জঙ্গিবাদের মদদে কারা: প্রধানমন্ত্রী

কারা জঙ্গিবাদে অস্ত্র, অর্থ ও উৎসাহ দিচ্ছে- তা খতিয়ে দেখার তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 March 2017, 08:17 AM
Updated : 22 March 2017, 11:33 AM

জঙ্গিবাদের থাবা থেকে শিক্ষার্থীদের মুক্ত রাখতে শিক্ষক ও অভিভাবকদের আরও উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

বুধবার প্রধানমন্ত্রী তার কার্যালয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতি শিক্ষার্থীদের ‘প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক ২০১৩ ও ২০১৪’ প্রদান অনুষ্ঠানে এ আহ্বান জানান।

সাম্প্রতিক সময়ে ইসলামের নামে জঙ্গিবাদের প্রসারের বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, কেবল বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে, বিশেষ করে মুসলিমপ্রধান দেশগুলোতে এই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।

“এখানে কথা হচ্ছে, কারা এদের হাতে অস্ত্র দিচ্ছে? কারা এদের টাকা দিচ্ছে? কারা এদের উৎসাহিত করছে?”

শেখ হাসিনা বলেন, “অনেক উন্নত দেশ, সেখানে পড়াশোনা করতে গিয়ে উল্টো এ ধরনের জঙ্গিবাদের পথে চলে যাচ্ছে। আমাদের দেশেও কিছু কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে।”

অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও শিক্ষকদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ছেলেমেয়েরা কি করছে, কোথায় যাচ্ছে, ক্লাসে অনুপস্থিত থাকছে কি না- সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে, যাতে তারা বিপথে যেতে না পারে।

“সত্যিই আমি অবাক হয়ে যাই, মেধাবী, শিক্ষিত, উচ্চবিত্ত (পরিবারের) ছেলেমেয়েরা কীভাবে ধর্মান্ধ হয়ে যায়, আর কীভাবে জঙ্গিবাদের পথে যায়। এটা আমার কাছে বোধগম্য নয়।”

ইসলামকে ‘শান্তির ধর্ম’ হিসেবে বর্ণনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এখানে কখনোই বলা হয়নি যে, নিরীহ মানুষ হত্যা কর। আর নিরীহ মানুষ হত্যা করলে বেহেস্তে চলে যাবে- এটা কি করে হয়?”

জঙ্গিদের আত্মঘাতি হামলার সমালোচনা করে তিনি বলেন, “আমাদের ইসলাম ধর্মে আত্মহত্যা মহাপাপ। সেই মহাপাপের পথে কি করে যায় ধর্মের নামে?”

প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অসাম্প্রদায়িক চেতনার কথাও তুলে ধরেন।

“আমরা বাংলাদেশের মানুষ। আমরা ধর্মে বিশ্বাস করি, ধর্ম পালন করি, আমরা ধর্মভীরু, কিন্তু ধর্মান্ধ নই।

“আর আমাদের বাংলাদেশে, এই ভূখণ্ডে সকলে যার যার ধর্ম পালন করবে স্বাধীনভাবে। সেই অসাম্প্রদায়িক একটা চেতনা নিয়েই বাংলাদেশ গড়ে উঠেছে।”

শেখ হাসিনা বলেন, “এই অঞ্চলে আমরা সবসময় একটা সম্প্রীতি নিয়ে চলি। কিন্তু সেই জায়গায় উগ্রবাদ যে ধ্বংস এনে দেয়, বা আমাদের পবিত্র ধর্ম ইসলামের যে বদনাম করে দিচ্ছে- সেটা তারা (জঙ্গি) বোঝে কি না তা জানি না।”

জঙ্গিবাদের পাশাপাশি মাদকাসক্তি থেকে ‘ছেলেমেয়েদের’ রক্ষা করতে অভিভাবক, শিক্ষকসহ সবাইকেই আরও উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানান সরকারপ্রধান।

তিনি বলেন, এসব মোকাবিলায় তার সরকার শিক্ষার প্রসার ঘটানোসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। ক্রীড়া ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি উদ্ভাবনী প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হচ্ছে।

“যেন মেধাগুলো বিপথে গিয়ে তাদের জীবনটাকে নষ্ট করে না দেয়। ওরকম আত্মহননের চিন্তা যেন তাদের মধ্যে না থাকে। আত্মঘাতমূলক কাজ যেন তারা না করে বা তারা যেন ধর্মান্ধ হয়ে না যায়। ধর্ম মানতে হবে, কিন্তু ধর্মান্ধ যেন না হয়- সেদিকে আমাদের বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে।”

এ অনুষ্ঠানে ২০১৩ ও ২০১৪ সালে ‘প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক’ পাওয়া ২৩৩ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৫৬ জনের হাতে পদক তুলে দেন শেখ হাসিনা।

দেশে বর্তমানে উচ্চশিক্ষা নিচ্ছে প্রায় ৩৩ লাখ শিক্ষার্থী। সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্মাতক পাসে যারা মেধাতালিকায় আসছে, তাদের মধ্যে থেকে যাচাই বাছাই করে ‘প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক ২০১৩ ও ২০১৪’ দেওয়া হয়েছে।

২০১২ সাল পর্যন্ত এ পদক কেবল রাষ্ট্রায়ত্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য প্রযোজ্য ছিল।

শিক্ষার উন্নয়নে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ ও নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে বলেন, “শিক্ষার মান উন্নত না হলে দেশ কীভাবে এগুবে? সেকথা মাথায় রেখেই বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। শিক্ষার মানোন্নয়ন করা হচ্ছে।”

২০০৯ সালে দেশের সরকারি মেডিকেল কলেজ ছিল ১৪টি; যা বেড়ে এখন ৩৬টি হয়েছে। বেসরকারি মেডিকেলের সংখ্যা এখন ৬৯টি।

২০০৯ সালের পর নতুন ১১টি রাষ্ট্রায়ত্ত বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের মাধ্যমে দেশে এখন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা হয়েছে ৪২টি। আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে ৯৫টি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, মেডিকেলসহ বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলা হচ্ছে।

তবে এত বিশ্ববিদ্যালয় দেখভালের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সীমবদ্ধতার কথাও স্বীকার করেন প্রধানমন্ত্রী।

“সরকারি-বেসরকারি মিলে আমাদের এতগুলি বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে গেছে যে, সেগুলি নজরদারি করা তা সত্যিই কষ্টকর। এতে কোনো সন্দেহ নেই। ১৩৭টা বিশ্ববিদ্যালয় নজরদারিতে রাখা; বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন যে অবস্থায় আছে এটা সম্ভব নয়, এটা আমি নিজে স্বীকার করি।”

এর সমাধানে ১৯৭৩ সালের মঞ্জুরি কমিশন আইন সংশোধন করা হবে বলে জানান তিনি।

সেই সঙ্গে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন যথাযথভাবে প্রয়োগ করার ওপরও জোর দেন প্রধানমন্ত্রী।

মেধাবী ছেলেমেয়েদের দেশের উন্নয়নের কথা ভাবার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “শিক্ষাকে জাতির পিতা গুরুত্ব দিয়েছিলেন। আমাদের সরকারেরও এটা লক্ষ্য যে আমাদের ছেলেমেয়েদের আরও বেশি শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। তাদের জীবন মান আরও উন্নত হতে হবে।

“গবেষণাকে আমরা সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিই। গবেষণাকে গুরুত্ব দিই বলেই বাংলাদেশ আজ খাদ্যে উদ্বৃত্ত দেশ।”

কারিগরি বিষয়ে বিদেশিদের ওপর নির্ভশীলতা দূর করে দেশেই দক্ষ লোকবল তৈরির উদ্যোগের কথাও তিনি জানান।

অন্যদের মধ্যে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।