‘আবার একসঙ্গে থাকতে রাজি না হওয়ায়’ খুন হন আরিফা

ব্যাংক কর্মী আরিফুন নেছা আরিফাকে ‘পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেননি’ বলে পুলিশের কাছে দাবি করেছেন তার সাবেক স্বামী ফখরুল ইসলাম রবিন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 March 2017, 01:09 PM
Updated : 24 March 2017, 01:09 PM

গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার আবদুল বাতেন জানিয়েছেন, আবার একসঙ্গে বসবাসে রাজি না হওয়ায় কথা কাটাকাটির মধ্যে ‘আরিফার আনা ছুরিই তার গায়ে লাগে’ বলে রবিন প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে দাবি করেছেন।

হত্যাকাণ্ডের আট দিন পর শুক্রবার ভোরে গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল টাঙ্গাইলের ধনবাড়ি থেকে রবিনকে গ্রেপ্তার করে।

পরে মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে রবিনকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য তুলে ধরেন যুগ্ম কমিশনার বাতেন।

গত ১৬ মার্চ সকালে কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য সেন্ট্রাল রোডের আইডিয়াল কলেজ এলাকার বাসা থেকে বের হওয়ার সময় যমুনা ব্যাংকের কর্মকর্তা আরিফাকে কুপিয়ে জখম করা হয়। উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে বেলা ১২টার দিকে মারা যান আরিফা।

ওইদিন রাতেই আরিফার ভাই আব্দুল্লাহ আল আমিন বুলবুল কলাবাগান থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। সেখানে আসামি করা হয় আরিফার সাবেক স্বামী ফখরুল ইসলাম রবিনকে।

মামলা হওয়ার পর পুলিশ পাশের একটি বাড়ির সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে। রবিনই যে ওই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন, সে বিষয়ে ওই ভিডিও দেখে ‘অনেকটাই নিশ্চিত’ হওয়া গেছে বলে পুলিশ কর্মকর্তারা জানান।

ভিডিওতে প্রথমে আরিফাকে বাড়ির ফটক দিয়ে বের হতে দেখা যায়। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই রবিনসহ তিনি আবার ভেতরে ঢোকেন। তখন দুজনের হাতেই ব্যাগ ছিল। বাসায় ঢোকার কয়েক মিনিট পরই রবিনকে দৌঁড়ে বের হতে দেখা যায়।

পাঁচতলা ভবনের নিচতলায় থাকতেন আরিফা। নিচতলার সিঁড়িঘরে আরিফাকে কোপানো হয় বলে সে সময় জানিয়েছিলেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কলাবাগান থানার পরিদর্শক সমির চন্দ্র সূত্রধর।

যুগ্ম কমিশনার আবদুল বাতেন সাংবাদ সম্মেলনে বলেন, আরিফার সঙ্গে আবারও একসঙ্গে থাকতে চাইছিলেন রবিন। কিন্তু আরিফা রাজি হচ্ছিলেন না। রবিন বলেছেন, ওইদিন আরিফার কিছু জিনিস ফেরত দেওয়ার কথা বলে তিনি সেন্ট্রাল রোডের বাসার সামনে হাজির হন।

“সে বলছে, বারবার আরিফাকে একসঙ্গে থাকার বিষয়ে চাপ দিলে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে আরিফা বাসা থেকে ছুরি নিয়ে আসে। দুই জনের মধ্যে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে আরিফার ছুরি গায়ে লাগে বলে রবিন দাবি করেছে।”

আরিফার সাবেক স্বামীর এই দাবি কতটা সত্য তা যাচাই করা হবে বলে জানান গোয়েন্দা কর্মকর্তা বাতেন।

“রবিন বলছে, সে পরিকল্পিতভাবে আরিফাকে হত্যা করেনি। আমরা তা তদন্ত করে দেখব।”

বাতেন বলেন, আরিফা ছুরিকাহত হওয়ার পর রবিন ফেইসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছিলেন। পরে এক বন্ধুর সঙ্গে ফোনে কথাও বলেছিলেন। এসব সূত্র ধরে প্রযুক্তি ব্যবহার করে তার অবস্থান সনাক্ত করার পর প্রথমে রবিনের খোঁজে জামালপুরে অভিযান চালানো হয়। পরে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় টাঙ্গাইল থেকে।

তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে আরিফা ছিলেন সবার ছোট । চার বছর আগে প্রেমের সম্পর্ক থেকে রবিনের সঙ্গে তার বিয়ে হয়।

আরিফার পরিবারের ভাষ্য, মাদকাসক্ত রবিনের সঙ্গে ছয় মাস আগে তার বিচ্ছেদ হয়। এর পর থেকে মায়ের সঙ্গে সেন্ট্রাল রোডের ওই বাসায় থাকছিল তিনি। সেখান থেকেই যমুনা ব্যাংকের পুরান পল্টন শাখায় অফিস করতেন।

আরিফার ভাই বুলবুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, ডিভোর্সের পর থেকেই রবিন হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিল। এ বিষয়ে আরিফা কলাবাগান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও করেছিলেন।