কুমিল্লায় ‘জঙ্গি আস্তানা’ ঘেরাও, অভিযান ভোটের পর

মৌলভীবাজারে অভিযানের মধ্যেই কুমিল্লা শহরের কোটবাড়ী এলাকায় আরও এক বাড়ি জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে ঘিরে রেখেছে পুলিশ।

নিজস্ব প্রতিবেদকও কুমিল্লা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 March 2017, 11:24 AM
Updated : 29 March 2017, 07:43 PM

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের আগের দিন শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতির মধ্যেই এই জঙ্গি আস্তানার খবর আসে।

কুমিল্লার এসপি শাহ মো. আবিদ হোসেন জানান, বুধবার দুপুরে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সদস্যরা কোটবাড়ীর দক্ষিণ বাগমারা বড় কবরস্থানের পাশে তিন তলা ওই বাড়ি ঘিরে ফেলেন।

কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের একজন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন স্থানে জঙ্গি আস্তানায় অভিযানে পাওয়া তথ্যেই তারা কুমিল্লার ওই বাড়ির সন্ধান পান।

কুমিল্লা শহরের কোটবাড়ী এলাকায় জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে এই বাড়িটি ঘিরে রেখেছে পুলিশ

কুমিল্লার পুলিশ সুপার ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, “ওই বাড়িতে কয়েকজন জঙ্গি আছে এবং তাদের কাছে বোমা থাকতে পারে বলে আমরা ধারণা করছি।”

কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, ওই ভবনের দোতলা পর্যন্ত লোকজন থাকে। তৃতীয় তলায় নির্মাণ কাজ চলছে। সন্দেহভাজন জঙ্গিরা নিচ তলায় আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে গোলাগুলির কোনো ঘটনা সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘটেনি।

কোটবাড়ী এলাকাটি কুমিল্লা শহরের এক প্রান্তে হলেও দেলোয়ার হোসেন নামের এক ব্যক্তির মালিকানাধীন ওই বাড়ি সিটি করপোরেশনের ভেতরেই পড়েছে। পাশেই উত্তর বাগমারা গন্ধমতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্বাচনের কেন্দ্রে। মহিলা ভোটারদের এই কেন্দ্রে ভোটার সংখ্যা দুই হাজারের বেশি।

পুলিশ জঙ্গি আস্তানা ঘিরে রাখলেও তাতে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা।

ভোটের পরিবেশ নির্বিঘ্ন রাখতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়ার কথা জানিয়ে সন্ধ্যায় তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পুলিশ সংশ্লিষ্ট বাড়ি ঘিরে রেখেছে। সেক্ষেত্রে ভোটের কোনো অসুবিধা হবে না। ভোটারদের নির্বিঘ্ন পরিবেশ নিশ্চিত করা হয়েছে। কোনোভাবেই আতঙ্কিত হবেন না।

“পুলিশ আমাকে জানিয়েছে, প্রয়োজন হলেই অভিযানের বিষয়ে পদক্ষেপ নেবে। তবে ভোটের মধ্যে এ অভিযান হবে না। প্রয়োজনে ভোট শেষে তারা অভিযান করবে।”

পরে রাত ১০টার দিকে কুমিল্লার এসপি আবিদ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভোট থাকায় ঘিরে রাখা বাড়িটিতে বৃহস্পতিবার কোনো অভিযান করব না আমরা। ভোটার ও সাধারণ মানুষের মনে যাতে কোনো আতঙ্ক না ছড়ায় সেজন্য এ পদক্ষেপ আমাদের।

“কাল (বৃহস্পতিবার) অভিযান না করে অপেক্ষা করব, যদি না আমরা বাধ্য হই। সেক্ষেত্রে পরিস্থিতি সাপেক্ষে ভোটের পরদিন শুক্রবার অভিযান করা হতে পারে।”

সাম্প্রতিক দুটি জঙ্গি আস্তানায় নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযান চলাকালে পাল্টাপাল্টি গুলি ও বোমার বিস্ফোরণে ওই সব এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। গত ১৬ মার্চ বিকালে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে একটি জঙ্গি আস্তানা ঘিরে ফেলার পরদিন ভোরে সেখানে চূড়ান্ত অভিযান চালানো হয়। গুলি ও বিস্ফোরণের শব্দে আতঙ্কের রাত কাটান এলাকাবাসী।

সর্বশেষ জঙ্গিবিরোধী অভিযান চলে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার একটি বাড়িতে। পাঁচদিনের ওই অভিযানের মধ্যেই পাশের একটি জায়গায় বোমা বিস্ফোরণে দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ ছয়জনের মৃত্যু হয়।

সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে পুলিশ সতর্ক রয়েছে জানিয়ে এসপি আবিদ বলেন, “শান্তিপূর্ণ ভোট করতে সব ব্যবস্থা রয়েছে। নিরাপত্তার চাদর পুরো নির্বাচনী এলাকায়।”

আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর প্রায় চার হাজার সদস্য মাঠে রয়েছে বলে জানান তিনি।

এদিকে জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে বুধবার ভোর থেকে মৌলভীবাজারের দুটি এলাকার দুই বাড়ি ঘিরে অভিযান শুরু করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। সেখানে দুটি বাড়ি থেকেই থেমে থেমে গুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যাচ্ছে।