‘মানবপাচার বন্ধে নজরদারি বাড়াতে হবে বিমানবন্দরে’

আন্তর্জাতিক মানবপাচার চক্রের সন্দেহভাজন নয় সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন দেশে মানবপাচার বন্ধে বিমানবন্দরে কাজ করা বিভিন্ন সংস্থা ও কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে নজরদারি বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছে র‌্যাব।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 March 2017, 11:48 AM
Updated : 22 March 2017, 11:48 AM

গ্রেপ্তারদের বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরতে বুধবার রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন থেকে র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ এ কথা বলেন।

এর আগে মঙ্গলবার রাজধানীর বিমানবন্দর, উত্তরা, বাড্ডা ও পল্টন এলাকায় র‌্যাবের অভিযানে ‘আন্তর্জাতিক মানবপাচারকারী চক্রের’ সঙ্গে জড়িত অভিযোগে নয়জনকে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি আরও নয়জনকে উদ্ধার করা হয়, যারা দালালের খপ্পরে পড়ে পাচার হওয়ার প্রক্রিয়ায় ছিলেন।

উদ্ধার নয়জন হলেন, মো. জজ মিয়া (২৩), মো. সুমন (২৪), মো. শফিকুল ইসলাম (২৬), মো. মাহবুব মিয়া (২৩), মো. ফরহাদ মিয়া (২৬), গোলাম রব্বানী (১৮), সুজন দাস (২৪), আলমগীর হোসেন (৩৫) ও মো. হাবিবুর (২৩)।

তাদের বাড়ি ময়মনসিংহ, নারায়ণগঞ্জ, যশোর, বগুড়া ও সুনামগঞ্জ জেলার বিভিন্ন এলাকায়।

ভুক্তভোগী এই নয়জনকে পাচারকারীদের মালয়েশিয়া ও সাইপ্রাস পাচারের কথা ছিল বলে সংবাদ সম্মেলন থেকে জানান র‌্যাব অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাসুদ।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ ধরনের পাচার রোধে বিমানবন্দরে নজরদারির বিষয়টিকে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ মন্তব্য করেন তিনি।

“বিমানবন্দরের বিষয়টি আসলে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষ, যারা সেখানে কাজ করছেন, সেইসব সংস্থাগুলাকে জানিয়েছি। এটি (মানবপাচারের ঘটনা) আরও বেশি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে, সেখানে বেশি নজরদারির প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করি।”

অভিযানে গ্রেপ্তার ‘দালাল চক্রের’ নয় সদস্য প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা মানবপাচার চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে বলে জানান লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাসুদ।

তিনি বলছেন, মালয়েশিয়া প্রবাসী আব্দুল হালিম ওরফে ‘হালিম মামা’ নামে এক ব্যক্তি মানবপাচারকারী এ চক্রটির মূল হোতা। আর গ্রেপ্তারদের মধ্যে বাদশা শেখ, রিপন হোসেন ও মামুন হোসেন ওরফে ‌‘ভাগ্নে মামুন’ তার সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে কাজ করে।

“হালিম মালয়েশিয়া থেকে তাদের মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলের অসহায় ও স্বল্প আয়ের মানুষদের প্রলোভন দেখিয়ে আন্তর্জাতিক মানবপাচার চক্রের মাধ্যমে বিদেশে পাঠানোর নামে মানবপাচার করছে,” বলেন এ র‌্যাব কর্মকর্তা।

‘দালাল চক্রের’ গ্রেপ্তার নয় সদস্যের বাকিরা হলেন- মো. নাসির উদ্দিন (৩৭), মো, মনিরুজ্জামান (৩৬), সজল কুমার বাইন (৩৫), মো. নাসির উদ্দিন (৫৩), মো. আহসানুজ্জামান ওরফে সোহাগ (২৮) ও মো. রাজিব (৩২)।

তাদের কাছ থেকে ১০০টি পাসপোর্ট, ৩২টি জাল ভিসা, আটটি মনিটর, ছয়টি সিপিইউ, পাঁচটি ইউপিএস, চারটি প্রিন্টার, নয়টি কি-বোর্ড, একটি স্ক্যানার, ২৫টি মোবাইল ফোন, ছয়টি সিল মোহর, একটি ফটোকপি সেশিন, ২৮ হাজার ইন্দোনেশিয়ান রিঙ্গিত, ৪২ মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত এবং নগদ ৯৪ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয় বলে জানান লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাসুদ।

এর আগেও বিভিন্ন সময়ে পাচারচক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন, “অনেক সময় মামলার ফাঁক দিয়ে তারা বেরিয়ে যাচ্ছে। হালিম ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে পূর্বেও মামলা দিয়েছিলাম। কিন্তু তারা আবার জামিনে গিয়ে একই কাজ করছে।”

র‌্যাবের এ কর্মকর্তা বলছেন, “অশিক্ষিত লোকজন সহজে প্রলুব্ধ হয়। কম খরচে বিদেশে যাওয়া যাবে বলে তারা প্রাথমিকভাবে বৈধ-অবৈধের বিষয়টি চিন্তা করে না। একবার যখন তারা টাকা দিয়ে ফেলে, এরপর থেকেই ওই ফাঁদে পড়ে যায়। এরপর থেকে প্রতারণার পর্যায়গুলো শুরু হতে থাকে।”

এক্ষেত্রে সচেতনার প্রয়োজন মন্তব্য করে সচেতনতার অভাবেই সাধারণ মানুষদের এমন ফাঁদে পড়তে হয় বলে ভাষ্য তার।

অভিযানে প্রতারক চক্রের সঙ্গে জড়িত ‘গো ইজি’ এবং ‘সান ওয়ে’ ট্রাভেলস নামে দুইটি ট্রাভেল এজেন্সির সন্ধান পায় র‌্যাব।

তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ বলেন, “‘গো ইজি’র অফিস গুলশানে, আর ‘সান ওয়ে’র পল্টনে। এগুলোর কোনো বৈধ রিক্রটিং লাইসেন্স বা এই জাতীয় কোনো কাগজপত্র নেই। গ্রেপ্তার হওয়াদের মধ্যে এ দুটি এজেন্সির মালিকরাও রয়েছেন।”

তারা নকল ট্রেড লাইসেন্স তৈরি করে ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে ট্রাভেল এজেন্সি চালিয়ে যাচ্ছিল বলে জানান তিনি।

আব্দুল হালিম ওরফে ‘হালিম মামার’ গ্রুপ বেশ কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে সক্রিয় জানিয়ে র‌্যাব কর্মকর্তা মাসুদ বলেন, “মূলত যখন থেকে মালয়েশিয়া কিংবা অন্যান্য দেশে বৈধভাবে মানুষ পাঠানোর সংখ্যা কমে যায়, তখন থেকে এই চক্রগুলো সক্রিয় হয়ে উঠে।

“প্রথমদিকে তারা জাল কাগজপত্র বানাতে না পারলেও, বর্তমানে জাল পাসপোর্ট-ভিসা সংক্রান্ত কাগজপত্র তৈরি করতে পারছে। এ কারণে তারা কাজগুলো সহজে করতে পারছে। এই কাজে বিভিন্ন লোকজন সহায়তা করছে। দেশে ও বিদেশে ইমিগ্রেশনকে ফাঁকি দিতে পারছে।”