সিলেটে অভিযানের চতুর্থ দিনে থেমে থেমে গুলি

সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়িতে জঙ্গি আস্তানা ঘিরে অভিযান গড়িয়েছে চতুর্থ দিনে।

সিলেট প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 March 2017, 04:09 AM
Updated : 27 March 2017, 05:52 AM

রোববার বিকাল থেকে বেশ কিছু সময় চুপচাপ থাকার পর মধ্যরাতে ওই বাড়ি থেকে বিস্ফোরণ ও গুলির শব্দ পাওয়া যায়। সোমবার সকালে সোয়া ৬টার পর আবারও বেশ কিছু সময় থেমে থেমে গুলি এবং বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া গেছে বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।

রোববার বিকালে এক ব্রিফিংয়ে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল আহসান জানিয়েছিলেন, আতিয়া মহল নামের ওই বাড়িতে অন্তত দুই জঙ্গি মারা পড়েছে এবং ভেতরে আরও জঙ্গি রয়েছে বলে তাদের ধারণা।

ভেতরে অবস্থানরত জঙ্গিরা বেশ কৌশলী জানিয়ে তিনি বলেন, অভিযানে ‘ভালো’ ঝুঁকি রয়েছে। ফলে বলা যাচ্ছে না, কখন তা শেষ হবে।

গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে একই ব্যক্তির মালিকানাধীন পাঁচ তলা ও চার তলা বাড়ি দুটি জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে ঘিরে ফেলে পুলিশ। শনিবার সকালে শুরু হয় সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো ব্যাটালিয়নের ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’।

সেদিন ব্যাপক গোলাগুলির মধ্যে বাড়ির ভেতরে আটকে পড়া ৭৮ জনকে উদ্ধার করেন কমান্ডোরা। এই অভিযানের মধ্যেই সন্ধ্যায় কাছেই এক এলাকায় দুই দফা বিস্ফোরণে দুই পুলিশ সদস্যসহ ছয়জন নিহত হন।

বিস্ফোরণে হতাহতের পর শনিবার মধ্যরাত থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকায় সব ধরনের বেসামরিক যান চালাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। ওই এলাকায় জনসাধারণের চলাচলও নিয়ন্ত্রিত করা হয়েছে বলে সিলেটের পুলিশ কমিশনার গোলাম কিবরিয়া জানান।

যে বাসায় জঙ্গিরা আস্তানা গেড়েছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে, সেটি কাউছার আলী ও মর্জিনা বেগম নামে এক দম্পতি তিন মাস আগে ভাড়া নেন বলে বাড়ির মালিক উস্তার আলীর ভাষ্য। শুক্রবার অভিযানের সময় ওই বাসা থেকে এক নারী ও এক পুরুষের সাড়াও পাওয়া গিয়েছিল।

তবে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, যে দুজন নিহত হয়েছে বলে তারা ধারণা করছেন, তাদের দুজনই পুরুষ। ভেতরে কোনো নারী আছেন কি না, সে বিষয়ে কমান্ডোরা নিশ্চিত হতে পারেননি, তবে থাকতেও পারে। 

রোববার বিকালে পাঠানপাড়া মসজিদ প্রাঙ্গণে ব্রিফিংয়ে এসে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল বলেন, বাড়ির ভেতরে থাকা জঙ্গিদের কাছে ‘স্মল আর্মস’, এক্সপ্লোসিভ ও আইইডি আছে। তারা সবাই সুইসাইড ভেস্ট পরে আছে। ভবনের বিভিন্ন স্থানে তারা আইইডি পেতে রাখায় পুরো বাড়ি বিপদজনক অবস্থায় রয়েছে। ফলে অভিযানে সময় লাগছে।

“আমরা যে গ্রেনেড ছুড়েছি, তারা সেগুলো ধরে উল্টা আবার আমাদের দিকে নিক্ষেপ করেছে। টিয়ার শেল ছুড়লে যে আগুন জ্বালাতে হয়, তারা এসব টেকনিক জানে।”

এদিকে শনিবার সকালে কমান্ডো অভিযান শুরুর আগে ওই এলাকার বিদ্যুৎ ও গ্যাস-সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। কেউ কেউ এলাকা ছেড়ে গেলেও যারা এখনও রয়ে গেছেন, তাদের সময় কাটছে উদ্বেগ-আতঙ্কের মধ্যে।

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা দোকান খুলতে পারছেন না। জরুরি কাজে বাইরে যাওয়া এবং বাড়ি ফিরতেও সমস্যা হচ্ছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল রোববার সাংবাদিকদের প্রশ্নে জবাবে বলেন, আতিয়া মহলের ভেতরে ‘বড়’ কোনো জঙ্গি থাকতে পারে। তবে সেনাবাহিনী বলছে, তারা যেহেতু জঙ্গিদের পরিচয় নিয়ে কাজ করেন না, পুলিশ বা অন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলো হয়তো এ বিষয়ে ধারণা দিতে পারবে।