সারা দেশে পুলিশের সতর্কতা

সিলেটের জঙ্গি দমন অভিযানের মধ্যে বোমা বিস্ফোরণ ও হতাহতের ঘটনার প্রেক্ষাপটে সারা দেশে পুলিশ সদস্যদের সতর্ক করেছে পুলিশ মহা পরিদর্শকের দপ্তর।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 March 2017, 12:13 PM
Updated : 26 March 2017, 12:47 PM

পুলিশের উপ মহাপরিদর্শক (মিডিয়া) এ কে এম শহীদুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গতকাল দেশের প্রত্যেক রেঞ্জ ও প্রতিটি জেলায় পুলিশ কর্মকর্তাদের এই নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে।”

নিরাপত্তা জোরদারের অংশ হিসেবে ঢাকার মিরপুরের কালসি সড়কে রোববার বাঙ্কার বসিয়ে পাহারা দিতে দেখা গেছে পুলিশকে।

বৃহস্পতিবার গভীর রাতে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়িতে একটি জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পাওয়ার পর তা ঘিরে ফেলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

প্রায় ৩০ ঘণ্টা ওই বাড়ি ঘিরে রাখার পর সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো দল ওই বাড়িতে চূড়ান্ত অভিযান শুরু করে এবং বিভিন্ন ফ্ল্যাটে আটকে থাকা বাসিন্দাদের উদ্ধার করেন।

সন্ধ্যায় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ কারার পরপরই কাছাকাছি পাঠানপাড়া এলাকায় দুই দফা বিস্ফোরণ ঘটে। এতে দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ ছয়জন নিহত হন, আহত হন র‌্যাব-পুলিশের তিন কর্মকর্তাসহ অন্তত ৪৩ জন।

গতবছর জুলাই মাসে গুলশান ও শোলাকিয়ায় হামলার পর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক অভিযানের মধ্যে বেশ কিছুদিন পরিস্থিতি শান্ত থাকলেও এ বছর মার্চের শুরু থেকে জঙ্গিরা নতুন করে তাদের তৎপরতার জানান দিতে শুরু করে।

৬ মার্চ: হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নান ও তার সহযোগীদের আদালত থেকে কাশিমপুর কারাগারে ফিরিয়ে নেওয়ার পথে প্রিজন ভ্যানে হামলা চালিয়ে তাদের ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা হয়।

৭ মার্চ: কুমিল্লায় একটি বাসে তল্লাশির সময় পুলিশের দিকে বোমা ছোড়ার পর ধরা পড়ে ‘নব্য জেএমবির’ দুই জঙ্গি। তাদের মধ্যে একজনকে সঙ্গে নিয়ে ওই রাতে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে অস্ত্র ও বোমা উদ্ধার করে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট।

১৫ মার্চ: সীতাকুণ্ড পৌর এলাকার আমিরাবাদের এক বাড়ি থেকে বিস্ফোরকসহ এক জঙ্গি দম্পতিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে প্রেমতলা এলাকায় আরেক বাড়িতে অভিযানে যায় পুলিশ।

১৬ মার্চ: দীর্ঘ ১৯ ঘণ্টা ঘেরাও করে রাখার পর প্রেমতলার ওই বাড়িতে শুরু হয় ‘অপারেশন অ্যাসল্ট সিক্সটিন’। আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ও গুলিতে এক নারীসহ চার জঙ্গি নিহত হন। এছাড়া ভেতরে বোমায় বিক্ষত এক শিশুর লাশ পাওয়া যায়।

১৭ মার্চ: শুক্রবার দুপুরে জুমার নামাজের সময় আশকোনায় র্যাবের একটি ব্যারাকে ঢুকে পড়ার পর শরীরে বাঁধা বোমার বিস্ফোরণে নিহত হয় সন্দেহভাজন এক জঙ্গি।

১৮ মার্চ: মোটর সাইকেল আরোহী এক ব্যক্তি ভোর সাড়ে ৪টার দিকে খিলগাঁওয়ের ‘শেখের জায়গা’ মোড়ের কাছে চেক পোস্টে ঢুকে পড়ার পর র্যাব সদস্যদের গুলিতে নিহত হন এক ব্যক্তি। র্যাব কর্মকর্তারা বলছেন, হামলাকারীর দেহে বিস্ফোরক বাঁধা ছিল।

২৩ মার্চ: সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়িতে ‘আতিয়া মহল’ নামে একটি পাঁচ তলা বাড়িতে জঙ্গি আস্তানা থাকার খবর পেয়ে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট সেখানে গেলে ভেতর থেকে গ্রেনেড ছোড়া হয়। এরপর পুলিশ ওই বাড়ি ঘিরে ফেলে, পরে তাদের সঙ্গে যোগ দেন সোয়াট সদস্যরা। সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো দল পরদিন ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’ শুরু করেন। উদ্ধার করা হয় আটকে পড়া বাসিন্দাদের। চলতে থাকে গোলাগুলি আর জঙ্গিদের বোমা বিস্ফোরণ। ৫৬ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও সে অভিযান এখনও শেষ হয়নি।    

২৪ মার্চ: ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দর গোলচত্বর সংলগ্ন পুলিশ বক্সের সামনে বিস্ফোরণে নিহত হন এক তরুণ। তার সঙ্গে থাকা ট্রলি ব্যাগেও কয়েকটি শক্তিশালী বিস্ফোরক পাওয়া যায়।

২৫ মার্চ: সিলেটে আতিয়া মহল ঘিরে অভিযানের মধ্যেই বাইরে জোড়া বোমা বিস্ফোরণে দুই পুলিশ সদস্যসহ ছয়জন নিহত হন। র‌্যাবের গোয়েন্দাপ্রধানসহ আরও অন্তত ৪৩ জন আহত হন ওই ঘটনায়।

পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও ঢাকায় চলতি মাসের ঘটনাগুলোতে গ্রেপ্তার ও নিহত জঙ্গিদের সবাই নব্য জেএমবির সদস্য বলে তাদের ধারণা।

২০০৫ সালের ১৭ অগাস্ট দেশের ৬৩টি জেলায় একযোগে বোমা হামলা চালিয়ে নিজেদের অস্তিত্বের জানান দিয়েছিল নিষিদ্ধ সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ- জেএমবি।