পদ্মায় শিক্ষা হয়েছে, ষড়যন্ত্র আর করতে পারবে না: প্রধানমন্ত্রী

দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের মিথ্যা অভিযোগ তোলা বিশ্ব ব্যাংককে ছাড়াই নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করায় বাংলাদেশকে নিয়ে আর কেউ ষড়যন্ত্র করতে পারবে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 March 2017, 07:48 AM
Updated : 23 March 2017, 12:29 PM

রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বৃহস্পতিবার স্বাধীনতা পুরস্কার-২০১৭ বিতরণ অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে একটি প্রশ্ন তুলেছিলো এবং অভিযোগ এনেছিলো ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, যে অভিযোগটা ছিলো; সম্পূর্ণ মিথ্যা… যা প্রমাণ হয়েছে।” 

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো প্রকল্প পদ্মা সেতুতে অর্থায়নের জন্য বিশ্ব ব্যাংক চুক্তি করেও দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে তা বাতিল করে। পরে বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।

এই প্রকল্পের তদারকির পাঁচ কোটি ডলারের কাজ পেতে এসএনসি-লাভালিনের কর্মীরা ২০১০ ও ২০১১ সালে বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের ঘুষ দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন বলে মামলা হয়েছিল কানাডার আদালতে। দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে কানাডার আদালত ওই অভিযোগকে ‘অনুমানভিত্তিক’ সাব্যস্ত করে মামলার তিন আসামিকে খালাস দেয়।

সেই রায়ের কথা মনে করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “কানাডার ফেডারেল কোর্ট যার রায়ও দিয়ে বলেছে, এ সমস্ত মিথ্যা, বানোয়াট ও ভুয়া অভিযোগ। এখানে কোনো সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। তখনই (আগেই) ঘোষণা দিয়েছিলাম যে, আমরা নিজস্ব অর্থায়নে এই সেতু নির্মাণ করবো।

কানাডার ওই আদালতের রায়ের অনেক আগে থেকেই প্রধানমন্ত্রী বলে আসছেন, পদ্মা সেতু প্রকল্প নিয়ে বিশ্ব ব্যাংকের অভিযোগ তোলা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অংশ।

অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, “বাংলাদেশকে যে অবহেলা করা যায় না, তা এ সমস্ত আন্তর্জাতিক সংস্থা.. যারা কথায় কথায় মিথ্যা দোষারোপ দিয়ে তাদের কাছে নতজানু করে রাখতে চায়; তারা সে শিক্ষাটা পেয়ে গেছে। আর বাঙালিকে কেউ মাথা নিচু করে চলার জন্য ষড়যন্ত্র করতে পারবে না।

“আমরা আল্লাহর রহমতে নিজস্ব অর্থায়নে এই সেতু নির্মাণ করা শুরু করেছি। আর আমি অন্তত এইটুকু বলতে পারি, এই সিদ্ধান্তের ফলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে।”

বাংলাদেশের উন্নয়নে করণীয় সবকিছু করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “একটি দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য যা যা করণীয়.. অবকাঠামোগত উন্নয়ন সবই আমরা একে একে করে যাচ্ছি। যার ফল দেশের মানুষ পাচ্ছে, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। 

“এখন আর পরমুখাপেক্ষী হতে হয় না। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির ৯০ ভাগই আমরা নিজস্ব অর্থায়নে করতে সক্ষমতা অর্জন করেছি।”

জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসাবে এবার বিমান বাহিনী স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছে। এর সঙ্গে ১৫ ব্যক্তি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ এই পুরস্কার পেয়েছেন।

‘স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ’ ক্ষেত্রে অবসরপ্রাপ্ত গ্রুপ ক্যাপ্টেন শামসুল আলম বীর উত্তম, আশরাফুল আলম, শহীদ মো. নজমুল হক, প্রয়াত সৈয়দ মহসিন আলী, শহীদ এন এম নাজমুল আহসান ও শহীদ ফয়জুর রহমান আহমেদ ২০১৭ সালের স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছেন।

এবার সাহিত্যে স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছেন রাবেয়া খাতুন এবং প্রয়াত গোলাম সামদানী কোরায়শী।

অধ্যাপক ড. এনামুল হক ও ওস্তাদ বজলুল রহমান বাদল সংস্কৃতিতে, অধ্যাপক ডা. এ এইচ এম তৌহিদুল আনোয়ার চৌধুরী চিকিৎসায় এবং খলিল কাজী সমাজসেবায়, শামসুজ্জামান খান এবং অধ্যাপক ড. ললিত মোহন নাথ গবেষণা ও প্রশিক্ষণে এবং অধ্যাপক মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান জনপ্রশাসনে এই পুরস্কার পেয়েছেন।

স্বাধীনতা পদকের ক্ষেত্রে পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ১৮ ক্যারেট মানের পঞ্চাশ গ্রাম সোনার পদক, তিন লাখ টাকা ও একটি সম্মাননাপত্র দেওয়া হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্তদের উদ্দেশ্যে বলেন, “আমি মনে করি যে, স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে জাতীয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ আপনারা আজ যারা পুরস্কার পেয়েছেন। আপনারা সেই পুরস্কার অর্জন করেছেন।”

তাদের অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব হিসাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমাদের সমাজে যারা জীবনকে উন্নত করে গড়ে তুলতে চায়, তারা আপনাদের পথ অনুসরণ করবে।

“আপনাদের মেধা ও মদদ নিয়ে আমরা একটি প্রগতিশীল সমাজ গড়ে তুলতে চাই। তাই আমরা চাই, আমাদের ভবিষ্যত বংশধররাও এভাবে গড়ে উঠবে। তারা স্ব স্ব কর্মক্ষেত্রে কৃতিত্বের সাথে অবদান রাখবে।” 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “দেশ গঠনে তারা বিশেষ ভূমিকা রাখবে আপনাদেরই পদাঙ্ক অনুসরণ করে।”

পুরস্কারপ্রাপ্তদের পক্ষ থেকে অধ্যাপক ড. এনামুল হক তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।

স্বাধীনতা পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম।