হামলা নয়, বোমা বহনের সময় বিস্ফোরণ: পুলিশ কমিশনার

দেশের অন্যতম স্পর্শকাতর এলাকা ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকায় পুলিশ বক্সের সামনে বিস্ফোরণের ঘটনাটি ‘আত্মঘাতী হামলা’ নয় বলে মনে করছেন ঢাকার পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 March 2017, 05:43 PM
Updated : 24 March 2017, 11:52 PM

তিনি জানিয়েছেন, এক ব্যক্তি ট্রলি ব্যাগ সঙ্গে নিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় ওই বিস্ফোরণ ঘটে।

“এটা কোনো আত্মঘাতী হামলা নয়। ওই যুবক বোমা বহন করে যাওয়ার সময় পুলিশ দেখে অতি সতর্ক হতে গিয়ে এই বিস্ফোরণ হয়েছে বলে মনে করছি।”

প্রতিটি এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক রয়েছে জানিয়ে নগরবাসীকে আতঙ্কিত না হওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সহকারী কমিশনার তানজিলা আক্তার জানান, শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে বিমানবন্দর গোলচত্বর পুলিশ বক্সের সামনে বিস্ফোরণের ঘটনাস্থলেই এক যুবক নিহত হন।

প্রাথমিকভাবে পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনাটিকে ‘আত্মঘাতী বিস্ফোরণ’ বলে বর্ণনা করেন।

বিস্ফোরণস্থলে পড়ে থাকা লাশের একটি ছবিতে দেখা যায়, আনুমানিক ২৫ থেকে ৩০ বছর বয়সী জিন্স পরিহিত ওই যুবকের কোমরের কাছে পেটের ডান দিক বিস্ফোরণে উড়ে গেছে।   

রাতে ঘটনাস্থল ঘুরে দেখে সাংবাদিকদের সামনে আসেন ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া।

তিনি বলেন, ওই যুবক একটি ট্রলি ব্যাগ সঙ্গে নিয়ে বিমানবন্দর সড়কের পূর্ব পাশ দিয়ে হেঁটে আসছিলেন। ওই সময় হঠাৎ বিস্ফোরণ ঘটে এবং তার পেটের নাড়িভুড়ি বেরিয়ে যায়।  

পরে ওই ট্রলি ব্যাগ তল্লাশি করে আরও কিছু বিস্ফোরক পাওয়া যায় এবং সেগুলো নিষ্ক্রিয় করা হয় বলে পুলিশের উত্তরা জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (ট্রাফিক) খোরশেদ আলম জানান।

বোমা নিষ্ক্রিয় করার সময় মিনিট দশেক বিমানবন্দর সড়কে যান চলাচল বন্ধ রাখা হলেও বাকি সময় সড়ক খোলা রাখা হয়।  

আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, “যে মারা গেছে সে যাওয়ার সময় এখানে সহকারী পুলিশ কমিশনার ও পেট্রোল ইন্সপেক্টরের কার্যালয়সহ পুলিশের অনেকগুলো কার্যালয় ও অনেক পুলিশ সদস্য দেখে সতর্ক হতে গিয়ে এই ঘটনা ঘটে বলে ধারণা করা হচ্ছে।”

ওই পুলিশ বক্স থেকে কয়েকশ গজ দূরে র‌্যাবের একটি ব্যারাকে গত ১৭ মার্চ আত্মঘাতী বিস্ফোরণে একজন নিহত হন, যাকে জঙ্গি বলে মনে করছেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। র‌্যাব কর্মকর্তারা ওই ঘটনাকে জঙ্গি হামলা বলেই বর্ণনা করেছেন।   

তবে ওই ঘটনার সঙ্গে বিমানবন্দর পুলিশ বক্সের ঘটনাটির ‘পার্থক্য আছে’ বলে মনে করছেন ঢাকার পুলিশ প্রধান।

তিনি বলেন, “এটি হামলা নয়। হামলা করতে চাইলে ওইখানে ৮-১০ জন পুলিশ দায়িত্বে আছেন, ওই ব্যক্তি মাত্র ২০ ফুট এগোলেই তাদের ওপর হামলা করতে পারত। এ থেকেই বোঝা যায় এটা পুলিশের উপর বা আত্মঘাতী কোনো হামলা না।”

আর যেহেতু ঘটনাটি ঘটেছে বিমানবন্দরের উল্টো দিকে, সেহেতু এর সঙ্গে বিমানবন্দরেরও কোনো যোগাযোগ নেই বলে মনে করছেন আছাদুজ্জামান মিয়া।

“যদি বিমানবন্দর সংশ্লিষ্ট হত, তাহলে সে পশ্চিম পাশে যেত। কিন্তু সে রাস্তার পূর্ব পাশ দিয়ে এসে দক্ষিণ দিয়ে উত্তরে যাচ্ছিল। এটা কোনভাবেই এয়ারপোর্টের বিষয়বস্তু নয়। এমনকি কোন ধরনের অ্যাটাকের বিষয়ও নয়।”

আগে থেকেই সারা ঢাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার রয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “নগরীর প্রতিটি এলাকায় চেকপোস্ট রয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী অনেক সতর্ক আছে। এ অবস্থায় কোনো প্রকার নাশকতা করা কঠিন হবে। নগরবাসীর আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।”

গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার পর থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ‘অনেক সতর্ক’ হয়ে কাজ করছে বলেও দাবি করেন পুলিশ কমিশনার।

নিহত ব্যক্তি জঙ্গি কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, জিন্স ও ফুলহাতা শার্ট পরিহিত ওই যুবকের পরিচয় তারা জানতে পারেননি। তিনি জঙ্গি কি না- তা তদন্ত না করে বলা যাবে না।

ঢাকার আশকোনা ও খিলগাঁও এ ‘আত্মঘাতী হামলা’ এবং কুমিল্লায় পুলিশের উপর জঙ্গিদের বোমা হামলাসহ সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পাওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, কেবল বাংলাদেশে নয়, জঙ্গি এবং সন্ত্রাসী তৎপরতা এখন একটি বৈশ্বিক সমস্যা হয়ে উঠেছে।

“এর একটা বৈশ্বিক প্রভাব রয়েছে। সারা পৃথিবীতে, যেমন ইংল্যান্ডে গতকাল পার্লামেন্টের সামনে বোমা হামলা হয়েছে। এই যে প্রভাব সেটি সারা বিশ্বেই রয়েছে। বাংলাদেশ এর বাইরে কিছু নয়।”