বৃহস্পতিবার রাত ৯টা ২৮ মিনিটে ভবনের ১৪ তলার ওই কক্ষে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিটের চেষ্টায় রাত ১০টা ৩৪ মিনিটে তা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসে বলে বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান জানান।
বাংলাদেশে ব্যাংক খাতের নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ৩০ তলা ভবনের ১৪ তলায় বৈদেশিক মুদ্রা নীতি বিভাগের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। আগুনে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সে বিষয়ে স্পষ্ট চিত্র পাওয়া যায়নি।
ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে তিন সদস্যের একটি কমিটি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র (মহাব্যবস্থাপক) আবুল কালাম আজাদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অল্প সময়ের মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসায় বড় ধরনের কোনো ক্ষতি হয়নি।”
“তাদের চেষ্টায় আগুন ততোটা ছড়াতে পারেনি।”
আগুন নেভার ঘণ্টাখানেক পর ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক আলী আহমদ কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ১৪ তলার দক্ষিণপূর্ব কোণের ওই কক্ষের ১০ থেকে ১৫ শতাংশ পুড়েছে।
“কোনো কম্পিউটার সার্ভারে আগুন লাগেনি। তবে কিছু ফাইলপত্র পুড়ে গেছে।”
কীভাবে আগুনের সূত্রপাত সে সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস।
আলী আহমদ বলেন, যে কক্ষ পুড়েছে সেখানে একটি ইউপিএস ছিল। ওইটা থেকে আগুন লাগতে পারে।
আগুনের কারণ অনুসন্ধানে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
আগুনে গুরুত্বপূর্ণ কোনো নথি পুড়েছে কি না জানতে চাইলে ফায়ার ব্রিগেডের ডিজি বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা তা খতিয়ে দেখছেন।”
আগুন লাগার খবর পেয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও গভর্নর ফজলে কবির দ্রুত বাংলাদেশ ব্যাংকে ছুটে যান।
এর আধা ঘণ্টার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আগুনে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে।
নির্বাহী পরিচালক আহমেদ জামাল নেতৃত্বাধীন এই কমিটিতে ২৮ মার্চের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে বলে জানান তিনি।
রাত সাড়ে ১২টার দিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বেরিয়ে প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান সাংবাদিকদের বলেন, এই ঘটনা তদন্তে বাংলাদেশ ব্যাংক ও ফায়ার সার্ভিস দুটি কমিটি করেছে।
“এরপরও উচ্চ পর্যায়ের একটি টেকনিক্যাল কমিটি করার জন্য আমি ব্যক্তিগতভাবে অর্থমন্ত্রীকে বলব।”
গত বছরের রিজার্ভ চুরির দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, “কেন দুটি ঘটনা ঘটল? এর পিছনে অভ্যন্তরীণ কিছু আছে কি না তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।”
গত বছর ফেব্রুয়ারিতে সুইফট সিস্টেমে ভুয়া পরিশোধ অর্ডার পাঠিয়ে নিউ ইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভে রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রায় দশ কোটি ডলার সরিয়ে নেয় হ্যাকাররা। এর মধ্যে ৮ কোটি ১০ লাখ ফিলিপিন্সের রিজল কর্মশিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশন- আরসিবিসির একটি শাখা হয়ে জুয়ার বাজারে চলে যায়।
ওই অর্থের একটি অংশ বাংলাদেশ ফিরে পেলেও বেশিরভাগই বেহাত রয়েছে।
রিজার্ভ চুরিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কয়েকজন কর্মকর্তা জড়িত বলে তদন্তকারী সংস্থা সিআইডির শীর্ষ পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
ডিসেম্বরে তিনি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছিলেন, এ ঘটনায় জড়িতদের ‘শিগগিরই’ গ্রেপ্তার করা হবে।
ওই ঘটনা তদন্তে সরকার গঠিত তদন্ত দলের প্রধান মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনও রিজার্ভ চুরিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পাঁচ কর্মকর্তার দায়িত্বে অবহেলা ও অসতর্কতার প্রমাণ পাওয়ার কথা জানিয়েছিলেন।
তবে এ ঘটনায় এখনও কেউ গ্রেপ্তার হয়নি।