একাত্তরের ওই রাতে নিহতদের স্মরণে নেওয়া হয়েছে নানা কর্মসূচি। রাষ্ট্রীয় উদ্যোগের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক সংগঠনও কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
তেইশ বছরের শোষণ থেকে বাঙালির মুক্তির আন্দোলনের শ্বাসরোধ করতে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে এ দেশের নিরস্ত্র মানুষের ওপর ঝাপিয়ে পড়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামের সেই অভিযানে কালরাতের প্রথম প্রহরে ঢাকায় চালানো হয় গণহত্যা।
পাকিস্তানি বাহিনী এবং তার দোসরদের সেই নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞের দিন ২৫ মার্চকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এখন থেকে প্রতি বছর বাংলাদেশে জাতীয়ভাবে দিবসটি পালন করা হবে।দিবসটি আন্তর্জাতিকভাবে পালনের বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রক্রিয়া শুরু করেছে। জাতিসংঘে এ সংক্রান্ত প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
গণহত্যা দিবস পালন উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
বাণীতে রাষ্ট্রপতি বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পরিচালিত গণহত্যা বাঙালি জাতির ইতিহাসে একটি বর্বরতম ও মর্মান্তিক ঘটনা। এ দিবসটিকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত দেশ ও জাতির ইতিহাসে এক ঐতিহাসিক মাইলফলক। ‘গণহত্যা দিবস’ বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামে ত্রিশ লক্ষ বাঙালির আত্মত্যাগের মহান স্বীকৃতির পাশাপাশি তৎকালীন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বর গণহত্যার বিরুদ্ধে চরম প্রতিবাদের প্রতীক।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণীতে বলেছেন, ২৫শে মার্চকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত প্রকৃত অর্থে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লক্ষ শহীদের আত্মত্যাগের প্রতি জাতির চিরন্তন শ্রদ্ধার স্মারক এবং পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নারকীয় হত্যাকাণ্ডের সাক্ষ্য হিসেবে বিবেচিত হবে।
তিনি বলেন, ২৫শে মার্চের কালরাতে পাকিস্তানি বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর আধুনিক মারণাস্ত্র নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ে। ঢাকাসহ দেশের প্রধান প্রধান শহর ও বন্দরে হত্যা করা হয় হাজার হাজার নিরীহ মানুষ। সেই রাত থেকে পরবর্তী নয় মাস পাকিস্তানি বাহিনী এবং তাদের এদেশীয় দোসর-রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস বাহিনীর সদস্যরা সারাদেশে নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞ চালায়।
“হত্যা করে প্রায় ৩০ লক্ষ মানুষকে। এত কম সময় ও স্বল্প পরিসরে এত বিপুল সংখ্যক মানুষ হত্যার নজির বিশ্বে আর নেই। শুধু মানুষ হত্যা নয়, একইসঙ্গে দুই লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমহানি করা হয়। লক্ষ লক্ষ বাড়িতে অগ্নিসংযোগ এবং লুটপাট করা হয়। বাড়িঘর থেকে বিতাড়িত করা হয় প্রায় এক কোটি মানুষকে।”
এই গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে সর্বাত্মক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
গণহত্যা দিবসে শনিবার বঙ্গভবনে ২৫টি গাছ লাগিয়ে ‘শহীদ স্মৃতি বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি’র উদ্বোধন করবেন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ।
সকাল সাড়ে ১০টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ সংলগ্ন স্থানে ‘রক্তাক্ত ২৫ মার্চ: গণহত্যা ইতিবৃত্ত’ শিরোনামে আলোকচিত্র প্রদর্শনী ও আলোচনা সভা এবং গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গীতিনাট্য ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা এবং গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক নীতিনাট্য ও সাংস্কৃতিকপরিবেশনার আয়োজন করা হয়েছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, শিল্পকলা একাডেমি, শিশু একাডেমি, জেলা প্রশাসনও উপজেলা প্রশাসন এসব আয়োজন করবে।
গণহত্যা দিবসটি উপলক্ষে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ গণবিচার আন্দোলন ও শ্রমিক কর্মচারি পেশাজীবী মুক্তিযোদ্ধা সমন্বয় পরিষদ যৌথভাবে বিকাল ৩টায় ঢাকার শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে। তাদের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আলোকচিত্র প্রদর্শনী, মোমবাতি প্রজ্জ্বলন, গণসংগীত ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনী ।
সারাদেশে সভা, সমাবেশ, র্যালি, আলোকচিত্র প্রদশর্নীসহ বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে যথাযথ মর্যাদায় দিবসটি পালন করার জন্য আওয়ামী লীগ ও এর সব সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণ শাখার উদ্যোগে পৃথক দুটি জনসভা অনুষ্ঠিত হবে এদিন। বিকাল ৩টায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের উদ্যোগে লালবাগ আজাদ মাঠে এবং একই সময়ে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে মিরপুর বাংলা কলেজ মাঠে জনসভা হবে।
দিবসটি উপলক্ষে ঢাকা ও যশোরে সমাবেশ করবে কেন্দ্রীয় ১৪ দল। ২৫ মার্চ মিরপুর বধ্যভূমিতে এবং ৩০ মার্চ যশোরের চুকনগরে ১৪ দলের সমাবেশ হবে।
গণহত্যা দিবস উপলকেষ বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পাটি বিকাল ৩টায় দলীয় কার্যালয় চত্বরে অলোচনা সভা, প্রদীপ প্রজ্জ্বলন ও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে ।