আলোকচিত্রী আফতাব হত্যায় ৫ জনের ফাঁসির রায়

রায়ে বলা হয়, “সবুজ শুধু বাড়ি পাহারার দায়িত্বে ছিল। খুনের সঙ্গে সে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত ছিল না। তার বয়স ১৮। বয়স বিবেচনায় তাকে স্বল্পমেয়াদের শাস্তি দেওয়া হল।”

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 March 2017, 05:46 AM
Updated : 29 March 2017, 01:02 PM

রাজধানীর রামপুরায় ডাকাতি করতে গিয়ে ফটো সাংবাদিক আফতাব আহমেদকে হত্যার দায়ে পাঁচ আসামির ফাঁসির রায় দিয়েছে আদালত।

ঢাকার চার নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আব্দুর রহমান সরদার মঙ্গলবার এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।

২০১৩ সালের ২৪ ডিসেম্বর রাতে পশ্চিম রামপুরা ওয়াপদা রোডে নিজের বাসায় খুন হন ফটো সাংবাদিক আফতাব আহমেদ (৭৮)।

তার গাড়ি চালক মো. হুমায়ুন কবীর মোল্লা এবং এ মামলার অপর চার আসামি বিল্লাল হোসেন কিসলু, হাবিব হাওলাদার,  মো. রাজু মুন্সী ও মো. রাসেলকে ডাকাতি ও হত্যায় জড়িত থাকার দায়ে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত। 

অপর আসামি মো. সবুজ খানকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে রায়ে।

রায়ে বলা হয়, “সবুজ শুধু বাড়ি পাহারার দায়িত্বে ছিল। খুনের সঙ্গে সে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত ছিল না। তার বয়স ১৮। বয়স বিবেচনায় তাকে স্বল্পমেয়াদের শাস্তি দেওয়া হল।”

আসামিদের মধ্যে রাজু মুন্সী ও মো. রাসেল পলাতক। বাকি আসামিরা রায়ের সময় কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন।

সাজা শুনে আসামি সবুজকে কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা গেলেও সর্বোচ্চ সাজার রায় পাওয়া পাঁচ আসামিকে নির্বিকার দেখা যায়।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মাহফুজুর রহমান লিখন রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী এইচ এম মজিবুর রহমান রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেছেন, তারা আপিল করবেন।

আফতাবের বড় মেয়ে আফরোজা আহমেদ বন্যা রাযের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “সবুজের ফাঁসি হওয়া উচিত ছিল। আর দুই পলাতক আসামিকে তাড়াতাড়ি গ্রেপ্তার করা হোক।”

রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক আলোকচিত্রী আফতাবের পেশাগত অবদানের কথা তুলে ধরেন। স্বাধীনতা যুদ্ধকালে তার ক্যামেরা হাতে সক্রিয়তা এবং একুশে পদক পাওয়ার কথা বলেন তিনি।

বিচারক বলেন, “এ ধরনের খ্যাতিমান প্রবীণ সাংবাদিককে ডাকাতি সংঘটনকালে নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে হত্যার বিষয়টি আদৌ গ্রহণযোগ্য নয়; এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। দেশে আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠাকল্পে এ ধরনের ডাকাতিসহ খুনের মামলায় আসামিদের উপযুক্ত শাস্তি হওয়া একান্ত প্রয়োজন।”

২০০৬ সালে একুশে পদক পাওয়া আফতাব দীর্ঘদিন ইত্তেফাকের জ্যেষ্ঠ আলোকচিত্রী হিসাবে কাজ করেন। তার গ্রামের বাড়ি রংপুরের গঙ্গাচড়ায়। ঢাকার পশ্চিম রামপুরার ৬৩ নম্বর হোল্ডিংয়ে একটি চারতলা ভবনের তৃতীয় তলার বাসায় থাকতেন তিনি।  

তার দুই সন্তানের মধ্যে ছেলে মনোয়ার আহমেদ থাকেন যশোরে। আর মেয়ে আফরোজা আহমেদ তার স্বামী ফারুক আহমেদের সঙ্গে থাকেন গাজীপুরে।  

২০১৩ সালের ২৪ ডিসেম্বর রাতে নিজের বাসায় খুন হন ৭৮ বছর বয়সী আফতাব। পরদিন সকালে পুলিশ তার হাত-পা বাঁধা লাশ উদ্ধার করে।

নিহতের শ্যালক মনোয়ার আহমদ সাগর ওই ঘটনায় রামপুরা থানায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। তদন্ত চলাকালে আফতাবের গাড়ি চালক মো. হুমায়ুন কবীরসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার লুট করার সময় বাধা দেয়ার কারণেই আফতাবকে হত্যা করা হয় বলে সে সময় তদন্তকারীদের পক্ষ থেকে জানানো হয়। আসামিদের মধ্যে হাবিব, বিল্লাল ও হুমায়ুন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দেন।

তদন্ত শেষে পরের বছর ২৫ মার্চ আদালতে অভিযোগপত্র দেন র‌্যাব-৩ এর উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আশিক ইকবাল।

এই মামলায় অভিযোগপত্র থেকে অব্যাহতি পাওয়া মো. মিজানের নাম-ঠিকানা উদ্ঘাটন করা সম্ভব হয়নি বলে তা পরে পাওয়া গেলে সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে বলে তদন্ত কর্মকর্তা জানিয়েছিলেন। কিন্তু তা হয়নি।

এ মামলার তিনজন আসামি নিজেদের দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছিলেন। তারা হলেন-বিল্লাল ওরফে কিসলু, হাবিব হাওলাদার এবং হুমায়ুন কবির।”

ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ ২০১৪ সালের ২৪ জুলাই অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে এ মামলার বিচার শুরু করেন। দণ্ডবিধির ৩৯৬ ধারায় ‘ডাকাতি করতে গিয়ে হত্যার’ অভিযোগ আনা হয় ছয় আসামির বিরুদ্ধে।

ওই আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে মাস দেড়েক আগে মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে আসে। এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে মোট ২০ জনের সাক্ষ্য শোনে আদালত। আসামিপক্ষ কোনো সাক্ষী হাজির করতে পারেনি।

দুই পক্ষের যুক্তিতর্কের শুনানি শেষে গত ২০ মার্চ বিচারক রায়ের জন্য ২৮ মার্চ দিন ঠিক করে দেন।