‘অস্ত্র-বিস্ফোরক বানানো শিখছিল’ দোহারে গ্রেপ্তার জঙ্গিরা

ঢাকার দোহার থেকে জেএমবির ‘সরোয়ার-তামিম গ্রুপের’ সদস্য অভিযোগে গ্রেপ্তার চারজন জঙ্গি কর্মকাণ্ডে ব্যবহারের জন্য বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র বানানো ও ইম্প্রোভাইজড ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইস-আইইডি বানানো শিখছিল বলে জানিয়েছে র‌্যাব।

অপরাধ বিষয়ক প্রধান প্রতিবেদকও আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 March 2017, 12:26 PM
Updated : 29 March 2017, 02:16 PM

র‍্যাব সদস্যরা জানান, এদের মধ্যে একজন ইতোমধ্যে কয়েকটি অস্ত্র বানিয়ে বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করেছে। আর একজন মোবাইল মেকানিকের কাজ শেখার আড়ালে ইম্প্রোভাইজড ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইস-আইইডি বানানো শিখছিল।

গ্রেপ্তার এ চার জঙ্গি নারায়ণগঞ্জে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নিহত তামিম চৌধুরীর সঙ্গে বিভিন্ন কোড ব্যবহার করে যোগাযোগ করত বলেও বুধবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান র‍্যাব-১০ এর অধিনায়ক জাহাঙ্গীর হোসেন মাতুব্বর।

দোহারের বিভিন্ন এলাকা থেকে মঙ্গলবার গ্রেপ্তার এই চারজনের মধ্যে মেজবাহ উদ্দিন (১৯) এবং মো. মাহফুজ (১৬) নামের দুই ভাই রয়েছে। তারা দোহারের মাঝিপাড়া গ্রামের সৌদি আরব প্রবাসী আবু বক্করের ছেলে।

গ্রেপ্তার বাকি দুজন হচ্ছে- তাইবুর রহমান (১৮) ফয়সাল আহমেদ সানিল (১৯)।

সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা দিয়ে বিকালে তাদের ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে পাঠানো হলে হাকিম আব্দুল্লাহ আল মাসুদ গ্রেপ্তার মাহফুজ বাদে অন্য তিনজনকে রিমান্ডে পাঠান।

র‌্যাব কর্মকর্তা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাজ্জাদ হোসেন ১০ দিন করে রিমান্ডে চাইলেও বিচারক শুনানি শেষে পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান এ আদালত সংশ্লিষ্ট পুলিশের এসআই মাসুম হোসেন।

তিনি বলেন, এ সময় তাদের পক্ষে কোনো আইনজীবী দাঁড়াননি।

গ্রেপ্তার চারজনই মাদ্রাসার ছাত্র জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব জানায়, এদের মধ্যে শুধু ফয়সলের বাড়ি কেরাণীগঞ্জে। তবে চারজনের বাবাই ১০ থেকে ১২ বছর ধরে সৌদি আরবে থাকেন। তারা মায়ের সঙ্গেই গ্রামের বাড়িতে থাকে।

মোবাইলে বিভিন্ন অ্যাপসের মাধ্যমে জঙ্গিদের সঙ্গে যোগাযোগের পর তারা জঙ্গি তৎপরতায় জড়িয়ে যায় বলে জানিয়ে র‌্যাব অধিনায়ক জাহাঙ্গীর হোসেন মাতুব্বর বলেন, “তারা জেএমবির সারোয়ার- তামিম গ্রুপের সদস্য।

“গত ২০ মার্চ রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার পাঁচ জঙ্গিকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এ চারজনের সন্ধান পাওয়া যায়।”

এদের মধ্যে মেজবাহ নবাবগঞ্জ উপজেলার সোনা হাজরা মাদ্রাসার ছাত্র ফাজিল প্রথম বর্ষের ছাত্র জানিয়ে র‌্যাব কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর বলেন, “পড়ালেখার পাশাপাশি মোবাইল সার্ভিসিং দোকানে মেকানিক হিসাবে কাজ করত মেজবাহ। কথিত এক বড় ভাইয়ের মাধ্যমে সে বিভিন্ন উগ্রবাদী বই, লিফলেট পেয়ে এবং অনলাইনে বিভিন্ন সাইটের মাধ্যমে ধর্মীয় উগ্রবাদে জড়িয়ে পড়ে।”

এরপর ২০১৫ সালের শেষের দিকে জেএমবির সারোয়ার-তামিম গ্রুপের সঙ্গে মেজবাহ যুক্ত হয় জানিয়ে তিনি বলেন, “এক পর্যায়ে সে এই গ্রুপের বিভিন্ন সভাতে যোগ দেয় বলে র‌্যাবকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে।

“সে মোবাইল মেকানিকের আড়ালে জেএমবির হয়ে বিভিন্ন প্রকার ‘ইম্প্রোভাইজ ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস’ তৈরির কাজ শিখছিল।”

এদিকে মেজবাহর ছোটভাই মাহফুজ মাদ্রাসায় প্রাথমিক শিক্ষা নেওয়ার পর দোহারের জয়পাড়া টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে।

বড় ভাই মেজবাহর প্ররোচনায় মাহফুজ জঙ্গিবাদে জড়ায় জানিয়ে জাহাঙ্গীর বলছেন, “নিজ হাতে বেশ কিছু অস্ত্র তৈরি করেছে সে। এরমধ্যে কয়েকটি অস্ত্র বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহও করা হয়েছে।”

ফয়সাল সম্পর্কে র‌্যাব কর্মকর্তা জানান, ২০১৫ সালে মাদ্রাসা শিক্ষা শেষ করে রানাকান্দা ইস্পাহানি কলেজে পড়ালেখা শুরু করে। পরে মিজবাহর সঙ্গে পরিচয় হলে ২০১৬ সালে জঙ্গি কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়ে।

“এরই মধ্যে সে চট্টগ্রামে অস্ত্র প্রশিক্ষণও নিয়েছে। গত ২৬ মার্চ হঠাৎ করে বাসা থেকে উধাও হয়ে যায়। কাউকে না জানিয়ে বাসা থেকে চলে যাওয়ার বিষয়ে তার মা কেরাণীগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও করেছেন।”

গ্রেপ্তার তাইবুরও স্থানীয় একটি মাদ্রাসার ছাত্র। সেও মেজবাহর প্ররোচনায় জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয় বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান র‌্যাব-১০ অধিনায়ক।

র‌্যাব কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর বলেন, “প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা ‘জিহাদে’ আছে বলে জানিয়েছে। আর তাদের মতে, এই ‘জিহাদ’ মানে কাফেরদের মেরে ফেলা।

“তারা মনে করে, মুসলিম ধর্ম ছাড়া অন্য ধর্মের সকলে কাফের; বর্তমান সরকারকে যারা ভোট দেয়, তারা কাফের। আর বর্তমান সরকারকে যেসব আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যরা সহায়তা করে, তারা কাফের।”

এদের সবার পেছনে একজন বড়ভাই আছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “এই বড়ভাইয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী তারা তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে। কথিত কাফেরদের হত্যা বা কোথাও হামলার সুনির্দিষ্ট নির্দশনার অপেক্ষায় তারা ছিল।”

তামিমের সঙ্গে যোগাযোগের কোডের বিষয়ে র‌্যাব কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর জানান, “তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া মোবাইল, ল্যাপটপে বেশ কিছু কোড পাওয়া গেছে। যেগুলো তামিমের সাথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হতো।

“তারা তামিরে সাথে সরাসরি যোগাযোগ রক্ষা করতো কিনা তা পরবর্তী জিজ্ঞাসাবাদকালে জানা যাবে।”

এ অভিযানে গ্রেপ্তারদের তিন শিশুও রয়েছে।

তাদের ব্যাপারে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানতে চাইলে এ ব্যাপারে আদালতে নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করা হবে বলে জানা  র‍্যাব অধিনায়ক।

তিনি বলেন, “আদালতের নির্দেশে যে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হবে, আমরা সেটাই করব।”

(প্রতিবেদনটি তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কেরানীগঞ্জ-দোহার প্রতিনিধি আসাদুজ্জামান সুমন)