যুদ্ধাপরাধ: শহীদুল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিলের তারিখ

পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিলের জন্য তারিখ নির্ধারণ করে দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 March 2017, 01:10 PM
Updated : 22 March 2017, 01:10 PM

২০১০ সালে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরুর পর এই প্রথম কোনো সেনা কর্মকর্তা বিচারের মুখোমুখি হচ্ছেন। আসামি শহীদুল্লাহর বয়স ৭৫ বছর, বাড়ি কুমিল্লার দাউদকান্দির আমিরাবাদ গ্রামে।

মুক্তিযুদ্ধের সময় ওই এলাকাতেই তিনি যুদ্ধাপরাধ ঘটান বলে তদন্তকারীদের ভাষ্য।

শহীদুল্লাহর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আগামী ৩১ মে’র মধ্যে প্রসিকউশনকে দাখিল করতে বুধবার নির্দেশ দিয়েছে বিচারপতি আনোয়ারুল হক নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল-১।

মঙ্গলবার চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের পর তা প্রসিকিউশনে দাখিল করে তদন্ত সংস্থা। বুধবার সেই তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার বিষয়টি জানিয়ে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিলের জন্য ট্রাইব্যুনালে তিন মাসের সময় আবেদন করেন প্রসিকিউটর আবুল কালাম।

প্রসিকিউটর আবুল কালাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিলের জন্য তদন্ত প্রতিবেদনটি যাচাই-বাছাই প্রয়োজন। তার জন্য তিন মাসের সময় চেয়েছিলাম। ট্রাইব্যুনাল ৩১ মে পর্যন্ত সময় দিয়েছে।”

আসামি মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর আইনজীবী এম মাসুদ রানা ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন।

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বাঙালি ক্যাপ্টেন শহীদুল্লাহর বিরুদ্ধে অপহরণ, আটকে রেখে নির্যাতন, লুটপাট-অগ্নিসংযোগ ও হত্যার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের তিন ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ উঠে এসেছে তদন্ত প্রতিবেদনে।

মুক্তিযুদ্ধের সময় নিজের বাড়ি দাউদকান্দি এলাকাতেই তিনি যুদ্ধাপরাধ ঘটান বলে তদন্তকারীদের ভাষ্য।

প্রতিবেদনে বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঢাকা সেনানিবাসে পাকিস্তানি দখলদার সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগ দেন শহীদুল্লাহ। পরে তিনি কুমিল্লার সেনানিবাসে যোগ দিয়ে সেনাবাহিনীর সদস্যদের নিয়ে দাউদকান্দি সদরে ক্যাম্প স্থাপন করেন।

২০১৫ সালের ১১ অক্টোবর তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়। প্রসিকিউশনের আবেদনে ট্রাইব্যুনাল গত বছর ২ অগাস্ট শহীদুল্লার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। ওই দিনই কুমিল্লা জেলা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। পরদিন আসামিকে হাজির করা হলে ট্রাইব্যুনাল তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়।

এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে মোট ১৯ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। এছাড়া জব্দ তালিকার সাক্ষী করা হয়েছে আরও তিনজনকে।

তিন অভিযোগ

অভিযোগ ১: একাত্তরের ৭ জুন বিকালে মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ পাকিস্তানি বাহিনীর ৮/১০ জন সদস্যসহ দাউদকান্দি বাজারে হামলা চালিয়ে হোমিও চিকিৎসক হাবিবুর রহমানকে আটক করেন। পাকিস্তানি ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতনের পর দাউদকান্দি ফেরিঘাটের পাশের গোমতি নদীতে নিয়ে তাকে হত্যা করা হয়। পরে লাশ ফেলে দেওয়া হয় নদীতে।

অভিযোগ ২: একাত্তরের ১৬ জুন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শহিদুল্লাহ পাকিস্তানি বাহিনীর ৪০/৫০ জন সদস্যকে সঙ্গ নিয়ে দাউদকান্দির উত্তর ইউনিয়নের চেঙ্গাকান্দি ও গোলাপেরচর গ্রামে হামলা চালান। তারা স্বাধীনতার পক্ষের ২০ জনকে আটক করেন এবং পাঁচটি বাড়ির মালামাল লুট করে আগুন ধরিয়ে দেন।

আটকদের মধ্যে ছয়জনকে ছেড়ে দিয়ে বাকি ১৪ জনকে দাউদকান্দি সেনা ক্যাম্পে নেওয়ার পথে গোলাপেরচর টেকে তাদের লাইন ধরে দাঁড় করানো হয়। সেখান থেকে একজনকে বের করে গোমতী নদীর পাশে নিয়ে গুলি করে লাশ নদীতে ফেলে দেন শহিদুল্লাহ। পরে অন্যদের ক্যাম্পে এনে নির্যাতনের পর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পর্কে খবর দেওয়ার শর্তে ছেড়ে দেওয়া হয়।

অভিযোগ ৩: একাত্তরের ২১ জুলাই শহিদুল্লাহ পাকিস্তানি বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে দাউদকান্দি বাজারে হামলা চালান। সেখান থেকে কালামিয়া নামে এক গাড়ি চালককে ধরে নির্যাতন চালানো হয়। পরে কালামিয়াকে চান্দিনা থানার চান্দিনা হাসাপাতালের পিছনে নিয়ে গুলি করে হত্যার পর লাশ খালে ফেলে দেন শহীদুল্লাহ।

একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচার নিষ্পত্তির পর এ পর্যন্ত ছয়জনের ফাঁসির দণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। এরা সবাই রাজনীতিক; তাদের পাঁচজনই জামায়াতে ইসলামীর নেতা, একজন বিএনপি নেতা। এছাড়া আর যারা দণ্ডিত, তারাও মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াতে ইসলামী বা মুসলিম লীগে ছিলেন।

একাত্তরের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বাঙালি নিধন শুরুর পর প্রতিরোধ যুদ্ধে বাঙালি অনেক সেনা সদস্য যুক্ত হয়েছিলেন। তবে পাকিস্তানেও আটকা পড়েন অনেক সেনা কর্মকর্তা।

বেসামরিক রাজাকার, আল বদর, আল শামস বাহিনীর পাশাপাশি বাঙালি সেনা সদস্যদের কেউ কেউ সে সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হয়ে স্বজাতির বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছিলেন।