টি ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নয়টি ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিলর পদের জন্য মোট ১৫৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
বুধবার ভোটের শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতির মধ্যে সিটি কর্পোরেশনের এলাকার এক প্রান্তে ওই বাড়ি ঘেরাও করে পুলিশ। এ ঘটনা জনমনে কিছুটা আতঙ্ক তৈরি করলেও নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা রকিব উদ্দিন মণ্ডল বলছেন, এতে ভোটগ্রহণে কোনো প্রভাব পড়বে না।
“এটা কেন্দ্র থেকে অনেক দূরে। এটাতে ভোটগ্রহণ অ্যাফেক্টেড হবে না।”
জঙ্গি আস্তানা ঘিরে পুলিশের অবস্থানে উদ্বিগ্ন না হতে ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা।
নির্বাচনের পরিবেশ নির্বিঘ্ন রাখতে সেখানে ভোটের পর অভিযান চালানোর ঘোষণা দিয়েছে পুলিশ।
ইসি সচিবালয় জানিয়েছে, ভোট দিতে জাতীয় পরিচয়পত্রের কোনো দরকার নেই। যারা জাতীয় পরিচয়পত্র পাননি তারাও ভোট দিতে পারবেন।
যে কোনো মোবাইল থেকে ১০৫ নম্বরে এসএমএস করে ভোটাররা কেন্দ্রের নাম, ভোটার নম্বর ও ক্রমিক নম্বর জানতে পারবেন।
সেক্ষেত্রে PC লিখে স্পেস দিয়ে ১৭ ডিজিটের এনআইডি নম্বর টাইপ করে ১০৫ নম্বরে পাঠালে ফিরতি এসএমএস-এ ভোটকেন্দ্রের নাম, ভোটার নম্বর ও ক্রমিক নম্বর পাওয়া যাবে।
এনআইডি নম্বরের ১৭ ডিজিট ব্যবহার করতে হবে। যাদের এনআইডি নম্বর ১৩ ডিজিটের তাদের শুরুতে জন্মসালটি যুক্ত করতে হবে।