২০১১ এ নিরপেক্ষ নির্বাচনে বাধ্য হয়েছিল রাষ্ট্র: আইভী

জনগণের চাওয়ার কারণে ২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে রাষ্ট্র নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে ‘বাধ্য হয়েছিল’ বলে মন্তব্য করেছেন মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 March 2017, 05:17 PM
Updated : 28 March 2017, 05:17 PM

আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার রাজধানীতে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) ‘টেকসই উন্নয়নে নারীর ক্ষমতায়ন, সমতা ও বৈষম্যহীনতা' বিষয়ক এক আলোচনায় এই মন্তব্য করেন তিনি।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়নে দ্বিতীয় মেয়াদে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র হওয়া আইভী ২০১১ সালে দলীয় নেতা এ কে এম শামীম ওসমানকে হারিয়ে প্রথম নগর ভবনের কর্তৃত্ব নিয়েছিলেন।

আইভী বলেন, “কোনো শক্তি আমাকে রুখতে পারেনি। আমার একটাই লক্ষ্য ছিল, আমাকে প্রতিবাদ করতে হবে। আমি সেখানে যেতে চেয়েছি এবং গিয়েছি।

“একটা পর্যায়ে রাষ্ট্র এসে বাধ্য হয়েছে নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে, জনগণের চাহিদা মোতাবেক এবং তাই হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের মানুষ ২০১১ সালে সত্যের পক্ষে রায় দিয়েছে। আর ২০১৬ সালের কথা তো সবাই জানেন।”

বিভিন্ন সময় ‘সত্য কথা’ বলার কারণে দলের মধ্যেও তাকে ‘সরকার বিরোধী’ তকমা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেন আইভী।

“বিভিন্ন কারণে আমি আবার বেশি সত্য কথা বলে ফেলি, তাতে অনেকে আবার বলে আমি নাকি সরকার বিরোধী। এজন্য কথা অনেকটা কমিয়ে দিয়েছি যে তা নয়, কিন্তু বলার সময় খুব সংযতভাবে বলতে হয়। সত্য কথা বলতে পারি না অনেক সময়। আবার অনেক সত্য আসলে নির্মম, বলাও যায় না, ওভারকাম করে নিতে হয়। আমি এত পাকা রাজনীতিবিদ না বলে, সরাসরি কথা বলতাম বলে আমাকে অনেক বিপদের সম্মুখীন হতে হয়েছে।”

ক্ষমতায় আসার পথে পুরুষদের তৈরি করা বিভিন্ন বাধা পার হওয়ার কথাও জানান বাংলাদেশে সিটি করপোরেশনে প্রথম নারী মেয়র আইভী।

“অনেক চড়াই-উৎরাই পার হয়ে আমাকে আসতে হয়েছে, একজন নারী হওয়ায় শুধু। আমাকে প্রতিদিন বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করে আসতে হয়। প্রথমে তো মানতেই চায় না, ওখানে যারা কাউন্সিলর ছিলেন তারা। ওখানের এনভায়রনমেন্টটা এমন ছিল যে লেখাপড়া করে ডাক্তার হইছে- হাসপাতালে যা, এখানে কেন? এই এখানে কেন-এর প্রমাণ দিতে আমাকে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে।”

সব বাধা পেরিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে গিয়ে সম্মানহানির ঝুঁকি নেওয়ার কথাও বলেন আইভী।

“আত্মসম্মান গেছে, বদনাম হইছে।ফেস্টুন লাগিয়ে শহর ভরে ফেলছে। একজন নারীকে কীভাবে নির্যাতন করা যায়, যাতে নারী পিছিয়ে সব ছেড়ে যায়। এখনও ছেড়ে যাইনি, কিন্তু বলিনি যে তাও নয়। ইমোশনকেও কন্ট্রোল করতে হয়, কিন্তু মানুষ হিসেবে সব কন্ট্রোল করা যায় না।”

‘বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন’ এ কম বয়সে বিয়ের বিধান রাখার সমালোচনা করেন আওয়ামী লীগের নেতা আইভী।

“প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞতা, তিনি নারীদের জন্য অনেক করছেন। কিন্তু বাল্যবিবাহ আইনে আমি জানি না কেন এই ফাঁকটা রাখা হয়েছে। আমি সম্পূর্ণ দ্বিমত পোষণ করছি এর সাথে, এটি চেঞ্জ করা দরকার। তবে সেইদিন আর বেশি দূরে নয়, যেদিন আমাদের নারীরা চাইবে না যে ১৫, ১৬ বা ১০ বছরে বিয়ে হোক। তারা প্রতিবাদ করবে।”

সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন না রাখার পক্ষেও মত জানান নির্বাচিত এই জনপ্রতিনিধি।

“সরাসরি নির্বাচন করে আসবো, সংরক্ষিত থাকতে চাই না। কেউ আড় চোখে দেখুক, বাঁকা চোখে দেখুক, কেউ বলুক শোপিস রাখা- এ জিনিসটায় নিজেদের অসম্মানিত করতে চাই না।”

পিকেএসএফ মিলনায়তনে এ আলোচনায় প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি কাজী খলীকুজ্জমানের সভাপতিত্বে প্রতিষ্ঠানটির ১৩৬টি সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ‘স্বাবলম্বী উন্নয়ন সমিতি’ এর নির্বাহী পরিচালক বেগম রোকেয়া।