সাউথ এশিয়া স্যাটেলাইটে যুক্ত হল বাংলাদেশ

ভারতের উদ্যোগে মহাকাশে যে কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠানো হচ্ছে, তাতে অংশ নিতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে বাংলাদেশ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 March 2017, 11:09 AM
Updated : 30 April 2017, 07:13 PM

বৃহস্পতিবার বিটিআরসি কার্যালয়ে সংস্থার চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ এবং ভারত সরকারের পক্ষে বাংলাদেশে দেশটির হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা এ সংক্রান্ত চুক্তিতে সই করেন।

ভারত এই কৃত্রিম উপগ্রহটি পাঠানোর পরিকল্পনা করেছিল। ২০১৪ সালে কাঠমান্ডুতে সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোকেও এতে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানান।

বাংলাদেশ এরই মধ্যে নিজস্ব কৃত্রিম উপগ্রহ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের পরিকল্পনা গ্রহণ করে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট বাধাগ্রস্ত হবে না নিশ্চিত হওয়ার পর সাউথ এশিয়া স্যাটেলাইটে যুক্ত হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

গত সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘সাউথ এশিয়া স্যাটেলাইট’ উৎক্ষেপণে বাংলাদেশের অংশগ্রহণের প্রস্তাবে সায় মেলে। এর তিন দিন বাদে আনুষ্ঠানিক চুক্তি সই হল।

চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বিটিআরসি চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ বলেন, ‘সাউথ এশিয়া স্যাটেলাইট’ এর ১২টি  ট্রান্সপন্ডারের মধ্যে একটি বিনামূল্য পাচ্ছে বাংলাদেশ এবং তা যেভাবে ইচ্ছা ব্যবহার করা যাবে।

কৃত্রিম উপগ্রহটি উৎক্ষেপণের সমস্ত ব্যয়ভার বহন করছে ভারত সরকার। এই বছরই তা মহাকাশে পাঠানোর আশা করা হচ্ছে।

এটি উৎক্ষেপণে ৪০ কোটি ডলার ব্যয় হচ্ছে জানিয়ে হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা বলেন, “এ স্যাটেলাইট প্রায় প্রস্তুত রয়েছে, খুব শিগগিরই উৎক্ষেপণ সম্ভব হবে।”

ভারতের বৈরী প্রতিবেশী পাকিস্তান ছাড়া সার্কভুক্ত অন্য দেশগুলো এই প্রকল্পে যুক্ত হচ্ছে বলে জানান শ্রিংলা। বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ এগিয়ে আসায় অভিনন্দন জানান তিনি।

“এ চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে নতুন যুগের সূচনা হল,” বলেন বিটিআরসি চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ।

অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, “এ যুগান্তকারী চুক্তির ফলে সার্ক অঞ্চল স্যাটেলাইটের মতো হাইটেক সহযোগিতায় যুক্ত হলাম।

অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম

“শুধু বাংলাদেশ নয়, এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশও যুক্ত হয়েছে। এ পাশাপাশি অন্যান্য অঞ্চলে বার্তা যাবে যে আমরা কোনো অংশে পিছিয়ে নেই।”

দেশের বাইরে থাকা ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম একটি অডিও বার্তায় চুক্তি স্বাক্ষরকারীদের অভিনন্দন জানান।

চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক, ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব শ্যাম সুন্দর শিকদার, বিটিআরসি ভাইস চেয়ারম্যান আহসান হাবিব খানসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত  ছিলেন।

ভারতের হাই কমিশনার জানান, এই যোগাযোগ স্যাটেলাইটের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও জরুরি যোগাযোগে একযোগে কাজ করবে।

অনুষ্ঠানে হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা

“টেলি মেডিসিন, টেলি শিক্ষা, আন্তঃসরকার নেটওয়ার্ক, দুর্যোগ পরিস্থিতিতে জরুরি যোগাযোগ, টেলিভিশন ব্রডকাস্ট, ডিটিএইচ টেলিভিশন সেবায় সুবিধা পাওয়া যাবে।”

এছাড়া এ চুক্তির ফলে বাংলাদেশ বিনামূল্যে স্যাটেলাইট বেইস সার্ভিসের জন্য প্রস্তাবিত স্যাটেলাইটের সঙ্গে যুক্ত হবে।

এই চুক্তির শিরোনাম হল ‘এগ্রিমেন্ট বিটুইন দ্য গভর্নমেন্টস অব রিপাবলিক অব ইন্ডিয়া অ্যান্ড দ্য গভর্নমেন্ট অব দ্য পিপলস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ কনসার্নিং টু অরবিট ফ্রিকোয়েন্সি কো-অর্ডিনেশন অব সাউথ এশিয়া স্যাটেলাইট প্রোপোজড অ্যাট ফোর্টি এইট ডিগ্রি ইস্ট’।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ‘বাধাগ্রস্ত হবে না’

চলতি ১০১৭ সালে উৎক্ষেপণের পরিকল্পনা নিয়ে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট নিয়ে কাজ করছে বাংলাদেশ। সাউথ এশিয়া সাটেলাইট তাতে কোনো ঝুঁকি তৈরি করবে না বলে বিটিআরসি চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ জানান।

বাংলাদেশের পক্ষে চুক্তিতে সই করছেন শাহজাহান মাহমুদ

তিনি বলেন, “অবস্থানগত দিক থেকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ইন্দোনেশিয়া অঞ্চলে এবং সাউথ এশিয়া স্যাটেলাইট আফগানিস্তান অঞ্চলে থাকবে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ১১৯ ডিগ্রি ইস্টে, আর এটি ৪৮ ডিগ্রি ইস্টে।

“আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ সংস্থা (আইটিইউ) জানিয়েছে, এতে কোনো ধরনের প্রযুক্তিগত সমস্যা হবে না।”

ফ্রান্সের থালিস এলিনিয়া স্পেস ফ্যাসিলিটিতে বাংলাদেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট’ নির্মাণের অর্ধেকের বেশি কাজ শেষ হয়েছে।

এ স্যাটেলাইটে ৪০টি ট্রান্সপন্ডার থাকবে, যার ২০টি বাংলাদেশের ব্যবহারের জন্য রাখা হবে এবং বাকিগুলো ভাড়া দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব হবে।

সব ঠিক থাকলে চলতি বছর ডিসেম্বরে উৎক্ষেপণের পর ২০১৮ সালের এপ্রিল নাগাদ এ স্যাটেলাইট বাণিজ্যিক অপারেশন শুরু করতে পারবে।

তখন বিদেশি স্যাটেলাইটের ভাড়া বাবদ বাংলাদেশের বছরে ১৪ মিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হবে বলে সরকার আশা করছে।