বেকার হোস্টেল থেকে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য সরানোর দাবি কট্টর ইসলামী দলের

কলকাতার মৌলানা আজাদ কলেজের বেকার হোস্টেল থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য সরানোর দাবি তুলেছে পশ্চিমবঙ্গের একটি কট্টর ইসলামপন্থি ছাত্র সংগঠন, যাদের সঙ্গে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের কয়েকজন মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। 

ভারত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 March 2017, 07:35 AM
Updated : 23 March 2017, 02:14 PM

‘সারা বাংলা সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশন’ নামের ওই সংগঠনের দাবি, বঙ্গবন্ধুর ওই ভাস্কর্য সরিয়ে ফেলতে হবে, কেননা ‘ইসলাম ধর্মে মূর্তি বাসানো নিষিদ্ধ’।

অবিভক্ত বাংলায় ১৯৪২ সালে প্রবেশিকা শেষ করে কলকাতার ওয়েলেসলি স্কয়ারের ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান, যার নেতৃত্বে দীর্ঘ সংগ্রামের পথ পেরিয়ে ১৯৭১ সালে স্বাধীন হয় বাংলাদেশ।

ইসলামিয়া কলেজে পড়ার সময় কলকাতার তালতলায় এই বেকার হোস্টেলের ২৪ নম্বর কক্ষে ছিলেন বঙ্গবন্ধু। ১৯৪৬ সালে কলেজের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন তিনি।

পরে এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম হয় মৌলানা আজাদ কলেজ। বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি রক্ষায় ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গের বামফ্রন্ট সরকারের সময়ে বেকার হোস্টেলের ২৩ ও ২৪ নম্বর কক্ষ সংরক্ষণ করা হয়।

ওই বছর ২৩ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি বেকার হোস্টেলে সাদা মার্বেলে তৈরি বঙ্গবন্ধুর আবক্ষ ভাস্কর্যটি উন্মোচন করেন।

গত ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকীতে কলাকাতাতেও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয় বেকার হোস্টেলের ওই ভাস্কর্যে।

কলকাতায় বাংলাদেশের ডেপুটি হাই কমিশনের বাইরে ‘সারা বাংলা সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশন’ এর কর্মীরা

‘সারা বাংলা সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশন’ এর স্মারকলিপি

ওই অনুষ্ঠানের পর সারা বাংলা সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশনের কর্মীরা মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য সরানোর দাবি নিয়ে কলকাতায় বাংলাদেশের ডেপুটি হাই কমিশনে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের আটকে দেয়।

ডেপুটি হাই কমিশনের কর্মকর্তারা ওই সংগঠনের স্মারকলিপি নিতে অস্বীকার করলে স্থানীয় পুলিশ স্টেশনে সেটি জমা দেন ফেডারেশনের নেতারা। 

ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মুহম্মদ কামরুজ্জামান স্বাক্ষরিত ওই স্মারকলিপিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “আপনি মুসলমান হওয়া সত্ত্বেও ইসলামী মতাদর্শের বাইরে গিয়ে পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মূর্তি স্থাপন করেছেন কেন?

“আপনার এই সিদ্ধান্ত নিয়ে ভারতের একজন গর্বিত নাগরিক হিসেবে আমাদের কোনো বিরোধ বা প্রতিবাদ নেই। কিন্তু মুসলিমদের জাতীয় সম্পত্তির মধ্যে পিতার মূর্তি বসিয়ে দিয়ে যাবেন, এটা আমরা কোনোভাবেই মেনে নেব না।”    

ওই ভাস্কর্য সরিয়ে কলকাতার অন্য কোনো সরকারি জায়গায় বসালে কোনো আপত্তি তোলা হবে না বলে জানানো হয় ফেডারেশনের বিবৃতিতে।

সংগঠনটি এমন এক সময়ে এই দাবি তুলে উত্তেজনা ছড়াতে চাইছে, যখন শেখ হাসিনার বহু প্রত্যাশিত ভারত সফর নিয়ে প্রস্তুতি চলছে দুই দেশে। আগামী ৭ থেকে ১০ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে বেশ কয়েকটি চুক্তি হওয়ারও কথা রয়েছে। 

ভারতে দায়িত্বপালনরত বাংলাদেশের একজন কূটনীতিক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যটি বেকার হোস্টেলে আছে সাত বছর ধরে। সারা বাংলা সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশন বা অন্য কেউ কখনও এর বিরোধিতা করল না, তাহলে এখন কেন প্রশ্ন উঠছে?” 

যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরোধিতায় কলকাতার সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন তৃণমূলের মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী

তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী

এর আগে বাংলাদেশের একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরোধিতায় কলকাতায় সমাবেশ করেছিল ‘সারা বাংলা সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশন’। পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল সরকারের মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীও সেই সমাবেশ মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।

জামায়াতে উলামায়ে হিন্দ এর পশ্চিমবঙ্গ শাখার সভাপতি সিদ্দিকুল্লাহ এক সময় মাওলানা বদরুদ্দিন আজমলের এআইইউডিএএফ এর শীর্ষস্থানীয় নেতা ছিলেন। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০১৬ সালের নির্বাচনে জিতে দ্বিতীয় দফা সরকার গঠনের পর সিদ্দিকুরকে রাজ্যের মন্ত্রিসভায় আনেন। 

মমতার আপত্তির কারণেই ২০১০ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের সময় তিস্তা চুক্তি আটকে যায়। এরপর বিজেপি নেতা নরেন্দ্র মোদী ভারতের প্রধানমন্ত্রী হলেও সেই জট খোলেনি। এ নিয়ে মমতার সঙ্গে কেন্দ্রে সরকারের কোনো আলোচনাই ফলপ্রসূ হয়নি।