বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সহকারী কমিশনার তানজিলা আক্তার জানান, শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে বিমানবন্দর গোলচত্বর পুলিশ বক্সের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
তিনি প্রাথমিকভাবে ঘটনাটিকে ‘আত্মঘাতী বিস্ফোরণ’ বললেও ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া পরে সাংবাদিকদের বলেন, এক ব্যক্তি ট্রলি ব্যাগ সঙ্গে নিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় ওই বিস্ফোরণ ঘটে এবং এটি কোনো ‘হামলার ঘটনা নয়’।
সে সময় ওই ব্যক্তি ছাড়া আর কেউ হতাহত না হলেও পরে নিহতের ট্রলি ব্যাগে আরও বিস্ফোরক পাওয়া যায় এবং সেগুলো নিষ্ক্রিয় করার সময় স্প্লিন্টারে দুই পথচারী আহত হন বলে বিমানবন্দর থানার ওসি নূরে আজম মিয়া জানান।
র্যাবের ব্যারাকে আত্মঘাতী বিস্ফোরণকে জঙ্গি হামলা বলেছিল আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। তবে বিমানবন্দর এলাকায় নিহত ব্যক্তি জঙ্গি কি না- সে বিষয়ে এখনই কোনো মন্তব্য করতে চাননি আছাদুজ্জামান মিয়া।
এবারের বিস্ফোরণটি যেখানে ঘটেছে, সেই পুলিশ বক্সটি উত্তরা অঞ্চলের সহকারী পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক), বিমানবন্দর পুলিশ বক্স এবং পুলিশের টহল পরিদর্শকের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
ঘটনার সময় ওই এলাকায় থাকা এক ব্যক্তি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, তিনি বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পান এবং পরে পুলিশ ও র্যাব সদস্যদের ওই গোলচত্বর এলাকায় জড়ো হতে দেখেন।
ওই সময় রাস্তার বিমানবন্দর দিকের অংশে দায়িত্ব পালন করছিলেন পুলিশ সার্জেন্ট মোতাহের হোসেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “হঠাৎ একটা বিকট শব্দ শুনি, শব্দটা পূর্ব পাশে আমাদের ট্রাফিক বক্সের দিকে। প্রথমে ভেবেছিলাম টায়ার ফেটে গেছে, পরে জানতে পারি আত্মঘাতী হামলা হয়েছে।”
ঘটনার পর জনতার ভিড় জমে গেলে পড়ে থাকা লাশটি লাল-কালো শামিয়ানা দিয়ে ঘিরে ফেলে তার সামনে অবস্থান নেয় পুলিশ ও র্যাবের বিপুল সংখ্যক সদস্য। ক্রাইম সিন ইউনিটের হলুদ ফিতা দিয়ে ঘিরে ফেলা হয় ঘটনাস্থল।
পুলিশ কমিশনার ছাড়াও র্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ, ডিএমপির বোমা নিস্কিয়করণ দলের উপ-কমিশনার ছানোয়ার হোসেন, গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (পশ্চিম) শেখ নাজমুল হোসেনসহ র্যাব, পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশ, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা খবর শুনে ঘটনাস্থলে ছুটে যান।
ঘটনাস্থলে সংবাদকর্মীসহ বিপুল সংখ্যক উৎসুক মানুষের ভিড় থাকলেও যান চলাচল বন্ধ করা হয়নি। তবে পরে দুই দফায় দুটি বোমা নিষ্ক্রিয় করার সময় মিনিট দশেক যান চলাচল বন্ধ রাখা হয় বলেপুলিশের উত্তরা জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (ট্রাফিক) খোরশেদ আলম জানান।
আর বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন জানান, বিমানবন্দরের বাইরের ঘটনায় ভেতরে কোনো প্রভাব পড়েনি; স্বাভাবিক নিয়মেই উড়োজাহাজ ওঠা-নামা করেছে।
রাতে ঘটনাস্থল ঘুরে দেখে ঢাকার পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ওই যুবক একটি ট্রলি ব্যাগ সঙ্গে নিয়ে বিমানবন্দর সড়কের পূর্ব পাশ দিয়ে হেঁটে আসছিলেন। ওই সময় হঠাৎ বিস্ফোরণ ঘটে এবং তার পেটের নাড়িভুড়ি বেরিয়ে যায়।
“যে মারা গেছে সে যাওয়ার সময় এখানে সহকারী পুলিশ কমিশনার ও পেট্রোল ইন্সপেক্টরের কার্যালয়সহ পুলিশের অনেকগুলো কার্যালয় ও অনেক পুলিশ সদস্য দেখে সতর্ক হতে গিয়ে এই ঘটনা ঘটে বলে ধারণা করা হচ্ছে।”
আছাদুজ্জামান মিয়া বেশ কয়েকবার বলেন, এ ঘটনাকে তিনি হামলা বলে মনে করছেন না এবং ওই ব্যক্তি কোথাও বিস্ফোরক পৌঁছে দেওয়ার সময়ই হয়ত এই বিস্ফোরণ ঘটেছে।
আশকোনায় র্যাবের ব্যারাকে হামলার ঘটনার সঙ্গে পুলিশ বক্সের ঘটনার ‘পার্থক্য রয়েছে’ বলেও মন্তব্য করেন ঢাকার পুলিশ প্রধান।
তিনি বলেন, “হামলা করতে চাইলে ওইখানে ৮-১০ জন পুলিশ দায়িত্বে আছেন, ওই ব্যক্তি মাত্র ২০ ফুট এগোলেই তাদের ওপর হামলা করতে পারত। এ থেকেই বোঝা যায় এটা পুলিশের উপর বা আত্মঘাতী কোনো হামলা না।”
গতবছর জুলাইয়ে গুলশান হামলার পর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এখন ‘অনেক সতর্ক’ বলে আছাদুজ্জামান মিয়ার ভাষ্য।
তিনি বলেন, “এ অবস্থায় কোনো প্রকার নাশকতা করা কঠিন হবে। নগরবাসীর আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।”