‘মুক্তিযোদ্ধা’ কবিতা পড়ে গ্রেপ্তার হন আহকামউল্লাহ

রাজধানীতে বসন্তের কবিতা পাঠের আয়োজনে হাজির হয়ে বৈশ্বিক জঙ্গিবাদ এবং পঁচাত্তর পরবর্তী সামরিক শাসনের বাংলাদেশ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কবি ও আবৃত্তি শিল্পীরা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 March 2017, 06:02 PM
Updated : 24 March 2017, 07:45 PM

শুক্রবার রাতে জাতীয় জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে কবিকণ্ঠে প্রেমের পদাবলি নিয়ে ‘চিরবসন্তের চিঠি’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ল্যাবএইড ফাউন্ডেশন।

অনুষ্ঠানে আবৃত্তিশিল্পী আহ্কামউল্লাহ কবি কামাল চৌধুরীর 'মুক্তিযোদ্ধা' কবিতা আবৃত্তি করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যার পরবর্তী সময়ের চিত্র তুলে ধরেন।

“তখন এদেশে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বলতে যাওয়া ছিল অন্যায়। সেদিন নির্যাতিত হওয়ার শঙ্কা নিয়ে সাংস্কৃতিক লড়াইয়ে মাঠে নেমেছিলাম। নির্যাতিত হয়েছি, কারাগারেও গিয়েছি।”

কবিতাটি আবৃত্তি করায় গ্রেপ্তার হওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “সাতক্ষীরায় একটি অনুষ্ঠানে তৎকালীন জেলা প্রশাসক 'মুক্তিযোদ্ধা' কবিতাটি পড়তে বাঁধা দেন। এরপরও কবিতাটি পাঠ করে ঢাকায় আসার পথে আমাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। কবিতার জন্য এমন অনেক নির্যাতনের ঘটনা আমাদের অনেকের জীবনে ঘটে গেছে।"

চট্টগ্রাম থেকে আসা কবি সেলিনা শেলী কবিতা পাঠ করতে গিয়ে বৈশ্বিক জঙ্গিবাদের কথা তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, “বিশ্বব্যাপী আমরা দেখতে পাই জঙ্গিবাদ আমাদের সমস্ত প্রেম, সংসার তছনছ করে দিচ্ছে।"

জঙ্গিবাদের প্রেক্ষিতে লেখা ‘প্রেমচ্ছেদ’ কবিতাটিও অনুষ্ঠানে পাঠ করেন তিনি।

কবিতায় কবি বলেন,

“আজও এই প্রাক-পঞ্চাশে ভালোবাসতে গিয়ে টের পাই/

চুমু খেতে গিয়ে টের পাই/ আমার ঠোঁট জোড়া পুড়ে ছাই হয়ে গেছে/ ব্যবিলনে, মিশরে, ইরাক অথবা সিরিয়ায়।”

কবি রহমান হেনরি কবিতায় নারী দিবস ও পুরুষ দিবস উদযাপনকে নারী-পুরুষের বিভাজনের নতুন অস্ত্র বলে সমালোচনা করেছেন।

অনুষ্ঠানে কবিতার শক্তি তুলে ধরে কবি কামাল চৌধুরী বলেন, “কবিতা এমন একটি বিষয়, যা শিল্পের সমস্ত আয়োজনকে ধারণ করে। আপনি কবিতার মধ্যে গতি, ছন্দ পাবেন; এটি ভাষার সমস্ত দিককে ধারণ করে।”

কবিতা পাঠের পর্ব শেষে কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক বলেন, “অজস্র কবিতা পাঠ করা হল এখানে, আবার অজস্র অকবিতাও পাঠ করা হয়েছে। কিন্তু কবিতা তাই করে, কিছু কিছু জায়গায় চমকে ওঠে। 

“অনেক কথা, দৈনন্দিন কথার মধ্যে একটি বাক্যে এক মুহূর্তে সমস্ত অন্ধকার কেটে আলো করে তুলে। কবিতা সবকিছুকে অকস্মাৎ আলোকিত করে তুলে।”

বাংলা সাহিত্যের প্রধান কবিদের সবাই পৃথিবী ছেড়ে গেছেন মন্তব্য করে তিনি বলেন, “কবি কই আজ? কিন্তু কবিতা চিরঞ্জীব, তার মৃত্যু নেই। কবির মৃত্যু আছে, কবিতার মৃত্যু নেই।

“কবিতার পর ভাষার শেষ, নীরবতা। সব নিঃশেষিত হয়ে যায়; অনুভব, চিন্তা, সৃষ্টিক্ষমতা শেষ হয়ে যায়। আর কিছু প্রকাশ পায় না।”

হাসান আজিজুল হক বলেন, “কবিতা কোথা থেকে আসে? হৃদয়ের যত তল; সর্বশেষ তল সম্পর্কে যা আমরা জানি না, তা প্রকাশ করে কবিতা। এর কোনো সারাংশ নেই।

“কবিতার ব্যাখ্যা অসম্ভব, এটি বিশ্লেষণের বাইরে। বিশ্লেষণ করা হলে সেটি ততটা ভালো কবিতা হয়নি।”

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে কবিতা পাঠ করেন কবি আবু হাসান শাহরিয়ার, কবি আসাদ মান্নান, কবি ফরিদ কবীর, কবি রঞ্জু রাইম, কবি সাকিরা পারভীন, কবি কাজী নাসির মামুন, কবি সঞ্জীব পুরোহিত, কবি মোহাম্মদ নুরুল হক, কবি হেনরি লুইস, কবি মোস্তাফিজ কারিগর, কবি রিঙকু অনিমিখ।

এছাড়াও কবি কামাল চৌধুরীর কবিতা আবৃত্তি করেন বাচিকশিল্পী কাজী মাহতাব সুমন, আয়েশা হক শিমু।

অনুষ্ঠানে বাঁশিতে সুর তোলেন হাসান আলী।