তিনি বলেছেন, “অল্প সময়ের মধ্যে একটা যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশ গড়ে তোলা এত সহজ কাজ ছিল না। কিন্তু এখন আমার মাঝে মাঝে এটাই দুঃখ হয়, তখনতো কেউ সময় দেয়নি।
“কত সমালোচনা! এটা হল না, ওটা হল না, নানা ধরনের কথা, কত কিছু। মনে হল যেন, সেই সময় ওনার বিরুদ্ধে সমালোচনা করতে করতে স্বাধীনতার পরাজিত শক্তি, তাদের হাতকেই যেন শক্তিশালী করে দিল।
স্বাধীনতার পর পাকিস্তানের বন্দিশালা থেকে মুক্ত হয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে ফেরেন শেখ মুজিবুর রহমান। রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে দেশ পুনর্গঠনে মনোযোগ দেন তিনি।
সাড়ে চার বছরের মাথায় ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট একদল সেনা সদস্যের হাতে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ নিহত হন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিব।
বাঙালির স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া বঙ্গবন্ধুর জীবনের একটি বড় সময় কেটেছে কারাগারে। বন্দি দশায় তার লেখা দিনলিপি নিয়ে প্রকাশিত ‘কারাগারের রোজনামচা’ বইয়ের প্রকাশনা উৎসব হয় মঙ্গলবার।
রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে এই প্রকাশনা উৎসবে প্রধানমন্ত্রী জানান, বঙ্গবন্ধুর লেখা এই দিনলিপির খাতাটি পুলিশের বিশেষ শাখা এসবির সহায়তার ২০১৪ সালে খুঁজে পাওয়া যায়। এই খাতাটি পাকিস্তান সরকার বাজেয়াপ্ত করেছিল।
“আমরা জানতাম যে, আমার বাবা দেশের মানুষের জন্য কাজ করেন। তাই আমাদের কোনও আবদার, কোনও কিছুই বাবার কাছে ছিল না। বরং যতটুকু সময় উনি বাইরে থাকতেন এত স্নেহ আদর দিতেন যে না পাওয়ার বেদনা ভুলে যেতাম।”
স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বিভিন্ন সময় অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন প্রধানমন্ত্রী।
বাবার লেখার পেছনে মায়ের ভূমিকা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “মায়ের কথা বারবার মনে পড়ে। লেখার জন্য বারবার উৎসাহ দিতেন। যখনই বাবা গ্রেপ্তার হতেন, লেখার জন্য খাতা দিতেন এবং সেগুলো সযত্নে সংরক্ষণ করতেন।”
বাবার লেখাগুলো প্রকাশ করতে পারাকে স্বার্থকতা হিসেবে দেখছেন তিনি।
“এত ঝড়, ঝঞ্ঝা এত কিছুর পরেও লেখাগুলিকে আমরা খুঁজে পেয়েছি।”
“কোনো কিছু চাওয়া-পাওয়া নেই। শুধু এদেশের মানুষকে কিছু দিয়ে যেতে চেয়েছেন। রাষ্ট্র দিয়ে গেছেন, আত্মপরিচয়ের সুযোগ দিয়ে গেছেন, ঠিকানা দিয়ে গেছেন।
“তাকে যারা ইতিহাস থেকে মুছে ফেলতে চেয়েছিলেন তারা তা পারেন নাই।”
শেখ হাসিনা বলেন, “আমার একটাই কাজ। তার স্বপ্নের সেই ‘সোনার বাংলা’ গড়ে তোলা।”
বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আরও বই প্রকাশ করা হবে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগে পাকিস্তান সরকারের পুলিশের বিশেষ শাখা বিভিন্ন সময় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ৩০ থেকে ৪০ হাজার পৃষ্ঠার প্রতিবেদন দিয়েছিল। সেই প্রতিবেদন নিয়ে একটি বই প্রকাশিত হবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “তা থেকে একদিকে তার জীবনী পাওয়া যাবে, আরেক দিকে বাংলাদেশের অভ্যুত্থানের অনেক কথাও পাওয়া যাবে। কীভাবে তিনি কাজ করেছেন, কীভাবে রাজনৈতিক দল গঠন করেছেন, কীভাবে সারা বাংলাদেশ ঘুরে বেড়িয়েছেন সবকিছুই সেখানে আছে।”
“কীভাবে বঙ্গবন্ধু একটি দেশকে স্বাধীন করেছেন তাও ওই বই থেকে জানা যাবে।”
এছাড়া আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার তথ্য নিয়েও আরেকটি বই প্রকাশিত হবে বলে জানান শেখ হাসিনা।
৩৩২ পৃষ্ঠার এই বইয়ের দাম রাখা হয়েছে ৪০০ টাকা। ৩০ শতাংশ কমিশনে ২৮০ টাকায় বইটি বিক্রি করা হচ্ছে।
এর আগে ২০১২ সালে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিকথা নির্ভর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ প্রকাশিত হয়।
এমিরেটাস অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে প্রকাশনা উৎসবে বইটির ওপর আলোচনা করেন অধ্যাপক মুনতাসির মামুন ও অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নুর ও বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান।