আদালতে হাতে চা নিয়ে খোশগল্পে তাভেল্লা হত্যার আসামিরা

আদালতের কাঠগড়ায় থেকেই খোশগল্প আর হাসি-ঠাট্টায় মেতে উঠতে দেখা গেছে ইতালীয় নাগরিক চেজারে তাভেল্লা হত্যাকাণ্ডের আসামিদের; সেখানে বসে চা পানও করেন তারা।

প্রকাশ বিশ্বাসপ্রকাশ বিশ্বাস জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 March 2017, 03:30 PM
Updated : 24 March 2017, 07:08 AM

বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকার একটি আদালতে মধ্যাহ্ন বিরতির সময় বিচারকের অনুপস্থিতিতে চাঞ্চল্যকর মামলাটির আসামিদের এই সুযোগ দিতে দেখা যায় পুলিশকে।

ঢাকার মহানগর দায়রা জজ মো. কামরুল হোসেন মোল্লার আদালতে এদিন মামলাটিতে রাষ্ট্রপক্ষের পঞ্চদশ সাক্ষী গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তা এনামুল হককে জেরা করার কথা ছিল।

কারাগারে থাকা চার আসামিকে দুপুর ২টার দিকে হাজতখানা থেকে এজলাসের লোহার খাঁচা আটকানো কাঠগড়ায় তোলা হয়। ওই সময় বিরতি চলছিল,বিচারক কামরুল হোসেন মোল্লা ছিলেন খাসকামরায়।

আসামি তামজিদ আহমেদ ওরফে রুবেল ওরফে শুটার রুবেল, রাসেল চৌধুরী ওরফে চাক্কি রাসেল, মিনহাজুল আরেফিন রাসেল ওরফে ভাগনে রাসেল ও শাখাওয়াত হোসেন ওরফে শরিফকে এজলাসে তোলেন কনস্টেবল কামাল, কালাম ও বাবুল। তাদের নেতৃত্বে ছিলেন এসআই আব্দুস সাত্তার।

কাঠগড়ায় বসেই চার আসামিকে পানির বোতলে চা পান করতে দেখা যায়; যদিও কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে কোনো কিছু পান কিংবা খাওয়ার নিয়ম নেই।

আসামিদের সঙ্গে কোর্ট হাজতে পুলিশের সখ্যের এই ঘটনা চলার সময় বেশ কয়েকজন আইনজীবীও সেখানে ছিলেন।

কনস্টেবল কামাল, কালাম ও বাবুল আসামিদের সঙ্গে তাদের স্বজনদের কথা বলার সুযোগও করে দেন। এসময় একজন আসামিকে টাকা গুঁজে দিতে দেখা যায় তার এক স্বজনকে।

বিকাল ৩টার দিকে বিচারক খাসকামরা থেকে এজলাসে এসে তার আসনে বসেন। তিনি বিভিন্ন ফৌজদারি আপিল ও রিভিশন মামলার শুনানি নিতে থাকেন।

এর মধ্যেই এ চার আসামি কাঠগড়ায় বিচারকের দিকে পেছন ফিরে কথা-বার্তা, হাসি-তামাশা চালিয়ে যান।

বিচারকের আসন কাঠগড়া থেকে কিছুটা দূরে এবং তিনি তখন অন্য মামলার শুনানি নেওয়াতে মনোেোগী ছিলেন।

এ সময় একজন আসামি পুলিশের কাছে মোবাইল ফোনে কিছুক্ষণের জন্য কথা বলতে চাইলে তাকে টয়লেটে নিয়ে যাওয়া হয়।

এসময় একজন পুলিশ সদস্য বলে ওঠেন, “কয় টাকা দিয়েছ যে তোমাদের সব আবদার মেটাতে হবে?”

বিকাল ৪টার দিকে তাভেল্লা হত্যা মামলাটি ধরেন বিচারক। তখন পুলিশের কথায় বিচারকের দিকে ফেরেন আসামিরা।

প্রকাশ্যে এই ঘটনার বিষয়ে কথা বলতে গেলে এসআই সাত্তার মাফ চেয়ে এ বিষয়ে খবর প্রকাশ না করার অনুরোধ করেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে।

এরপরে পুলিশ কনস্টেবলরাও নানাভাবে অনুরোধ করেন ঘটনাটি প্রকাশ না করতে।

এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর তাপস পাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ রকম ঘটনা আকছার ঘটে থাকে। তবে এ মামলাটি স্পর্শকাতর ও গুরুত্বপূর্ণ বলে এ রকম হওয়া মোটেও উচিৎ নয়। আমরা এ বিষয়ে সতর্ক হয়ে যাব।”

চেজারে তাভেল্লা

দেশের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গি হামলার মধ্যে ২০১৫ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানে ইতালীয় তাভেল্লাকে গুলি চালিয়ে হত্যা করার পর তা আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমেও আলোচিত হয়।

পরে ডিবি পুলিশের পরিদর্শক গোলাম রাব্বানী তদন্ত করে গত বছরের ২৮ জুন মামলাটিতে অভিযোগপত্র দেন। তাতে বিএনপি নেতা এম এ কাইয়ুম, তার ভাই আবদুল মতিনসহ সাতজনকে আসামি করা হয়।

আসামি মতিনের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল হজ পালনে সৌদি আরবে অবস্থান করায় বৃহস্পতিবার শুনানি পিছিয়ে দেওয়ার আবেদন করা হয়।

আসামি পক্ষের আবেদনে বিচারক কামরুল হোসেন মোল্লা আগামী ১০ এবং ১১ মার্চ সাক্ষ্যগ্রহণের পরবর্তী দিন ঠিক করে দেন।