কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন ইসি আসার পর বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন লেখা হচ্ছে। এর আগে চার বছর এ প্রতিষ্ঠানটির নাম লেখা হয়েছে নির্বাচন কমিশন, বাংলাদেশ।
সিইসির বিদেশ সফরকালে আরেক নির্বাচন কমিশনার প্রধান নির্বাচন কমিশনারের রুটিন দায়িত্ব পালনে গত ১৬ মার্চ জারি করা এক অফিস আদেশে কে এম নূরুল হুদা ‘বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন’ লিখেছেন।
বুধবার জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশন সচিব মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখন থেকে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন লেখা হবে। আমাদের সব কাগজপত্রে এটাই লিখছি। নাম নিয়ে এখন কোনো ভিন্নমত নেই; কমিশনও নীতিগতভাবে এটা অনুমোদন করেছে।”
কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন ইসি দায়িত্ব নেওয়ার এক বছরের মাথায় ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি নাম পাল্টে ‘নির্বাচন কমিশন, বাংলাদেশ’ করে। এ নিয়ে ইসির আনুষ্ঠানিক কোনো সিদ্ধান্ত না থাকলেও সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে তা কাগজপত্র এবং ওয়েবসাইটে ব্যবহার করা হয়।
স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন লেখা হলেও বিগত ইসির সময়ে নির্বাচন কমিশনাররা একেক জন একেক নাম লেখেন।
ওই সময় নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ ভিজিটিং কার্ডে লেখেন ‘ইলেকশন কমিশন ফর বাংলাদেশ’; নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবদুল মোবারক লেখেন ‘নির্বাচন কমিশন’; নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবু হাফিজ ও জাবেদ আলী লেখেন ‘বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন’।
তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের কার্ডে নামের পরেই ‘চিফ ইলেকশন কমিশনার, বাংলাদেশ’ লেখা হয়।
‘নাম বিভ্রাট’ নিয়ে সমালোচনাও হয় বিভিন্ন মহলে।
২০১৩ সালে নাম পরিবর্তনের বিষয়ে সংবিধান প্রণয়ন কমিটির অন্যতম সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত তখন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “নাম হবে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন। এর ভিন্ন হলে সংবিধান অনুসরণ হল না।”
‘নির্বাচন কমিশন, বাংলাদেশ’ লেখা সমীচীন নয় বলে সে সময় মন্তব্য করেছিলেন প্রয়াত এই আইন প্রণেতা।
সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেছিলেন, “সংবিধানে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট-এর কথা বলা হয়েছে, ইসির বিষয়েও তাই হবে।”
নির্বাচন কমিশন পুরনো নামে যাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো মতবিরোধ তৈরি হয়নি বলে জানিয়েছেন ইসি সচিব মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ।
তিনি বলেন, সংবিধানেও বলা রয়েছে -বাংলাদেশের একটি নির্বাচন কমিশন থাকবে। দেশও একটি, নির্বাচন কমিশনও একটি। এজন্য বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন হবে।
কে এম নুরুল হুদা নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের ইসি গত ১৫ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব নেয়।
এরপরই সাবেক সিইসি এ টি এম শামসুল হুদা আরেক সিইসি কাজী রকিব আমলের ‘নাম পরিবর্তন’ নিয়ে কঠোর সমালোচনা করে তা ঠিক করার পরামর্শ দেন।
এ ধারাবাহিকতায় পুরনো নামেই ফিরল কমিশন।
বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের নাম পরিবর্তন করে ‘নির্বাচন কমিশন, বাংলাদেশ’ করা ‘অহেতুক কাজ’ বলে মন্তব্য করেন ২০০৭ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত দায়িত্বে থাকা সিইসি শামসুল হুদা।
গত ২ মার্চ এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “আমরা চলে আসার পরে হঠাৎ দেখলাম নির্বাচন কমিশনের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে, এটার নাম ছিল ‘বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন’। দেশে যত জাতীয় পর্যায়ের প্রতিষ্ঠান আছে, সব প্রতিষ্ঠানের নামের আগেই ‘বাংলাদেশ’ কথাটা থাকে। ‘বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট’, কিন্তু ‘সুপ্রিম কোর্ট, বাংলাদেশ’ এভাবে নেই। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ইত্যাদি।”
ইসিতে নিবন্ধনের সময় ‘জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশ’র ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’ নাম নেওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে শামসুল হুদা বলেন, “একটা রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বন্ধ করে তাদের নাম ঠিক করালাম, সেই নির্বাচন কমিশন তাদের নাম ‘বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন’ পরিবর্তন করে ‘নির্বাচন কমিশন, বাংলাদেশ’ রাখল! এতে মনে হয়, এই নির্বাচন কমিশন বাইরের কারও অ্যাফিলিয়েটেড বটে।”